আসানসোল জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে অমিল, থ্যালাসেমিয়া রোগীকে রক্ত দিলেন কর্মী
বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ৪ নভেম্বরঃ আসানসোল জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে চরম রক্তের সংকট। বলতে গেলে ব্লাড ব্যাঙ্ক শুন্য। কোন গ্রুপেরই রক্ত মিলছে না। করোনা পরিস্থিতি তারমধ্যে উৎসবের মরশুম থাকায় রক্ত দান শিবির বা ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্প না হওয়ায় রক্ত অমিল।
এমন অবস্থায় থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত ১২ বছরের এক রোগীকে রক্ত দিলেন আসানসোল জেলা হাসপাতালের কর্মী বিবেক রঞ্জন সাঁধু।




আসানসোলের কুলটির বরাকরের বেগুনিয়া মোড়ের বাসিন্দা ১২ বছরের তাতাই নাগ গত ১৫ দিন ধরে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। ১৫ দিন আগে জ্বর হওয়ায় তাকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগে তাকে ২ ইউনিট রক্ত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরেও জ্বর বা কমায়, বৃহস্পতিবার সকালে চিকিৎসক পরীক্ষা করে বলেন রোগীকে বি পজিটিভ আরো এক ইউনিট রক্ত দিতে হবে। কিন্তু তাতাইয়ের মা বেবি নাগ জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়ে জানতে পারেন যে, সেখানে রক্ত নেই।
ব্যাঙ্ক কতৃপক্ষ তাকে পরিষ্কার জানিয়েদেন, তাদের কিছু করার নেই। তাকে ডোনার বা রক্তদাতা নিয়ে আসতে হবে। কেন না রক্ত দান শিবির না হওয়ায় রক্ত নেই। এই কথা শুনে বেবীদেবীর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা হয়। কালি পুজো থাকায় কাকে রক্ত দেওয়ার জন্য বলবেন, এই ভাবনার মধ্যেও তিনি বেশ কয়েকজনকে বলেন। কিন্তু তারা কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। এই করতে করতে ঘন্টা খানেকের বেশি সময় চলে যায়। তিনি কাঁদতে কাঁদতে হাসপাতালের এমারজেন্সি বিভাগের কাছে ঘোরাঘুরি করতে থাকেন। তার চোখে জল দেখে এমারজেন্সি বিভাগ লাগোয়া ফেসিলিটি ম্যানেজার বা ওয়ার্ড মাস্টার অফিসে কর্মরত কর্মীরা বেবি নাগের কাছে জানতে চান, তার কি হয়েছে?
তখন তিনি বলেন, ছেলের জন্য এক ইউনিট রক্ত যোগাড় করতে পারছিনা। রক্ত না দিতে পারলে, ছেলের জীবন সংশয়ে পড়বে। তখনই ঐ অফিসের কর্মী কুলটির আলডির বাসিন্দা বিবেক রঞ্জন সাঁধু ( জিডিএ) তার পাশে দাঁড়ান। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়ে নিজের রক্ত দেন। সব পরীক্ষার পরে এদিন দুপুরে সেই রক্ত তাতাইকে দেওয়া হয়।
হাসপাতাল কর্মীর এইভাবে তার ছেলের জন্য রক্ত দিতে এগিয়ে আসায় বেবি নাগ খুবই খুশি। তিনি বলেন, কি করবো ভেবে উঠতে পারছিলাম না। এমন সময় ঐ কর্মী বলেন আমি রক্ত দেবো। আমার আবেদন, বিবেকবাবুর মতো সবাই এগিয়ে এলে, আমরা বাঁচবো। অন্যদিকে, বিবেক রঞ্জন সাঁধু বলেন, ছেলের রক্ত যোগাড় করতে না পেরে মা কাঁদছে, এটা খুব খারাপ। আমি তো কারোর ছেলে, তা রক্ত দিয়ে পাশে দাঁড়ালাম।
জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের ইনচার্জ ডাঃ সঞ্জিত চট্টোপাধ্যায় বলেন, একদম রক্ত নেই। গত ৩১ অক্টোবর ২০ ইউনিট রক্ত একটা শিবির থেকে পাওয়া যায়। তারপর আর হয়নি। শুক্রবার একটা শিবির হওয়ার কথা রয়েছে। আগামী রবিবার ৭ টা শিবির হবে। তারপর পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হতে পারে। করোনার জন্য আমরা শিবির করতে বলতও পারছি না। তবুও চেষ্টা করে যাচ্ছি।
জেলা হাসপাতালের সুপার ডাঃ নিখিল চন্দ্র দাস বলেন, এমন একটা সংকট কিছু করতেও পারছিনা। আমাদের আবেদন, ছোট ছোট করে রক্ত দান করুন। করোনা বিধি অবশ্যই মানতে হবে।