ভাড়াটিয়া ফেরার বাড়িওয়ালার ঘর থেকে সোনার গয়না, মোবাইল ও টাকা লুটের অভিযোগ, অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার ৪
বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ১৩ ডিসেম্বরঃ মাত্র দুদিন আগেই বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেছিলো। সেই ভাড়াটিয়ার বিরুদ্ধে পেয়ারা পাতার রসের সঙ্গে ওষুধ খাইয়ে বাড়িওয়ালার ৪ সদস্যকে বেহুঁশ করে ঘরে লুঠপাট চালানোর অভিযোগ উঠলো। রবিবার রাতে এই ঘটনাটি ঘটেছে। সোমবার সকালে ৪ জনকে অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার হওয়ার পরে আসানসোলের কুলটি থানার নিয়ামতপুরের নুর নগর এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। ৪ জনই আপাততঃ আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। চারজনের নাম হলো মহঃ মকসুদ ( ৪০ ), মেহেরুননিসা (৬০), জুভেদা পরভীন (৪০) ও তাহের পরভীন (৩৫)। সোমবার বিকেলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মেহেরুননিসা ও তাহের পরভীনের হুঁশ ফিরেছে। তবে বাকি দুজনের হুঁশ এখনো ফেরেনি। হাসপাতালের চিকিৎসকদের অনুমান, কোনকিছুর সঙ্গে এই চারজনকে কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেওয়া হয়েছে৷
জানা গেছে, বাড়িওয়ালা আফিজুল আনসারি রবিবার রাতে বাড়িতে ছিলেন না। তিনি আসানসোলে একটি বেসরকারি সংস্থায় নৈশ প্রহরীর কাজ করেন। সোমবার সকালে সেই কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরে দেখেন ঘরের মধ্যে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে আছে মা মেহেরুননিসা, স্ত্রী তাহের পরভীন, শ্যালক মকসুদ ও শ্যালকের স্ত্রী জুভেদা খাতুন। তার তিন বছরের ছেলে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলো। আফিজুল আরো দেখেন ঘরের জিনিস সব এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে। তার চিৎকারে আশপাশের লোকেরা দৌড়ে আসেন। খবর দেওয়া হয় নিয়ামতপুর ফাঁড়িতে। পুলিশ আসে। চারজনকে সঙ্গে সঙ্গে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। আফিজুল পুলিশকে জানান, বাড়িতে তিনটি এ্যানড্রোয়েট ফোন, লক্ষাধিক টাকার গয়না ও নগদ দেড়েক নগদ টাকা ছিলো। সেইসব কিছু নেই। আফিজুলের কথা শুনে, পুলিশ পাশেই সেই ভাড়াটিয়ার খোঁজে যায়। কিন্তু পুলিশ দেখে তার ঘরের দরজায় তালা। নম্বর নিয়ে পুলিশ ফোন করলে, দেখা যায়, সেটা বন্ধ রয়েছে।
আফিজুল আনসারি এদিন পুলিশকে জানান, দিন দুই আগে এক আত্মীয়র সূত্র ধরে মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা নিজের নাম মইনুর বলে এক যুবক তার কাছে আসে ঘর ভাড়া নিতে। ঐ যুবক ফেরিওয়ালা ও ঝাঁড়ফুকের কাজ করতো বলেছিলো। ফোন নম্বর দিলেও, ঐ যুবক নিজের কোন পরিচয় পত্র আফিজুলকে দেয়নি। পরে বলেছিলো দেবে।
জানা গেছে, আফিজুলের সংসারে কিছু সমস্যা হচ্ছিলো। সেই কারণে তার স্ত্রী তাহের পরভীন চিন্তায় ছিলো। ভাড়াটিয়া ঐ যুবক তা কোনভাবে জানতে পেরে, তাহের পরভীনকে বলে সে সব ঠিক করে দেবে। ভাড়াটিয়া যুবক বাড়িতে আসা আফিজুল মন থেকে মেনে নেয়নি। সে স্ত্রীকে এইসব করতেও মানা করেছিলো।
এদিন আফিজুল আনসারি বলেন, রবিবার বিকেলে ঐ যুবক আমার স্ত্রীকে পেয়ারা পাতার রস করতে বলে। তারপর আমি আর কিছু জানিনা। সন্ধ্যার পরে আসানসোলে চলে আসি। এদিন সকালে গিয়ে দেখি এই অবস্থা। আমার কথা শুনলে এটা হয়তো হতো না।
পুলিশ জানায়, ভাড়া দেওয়া যুবকের কোন পরিচয়পত্র বাড়িওয়ালা নেননি। শুধু মাত্র মোবাইল নম্বর। তাও সেটা বন্ধ রয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, রবিবার রাতেই ঐ যুবক পরিকল্পনা করেই চারজনকে মাদক বা ঘুমের ওষুধ জাতীয় কিছু খাইয়ে বেহুঁশ করে দেয়। তারপর সবকিছু নিয়ে বেপাত্তা হয়ে যায়। তার খোঁজে তল্লাশি চলছে।