আসানসোল জেলা হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মী করোনা আক্রান্ত, জেলায় ৬০ হাজারের গন্ডি পার
বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়/ দেব ভট্টাচার্য/ দীপ সেন, আসানসোল, ৪ জানুয়ারিঃ গোটা বাংলার সঙ্গে ঝাড়খণ্ড লাগোয়া পশ্চিম বর্ধমান জেলা জুড়ে করোনা আক্রান্তর সংখ্যা বাড়ছে। সোমবার রাতে জেলায় করোনা আক্রান্তর সংখ্যা ৬০ হাজারের গন্ডি পার করেছে। সোমবার আসানসোল জেলা হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে একজন আসানসোল ও অন্যজন জামুড়িয়ার বাসিন্দা বলে জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। জেলার মধ্যে বিশেষ করে আসানসোল শিল্পাঞ্চলে দিন প্রতি দিন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। অবস্থা এমন যে, জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের আশঙ্কা, এই গতি না কমলে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। আর এরইমধ্যে আসানসোল পুরনিগমের ১০৬ টি ওয়ার্ডের জন্য নির্বাচনী প্রচার চলছে।
আসানসোল জেলা হাসপাতালে মঙ্গলবার ৩০ জনের মতো করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। হাসপাতাল সুপার ডাঃ নিখিল চন্দ্র দাস এদিন বলেন, তাদের মধ্যে মধ্যে পাঁচ জন চিকিৎসক ও আরটিপিসিআর (প্যাথলজিক্যাল) ল্যাবরেটরির দশ জন কর্মী আছেন।এছাড়া রয়েছেন নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মীরা। এদিন জেলা হাসপাতালের আইসোলেশান ওয়ার্ডে ১১জন করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি আছে। সোমবার সেই ওয়ার্ডে ভর্তি ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। । হাসপাতাল সূত্র থেকে জানা গেছে সোমবার ৯৮ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছিলো। তাদের মধ্যে ৭৩ জনের রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
অন্যদিকে, বার্নপুরের ইস্কো বা আইএসপি হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মী সহ ১৫ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। শুধু তাই নয়, আরটিপিসিআর পরীক্ষার পর শতকরা ৩০ থেকে ৩৫ ভাগের রিপোর্ট পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে। চিত্তরঞ্জন রেল শহরেও করোনার প্রকোপ নতুন করে দেখা দিয়েছে। বেশ কয়েকজন রেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বলে এদিন হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। চিত্তরঞ্জন লাগোয়া রুপনারায়নপুরের অবস্থা যথেষ্ট চিন্তাজনক। এই এলাকায় পুলিশকর্মী থেকে শুরু করে হোটেল মালিক এবং সাধারণ মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তবে তারা সবাই হোম আইসোলেশানে আছেন।
আসানসোলে রেল ডিভিশনাল হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক সহ কর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। আসানসোল দক্ষিণ থানা সহ বেশ কয়েকটি থানা ও ফাঁড়ির পুলিশ কর্মীরা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন গত চারদিনে৷
আসানসোলের হটন রোডের একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের শাখা এদিন বন্ধ রাখা হয়। ব্যাঙ্কের তরফে মঙ্গলবার নোটিশ দিয়ে বলা হয়েছে, ম্যানেজার ও এক কর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তাই এদিন ব্যাঙ্ক বন্ধ রাখা হয়েছে। বুধবার নিয়ম মেনে ব্যাঙ্ক খুলবে।
এদিকে, ইতিমধ্যেই জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে গত এক সপ্তাহের করোনা আক্রান্তর পরিসংখ্যানের বিচার করে জেলার দুই মহকুমা আসানসোল ও দূর্গাপুরের দুই পুর এলাকা ও ৮ টি ব্লক ভিত্তিক জোন চিহ্নিত করা হয়েছে। তা জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে জেলাশাসকের কাছে পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, জেলার ৮ টি ব্লকের মধ্যে ৫ টি ব্লকের ৬ টি গ্রাম পঞ্চায়েত করোনা আক্রান্তের বিচারে ” ভানরালেবেল ” বা ” সংবেদনশীল ” এলাকা। তার মধ্যে কাঁকসা ব্লকে রয়েছে দুটি গ্রাম পঞ্চায়েত। এছাড়া অন্ডাল, পান্ডবেশ্বর, দূর্গাপুর-ফরিদপুর ও সালানপুরের ১ টি করে গ্রাম পঞ্চায়েত। এছাড়াও আসানসোল পুরনিগমের ৫ টি ওয়ার্ড ও দূর্গাপুরের ৩ টি ওয়ার্ডকে ” হাই কেস লোড ” এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি আসানসোল পুরনিগমের ১৮ টি ওয়ার্ড ও দূর্গাপুর পুরসভার ৫ টি ওয়ার্ডকে ” ভানরালেবেল ” এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে এদিন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বা সিএমওএইচ ডাঃ শেখ ইউনুস বলেন, স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে করোনা আক্রান্ত হওয়ার একটা পরিসংখ্যান বিচার করে এলাকা চিহ্নিত করে তার তালিকা জেলা প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে। আমি বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছি ।তবে গোটা জেলার অবস্থা যথেষ্ট ভালো নয়। ব্যাপকহারে করোনা হচ্ছে। মানুষকে আমরা মাস্ক ব্যবহারের জন্য এবং দূরত্ব বজায় রাখার জন্য বলছি। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন জায়গায় মাইকিং করলেও যতক্ষণ না পর্যন্ত বড় ধরনের ধরপাকড় শুরু হচ্ছে ততক্ষণ মানুষ সচেতন হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। সিএমওএইচ আরো বলেন, আক্রান্তদের বেশির ভাগেরই মৃদু উপসর্গ রয়েছে। তাই তারা হোম আইসোলেশানে থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ খাচ্ছেন।