ASANSOL-BURNPUR

বার্ণপুরের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য, মায়ের মৃতদেহ নিয়ে ঘরের মধ্যেই ছিলো তিন ভাইবোন, দুদিন পরে আত্মহত্যা, অনুমান পুলিশের

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্য, আসানসোল, ১৪ জানুয়ারিঃ পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের বার্ণপুরের মায়ের মৃত্যুতে তিন ভাইবোনের আত্মঘাতি হওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য শুক্রবার প্রকাশ্যে এলো। জানা গেছে, মায়ের মৃতদেহ নিয়ে প্রায় তিনদিন ঘরের মধ্যেই ছিলো তিন ভাইবোন। পরে তারা কার্বলিক এ্যাসিড খেয়ে আত্মহত্যা করেন। এমন তথ্য জানাজানি হওয়ার পরে ইস্পাত নগরী বার্নপুরের স্টেশন রোডের বাসিন্দারা হতবাক। তাদেরকে কলকাতার রবীনসন স্ট্রিটের ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে।


এদিকে, শুক্রবার সকালে আসানসোল জেলা হাসপাতালে চিকিৎসারত মায়া করের মৃত্যু হয়। এদিন দুপুরে মা গীতা কর (৮৩), তার দুই ছেলে জয়ন্ত কর(৫৮), বিপ্লব কর(৫৪) ও মেয়ে মায়া করের (৫২) মৃতদেহর ময়নাতদন্ত হয় আসানসোল জেলা হাসপাতালে। আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ চারজনের মৃতদেহ কর পরিবারের নিকট আত্মীয় বাপি ওরফে অনিল ধরের ( গীতা করের ভাগ্নে) হাতে তুলে দেয়।
ময়নাতদন্তের পরে প্রাথমিক রিপোর্টের ভিত্তিতে পুলিশ জানায়, মৃতদেহ উদ্ধারের তিনদিন আগে গীতা করের মৃত্যু হয়েছে। জয়ন্ত কর ও বিপ্লব করের মৃত্যু হয়েছে ২৪ ঘন্টা আগে। কার্বলিক এ্যাসিড তিন ভাইবোনের দেহে পাওয়া গেছে।


জানা গেছে, বৃদ্ধা গীতা কর গত ৫ বছর ধরে অসুস্থতার জন্য প্রায় শয্যাশায়ী ছিলেন। সোমবার গত ১০ জানুয়ারি সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ গীতাদেবী বাড়িতে অচৈতন্য হয়ে যায়। এরপর জয়ন্ত করেরা এলাকারই একটি এ্যাম্বুলেন্স ডেকে মাকে নিয়ে যায় আসানসোলের সেনরেল রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। কিন্তু এই হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে বেড না থাকায়, নিয়ে আসা হয় বার্ণপুর রোডের রবীন্দ্রনগর উন্নয়ন সমিতি সংলগ্ন অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে ভেন্টিলেশনে গীতাদেবীকে ভর্তি করা হয়। তার চিকিৎসা করছিলেন ডাঃ এস ঘোষ। গীতাদেবীর শারীরিক অবস্থা দেখে হাসপাতালের তরফে জয়ন্ত করকে জানিয়ে দেওয়া হয়, মায়ের শরীর ঠিক নয়। শেষ পর্যন্ত সেদিন দুপুর দুটোর সময় গীতাদেবী মারা যান।

হাসপাতালের তরফে গীতাদেবীর মৃত্যুর কথা ছেলেদের জানানো হয়। নিয়ম মতো তার ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করে, হাসপাতালের তরফে গীতাদেবীর মৃতদেহ নিয়ে যেতে বলা হয়। কিন্তু জয়ন্তবাবু হাসপাতাল কতৃপক্ষকে অনুরোধ করে বলেন, মাকে দুদিন আরো ভেন্টিলেশনে রেখে দিন। মা বেঁচে যাবেন। এরপর যে এ্যাম্বুলেন্সে গীতাদেবীকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিলো, তার চালকের সঙ্গে হাসপাতাল কতৃপক্ষ যোগাযোগ করে। এ্যাম্বুলেন্স চালক আসতে না পারায় সব শুনে জয়ন্ত করকে ফোন করে মৃতদেহ নিতে বলেন। এরপর বিকেল সাড়ে চারটের পরে জয়ন্ত কর একটি টোটো করে মায়ের মৃতদেহ হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। তারপর মায়ের মৃতদেহ নিয়ে তিন ভাইবোন বাড়ির ভেতরেই ছিলো।

পুলিশের অনুমান, মা আর বেঁচে নেই, তা বোঝার পরেই জয়ন্তবাবুর কার্বলিক এ্যাসিড খেয়ে আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। জয়ন্ত কর ও তার ভাই প্রথমে এ্যাসিড খান। পরে খান বোন মায়া কর। তিনজনের শরীরের এ্যাসিডের পরিমান ও মায়া করের মৃত্যু শুক্রবার সকালে হওয়ায়, এমন মনে হয়েছে পুলিশের।
বার্ণপুর স্টেশন রোডের ইস্কো কারখানার কে টাইপ যে আবাসনে গীতাদেবীরা থাকতেন, সেখানের এক বাসিন্দা সেই টোটো আসতে দেখেছিলেন। তবে তিনি বুঝতে পারেননি যে, ঠিক কি হয়েছে। আরো জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে হিরাপুর থানার পুলিশ বার্ণপুর রোডের ঐ বেসরকারি হাসপাতালে আসে। পুলিশ গীতাদেবীর ব্যাপারে সব তথ্য নেয়।


প্রসঙ্গতঃ, বৃহস্পতিবার দুপুরে হিরাপুর থানার পুলিশ চারজনকে উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায় । ঘরের ভেতর থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছিলো একটি সুইসাইড নোট। পাওয়া গেছিলো একটি কার্বোলিক অ্যাসিডের বোতল। সুইসাইড নোটে লেখা ছিলো স্বেচ্ছায় তারা মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুর কারণ হিসাবে দায়ী করেছেন, মায়ের মৃত্যুকে। কারণ ছিল তাদের অন্তপ্রাণ। তাই তিন ভাইবোন বিয়ে করেননি। মায়ের মৃত্যুর পর নিজেদের আর জীবন রাখতে চাননা। জয়ন্ত কর বার্নপুর ইস্কো কারখানায় চাকরি করতেন।
এদিন দুপুরে মৃতদেহ নেওয়ার সময় আসানসোল জেলা হাসপাতালে গীতা করের ভাগ্নে বাপি ওরফে অনিল ধরের সঙ্গে ছিলেন এলাকার বাসিন্দা তৃনমুল কংগ্রেসের নেতা টিপু ওরফে পূর্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়।


তারা বলেন, এমন একটা ঘটনা যে হতে পারে তা ভাবা যায় না। বাপিবাবুর আত্মীয় হলেও, দীর্ঘ কয়েক বছর কর পরিবারের সঙ্গে কোন যোগাযোগ ছিলোনা। বৃহস্পতিবার দুপুরে এই ঘটনা শুনে তিনি দৌড়ে আসেন।
তবে, তিন ভাইবোন যে, মা অন্ত প্রাণ ছিলো, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

click for web story

বার্ণপুরের ঘটনায় চাঞ্চল্য, মায়ের মৃত্যুতে আত্মহত্যার চেষ্টা, মৃত দুই ভাই , হাসপাতালে ভর্তি বোন

News Editor

Mr. Chandan | Senior News Editor Profile Mr. Chandan is a highly respected and seasoned Senior News Editor who brings over two decades (20+ years) of distinguished experience in the print media industry to the Bengal Mirror team. His extensive expertise is instrumental in upholding our commitment to quality, accuracy, and the #ThinkPositive journalistic standard.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *