Bengali NewsTOP STORIES

উত্তরবঙ্গের দুর্ঘটনাগ্রস্ত রেল ইঞ্জিন সংস্কার ও মেরামত নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও হয়নি, চিত্তরঞ্জনে ২১ বছর আগে তৈরি হওয়া ওই রেল ইঞ্জিন নিয়ে, দুই শ্রমিক সংগঠন অভিযোগ তুলল

দেব ভট্টাচার্য, আসানসোল। গত ১৩ ই জানুয়ারি ১৫৬৩৩ আপ বিকানের গৌহাটি এক্সপ্রেস ( Bikaner Express) এর ভয়াবহ দুর্ঘটনার নেপথ্যে খোদ রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন  ঐ যাত্রী ট্রেনের ইঞ্জিনের মধ্যে থাকা একটি ট্রাকসন মোটর খুলে নিচের দিকে চলে গিয়েছিল। এটা দুর্ঘটনার এটা অন্যতম কারণ হতে পারে। যদিও ওই ট্রেনের চালক রহিতকুমার বলেন আচমকা একটা ঝটকা লাগায় জোরে ব্রেক কসতে বাধ্য হয়েছিলাম এবং এরপর ইঞ্জিনের শেষের দিকে দুটি চাকা বেলাইন হয়।

উত্তরবঙ্গের দুর্ঘটনাগ্রস্ত রেল ইঞ্জিন
সেই অভিশপ্ত রেল ইঞ্জিন

 এই ক্ষতিগ্রস্থ ট্রেনটির যে ইঞ্জিনটি লাগানো হয়েছিল তা পাটনা থেকে জোড়া হয়েছিল। নির্দিষ্ট মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলেও ইঞ্জিনটির সময় মত সংস্কার  হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ভারতবর্ষের রেল শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা । অন্যদিকে সূত্র থেকে জানা যায় রাণীনগরের গেটম্যান জানিয়েছিল একটি বগিতে   আগুনের ফুলকি দেখা গেছে। অর্থাৎ হটএক্সেল হয়েছে। সেই খবর কন্ট্রোলে যাওয়ায় ট্রেনটিকে পরের স্টেশনে দাঁড় করানো হয়। 

 প্রাথমিক সূত্রে জানা গেছে এই ইঞ্জিনটির ইতিহাস রেল সূত্র থেকে সংগ্রহ করার পর একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে এসেছে। তাহল ওয়াপ ফোর(ডব্লু এ পি ৪) রাজধানী প্রোটোটাইপ লোকোমোটিভ তৈরি হয়েছিল চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানাতে। ১৯৯৬ সালের পর থেকে এই ধরনের ইঞ্জিন এখানে তৈরি হয় এবং ২০১৬ তে গিয়ে শেষ লোকটি তৈরি হয়েছিল। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ইঞ্জিন নম্বর ছিল ওয়াপ ফোর ২২৩৭৫। চিত্তরঞ্জন কারখানায় তৈরি এই ইঞ্জিন উত্তর পূর্ব রেলের হাতে তুলে দেওয়া হয় পয়লা ফেব্রুয়ারি ২০০১সালে।

নিয়ম অনুযায়ী প্রতি দশ বছর এই ধরনের রেলইঞ্জিন গুলিকে পি ও এইচ বা  পিরিওডিক্যাল ওভারহোলিং ও প্রয়জনে ট্রাকশন মোটর রিওয়াইনন্ডিং করার কথা। সেইমত কথা ২০১১ সালের ২৭ জুন তারিখে কাঁচরাপাড়া ওয়ার্কশপ পি ও এইচ করা হলেও ২০২১ এ আর তা হয় নি। রেল সূত্রে এই ইঞ্জিনের ইতিহাসেই তা বলে দেওয়া আছে।  অর্থাৎ শেষ দশ বছর পেরিয়ে গেলেও কেন এই রেল ইঞ্জিন সংস্কার বা নিয়মমাফিক ওভারহোলিং হলো না তা নিয়ে রেলের ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃত্বরা প্রশ্ন তুলেছেন।

রেলের সর্ববৃহৎ শ্রমিক সংগঠন ন্যাশনাল ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান রেলওয়ের চিত্তরঞ্জন রেল ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রজিৎ সিনহা বলেন ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর রেল মন্ত্রক থেকে একটি নির্দেশনামা জারি করে বলা হয় এই ধরনের বৈদ্যুতিক ইঞ্জিন গুলি যেমন নিয়মিত ওভারহোলিং করতে হবে তেমনি তার ট্রাকশন মোটর গুলিও রিওয়ানন্ন্ডিং করতে হবে। কিন্তু দীর্ঘ দশ বছর পেরিয়ে গেলেও এই ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে তা করা হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন।

একই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন ভারতবর্ষের রেলমন্ত্রী দুর্ঘটনা স্থলে দাঁড়িয়েই  কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটির তদন্ত রিপোর্ট ছাড়াই কিভাবে বলে দিলেন রেলের ইঞ্জিনের মধ্যে ট্রাকসন-মোটর খুলে গিয়েছে এবং সেটা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হতে পারে। এতে চিত্তরঞ্জনের তৈরি এশিয়া মহাদেশের সেরা বৈদ্যুতিক রেল ইঞ্জিনের কাজের সাথে আমরা যারা যুক্ত তাদের মনোবল ভাঙতে পারে। শুধু তাই নয় বর্তমান সরকার রেলের কারখানাগুলি কে কর্পোরেট বা বেসরকারি সংস্থার হাতে  ধীরে ধীরে তুলে দেওয়ার কথা মাথায় রেখেই হয়তো রেলমন্ত্রী রাষ্ট্রায়ত্ত চিত্তরঞ্জনের তৈরি ইঞ্জিনের  বিষয়টি কে আগেই ব্যর্থতা হিসেবে জানিয়ে দিলেন। আমরা এর প্রতিবাদে সোমবার রেল কর্তাদের কাছে এই বিষয়  চিঠি পাঠাবো।

 একই ধরনের অভিযোগ করেন চিত্তরঞ্জনের সিটু ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাজিব গুপ্ত। রাজিব বাবু বলেন আমরা জানতে পেরেছি যে নিয়মে  ওই ইঞ্জিনের বিভিন্ন  নিয়মমাফিক সংস্কার ও মেরামত করা উচিত এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। শুধু তাই নয় আমাদের আশঙ্কা যে হারে রেলওয়ে প্রশিক্ষিত এবং দক্ষ কর্মী সংকোচন করা হয়েছে তাতেই এই ধরনের ঘটনা আরো ঘটবে ।তিনি হিসেব দিয়ে বলেন ভারতীয় রেলওয়ে যেখানে ১৮ লক্ষ পদ এর অনুমোদন আছে সেখানে ১৩ লক্ষ মত কর্মী আছেন। চিত্তরঞ্জন রেল কারখানা ১৪ হাজার কর্মীর পদ অনুমোদন আছে। কিন্তু দীর্ঘদিন তার প্রায় দশ হাজার হয়ে আছে ।অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলিতে দক্ষ কর্মী নেই  ।

আর সারা ভারতীয় রেলের যাত্রী নিরাপত্তার জায়গাগুলি নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। ওখানে আপলাইনের সদ্য যে ট্রাক বসানো হয়েছে তারও ভাল তদন্ত হওয়া উচিত। অধিকাংশ লোকো শেড বন্ধ বা বেসরকারিকরণের ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে ।সেখানে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে অভিজ্ঞ কর্মীদের নিয়োগ করা হচ্ছে না। আমরা সোমবার দিন  ঐ ইঞ্জিনের ট্রাকশন মোটরসহ সমস্ত তথ্য দিয়ে জেনারেল ম্যানেজার কে এবং রেলপর্ষদে আমাদের প্রতিবাদপত্র পাঠাবো এবং আমরা দাবি করছি রেলের নিরাপত্তা নিয়ে যে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে তার জন্য অবিলম্বে শূন্য পদ গুলি পূরণ করা হোক।

আর এত বড় দুর্ঘটনা রেলের সেফটি কমিশনের রিপোর্ট আসার আগেই রেলমন্ত্রীর এই মন্তব্যের  নিন্দা করছি।এতে চিত্তরঞ্জনের  কর্মী থেকে আধিকারিকদের মনোবল নষ্ট হতে পারে ।পাশাপাশি তিনি বলেন ২০০০ সালে চিত্তরঞ্জন ৩০% বাইরে থেকে ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ আনা হতো। এখন সেটাও প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ এসে দাঁড়িয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই জিনিসের গুণগতমাননিয়ে আমরাও প্রশ্ন তুলছি। এটাও রেল মন্ত্রকের ভাবা উচিত যাত্রী নিরাপত্তার স্বার্থে।

Comments are closed.