ASANSOL-BURNPUR

SAIL ISP বার্ণপুর কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা হবে ৫ মিলিয়ন টন, বাড়বে কর্মসংস্থান

বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, 30 জানুয়ারিঃ লোকসান কাটিয়ে লাভের মুখ দেখা দেশ তথা রাজ্যের অন্যতম ইস্পাত কারখানা বার্ণপুর ইস্কো বা আইএসপির (SAIL ISP) উৎপাদন ক্ষমতা আরো বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলো সেল বা স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া। জানা গেছে, এই কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা আরো ২.৫০ মিলিয়ন টন বাড়ানো হবে, মোট ৫ মিলিয়ন টন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এই কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে ২.৫০ মিলিয়ন টন। এর জন্য একটি ডিপিআর বা ডিটেইলস প্রজেক্ট রিপোর্ট সেল থেকে ইস্পাত মন্ত্রকে চলে গেছে। ইস্পাত মন্ত্রক সেই রিপোর্ট খতিয়ে দেখে নীতি আয়োগের মাধ্যমে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রী বা পিএমও দপ্তরে যাবে।


আরো জানা গেছে, কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বর্তমান কারখানাকে সম্প্রসারিত করতে হবে। তারজন্য সেলকে নতুন করে কোন জমি অধিগ্রহণ করতে হবেনা। যে পরিমান জমি এরজন্য দরকার, তা কারখানার হাতেই রয়েছে। এমনকি সেই জমি পাঁচিল দিয়ে ঘিরেও রাখা আছে।


কারখানা সম্প্রসারিত হলে নতুন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। জানা গেছে, এরফলে ৫ হাজার স্থায়ী ও ১০ হাজারের মতো অস্থায়ী কর্মীর চাকরি হবে। এলাকার অর্থনৈতিক চেহারার পরিবর্তন ঘটবে। একইভাবে উপকৃত হবে, আশপাশের এলাকার ছোট ও মাঝারি সিমেন্ট ও ইস্পাত কারখানাগুলিও।
সেলের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলি।


এক সাক্ষাৎকারে আইএসপির ইডি ( এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর) অনুপ কুমার বলেন, বর্তমানে এই কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা ২.৫০ লক্ষ মিলিয়ন টন। সেল তা ৫ মিলিয়ন টন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইস্পাত মন্ত্রকে তার রিপোর্টও চলে গেছে। এরজন্য কারখানার সম্প্রসারণে কোন জমি নিতে হবে না। কারখানার কাছেই তা আছে।

এটা হলে সবমিলিয়ে ১৫ হাজারের মতো কর্মসংস্থান বাড়বে। তিনি আরো বলেন, আধুনিকীকরণের পরে গত আর্থিক বছর পর্যন্ত এই কারখানা লাভের মুখ দেখেনি। চলতি বছরে কারখানা লাভের মুখ দেখতে চলেছে। এর কারণ হলো কারখানায় আধুনিকীকরণের জন্য যে টাকা লগ্নি করা হয়েছিলো, তার সুদ সহ টাকা দিতে হচ্ছিলো। গত আর্থিক বছরে তা দেওয়া শেষ হয়েছে।এর পাশাপাশি, এই আধুনিক কারখানায় উৎপাদনের জন্য উন্নত মানের কয়লা বিদেশ থেকে আনতে হয়। যার বেশীরভাগটাই আসে অস্ট্রেলিয়া থেকে। তার কারণ হলো, কারখানার কাছে চাষনালা ও রামনগরের যে খনি আছে, সেগুলো থেকে যে কয়লা হয়, তা অতোটা মানের নয়। এই কয়লায় ছাই বেশি হয়। তা ব্যবহার করা যায় না। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে,

বার্ণপুরের পাশাপাশি দূর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় একটি করে মেশিন বসানো হবে। সেই মেশিনের সাহায্যে দেশীয় কয়লাকে কারখানায় ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হবে। শ্রীকুমার বলেন, এরফলে বেশী অর্থ ব্যয় করে বিদেশ থেকে কয়লা আনতে হবে না। কারখানায় মাথায় যে অর্থনৈতিক বোঝা এই দুটি কারণের জন্য ছিলো, তা অনেকটাই কমে যাবে।


আইএসপির ইনটাক শ্রমিক সংগঠনের শাখার সাধারণ সম্পাদক হরজিৎ সিং বলেন, খুবই ভালো সিদ্ধান্ত। এরফলে কর্মসংস্থান যেমন বাড়বে, তেমনই অর্থনৈতিক দিকটাও চাঙ্গা হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা যতদূর জানতে পেরেছি, এরজন্য জমি নিতে হবেনা। নতুন করে সম্প্রসারণের জন্য যে জমি দরকার, তা কারখানার হাতে রয়েছে। সেই জমি থেকে কয়েকটি শপ আছে, সেগুলো সরিয়ে নিলেই হয়ে যাবে।


প্রসঙ্গতঃ, মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বার্ণপুর ইস্কো কারখানার প্রথম সম্প্রসারণ করা হয়েছিলো। দেড় দশকেরও বেশি সময় আগে সেই সম্প্রসারণের প্রথম পর্যায়ে ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়। পরে, তা ধাপে ধাপে বেড়ে ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি হয়।
জানা গেছে, এবারের সম্প্রসারণে আরো কয়েক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *