RANIGANJ-JAMURIA

রানীগঞ্জের শিবানন্দ জি মহারাজ কে মাদার টেরিজা রতন অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করা হবে

বেঙ্গল মিরর, রাণীগঞ্জ, চরণ মুখার্জি : এক কাপড়ের জীবন-যাপন করা সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য, কৃচ্ছ্রসাধনের মধ্যে দিয়েই সমাজসেবায় ব্রতী থাকার ব্রত নিয়ে চলা টিরাটের শিবানন্দ জি মহারাজ। যিনি নিজেকে সাধু নয়, মহারাজও নয় বলে আখ্যা দেন। আর সমাজ সেবাই প্রতিনিয়ত নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন। সেই শিবানন্দ জি কে এবার তার সমাজসেবার মূল্য স্বরূপ বিশেষ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করার উদ্যোগ নিয়েছেন রাজ্য সরকার। সেই বিষয়ের লক্ষ্যে কলকাতার বুকে 24 শে ফেব্রুয়ারি শিবানন্দ জি কে মাদার টেরিজা রতন, অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করা হচ্ছে।

ইতিমধ্যেই ঐ গুণী পুরুষ জানিয়েছেন সেবা নিতে নয় সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে এই খনি অঞ্চল রানীগঞ্জের আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় মহিলাদের স্বনির্ভর করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে, তাদের মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে, স্বনির্ভর প্রকল্পর মাধ্যমে তাদের স্বাবলম্বী করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। তার কথায় কলিকালের সমাপনের সময় ঘনিয়ে আসছে, আর সত্য যুগের দোরগোড়ায়, প্রকৃত মানুষ গড়ে তুলতে আমরা সবাই সচেষ্ট, আর সকলেই যখন সহজ সরল জীবনযাপন এর মধ্যে দিয়ে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করার জন্য উদ্যোগী হবেন, তা সম্ভবপর হয়ে পড়বে নিজেদের স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে।

আর তা সম্ভব স্বনির্ভর হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মধ্যে দিয়েই। তখনই মানুষ প্রকৃত অর্থে মানুষ হবে, বলে দাবি করেছেন তিনি। ইতিমধ্যেই ব্যাপক মানুষের সহায়তায় বিষয় লক্ষ্যে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার বিভিন্ন পদে ভূষিত করেছেন তাকে। এবার কলকাতার বুকে মাদার টেরিজা রত্ন অ্যাওয়ার্ড দ্বারা ভূষিত হওয়ায় আরো একটি রত্ন যোগ হচ্ছে তার মুকুটে, তা নিয়েই গর্বিত আশ্রমের আশ্রমিকেরা। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও বাংলাদেশের ঢাকা ও ভিন রাজ্যে মধ্য প্রদেশ এর বিলাসপুরে তিনি ইতিমধ্যেই আশ্রম গড়ে তুলে অসংখ্য অসহায় মানুষের সহায়তার লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।

বহু স্বনির্ভর প্রকল্প গড়ে তুলে মানুষজনের স্বনির্ভর হওয়ার পথ দেখিয়েছেন তিনি। আর তারই অঙ্গ হিসেবে খনি অঞ্চল রানীগঞ্জের আদিবাসী পাড়া লাগোয়া দামোদর নদের তীরে টিরাট অঞ্চলে গড়ে তুলেছেন বাদু শিবানন্দ সেবাশ্রম। এই আশ্রমেই চলছে মানুষ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজের সাথে স্বনির্ভর হওয়ার বেশ কিছু প্রকল্প। রাজ্য সরকারের সহায়ক দলের সাথেই বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্দেশ্যে সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে এখানে। যার মাধ্যমে এলাকার যুবতি থেকে শুরু করে গৃহবধূ সকলেই সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন পোশাক তৈরি করে তা বাজারজাত করার উদ্যোগ নিচ্ছেন। একসাথেই হাতে তৈরি গহনা প্রস্তুত করে, ধূপকাঠি বানিয়ে, স্বনির্ভর হওয়ার লক্ষ্যে প্রায় 200 জন যুবতীও গৃহবধূ সামিল হয়েছেন এই স্বনির্ভর হওয়ার কর্মকাণ্ডে। তাদের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী রাজ্য সরকারের সবলা মেলায়, দেদার বিক্রি হচ্ছে ভালো দামে। আর এই সকল কর্মকাণ্ডের নিরিক্ষে ইতিমধ্যেই ওই স্বনির্ভর দলের মহিলারা বেশ কয়েক দফায় পুরস্কৃত হয়েছেন।

এবার সেই সকলের সাথেই মহিলাদের আরও একটি অংশকে স্বনির্ভর করে তোলার উদ্যোগ নিয়ে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করল শিবানন্দ আশ্রমের প্রশিক্ষকরা, তারা সমষ্টি উন্নয়ন দপ্তরের বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রশিক্ষকদের কাছে মাস তিনেক আগে মাশরুম তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়ে মাশরুম তৈরীর ক্ষেত্রে জোর উদ্যোম দেখিয়েছেন। আর তাদের তৈরি মাশরুম বাজারজাতও হওয়ার সাথেই বেশ কয়েকটি সংস্থা সেই সকল মাশরুমকে খরিদ করার জন্য এগিয়ে এসেছেন প্রত্যন্ত এলাকার এই আশ্রম প্রাঙ্গণে। আর সামগ্রীকে কর্মকাণ্ডকে খতিয়ে দেখতে এবার আশ্রম প্রাঙ্গণে হাজির হলেন sc.st.obc অর্থ নিগমের চেয়ারম্যান তথা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা সাথে যুক্ত সদস্য প্রাক্তন বিধায়ক অসীম কুমার মাজি। তিনি স্বনির্ভর দলের সদস্যদের কর্মকান্ড দেখে স্বভাবতই খুশি। তাদের এলাকার দীর্ঘদিনের সমস্যা বাস দ্বারা যাতায়াতের ব্যবস্থা শুরু করার লক্ষ্যে যাতে ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব তা নিয়েও তিনি আলোচনা করার আশ্বাস দিলেন।

উল্লেখ্য রানীগঞ্জ শহর থেকে তিরাট যাওয়ার বাস চলাচল দীর্ঘ প্রায় 15 বছর ধরে বন্ধ থাকায়, ব্যাপকদূর্ভোগে পড়তে হয় এলাকার বাসিন্দাদের। এবার সেই বাস চলাচলের প্রক্রিয়াকে চালু করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেন অসীম বাবু।এই আশ্বাস পেয়ে স্বভাবতই খুশি এলাকার বাসিন্দারা। অসীম বাবু জানিয়েছেন আসানসোল শহর থেকে তিরাট আশ্রম ছুঁয়ে রানীগঞ্জ শহর হয়ে দুর্গাপুর যাওয়ার বাস চলাচল দু’দফায় করানোর জন্য তিনি উদ্যোগ নেবেন। আগামীতে যাত্রীসংখ্যা বিষয় লক্ষ্য করে আরো বাস চলাচল বাড়ানোর বিষয়টি নিয়েও পরিকল্পনা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। একইসাথে তিনি এলাকার পিছিয়ে পড়া এসিএসটি মহিলাদের আর্থিক দিক দিয়ে কিভাবে সহায়তা করা সম্ভব সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দেন। অসীম বাবুর এই আশ্বাসে স্বভাবতই খুশি টিরাট অঞ্চলের বাসিন্দারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *