ASANSOL

আসানসোল পুরনিগমের বাজেটে ব্যয় বরাদ্দ প্রায় ৩৯০ কোটি টাকা

বৈঠক বয়কট বিজেপি কাউন্সিলরদের ,সার্কাস চলছে বলে কটাক্ষ, পাল্টা জবাব শাসক দলের

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ ( Asansol News Live Today ) আসানসোল পুরনিগমের বাজেট ( AMC Budget) বৈঠক নিয়েও এবার বাকবিতন্ডায় জড়ালো শাসক দল তৃনমুল কংগ্রেস ও বিরোধী দল বিজেপি। মঙ্গলবার সকালে পুরভবনের ” মুখোমুখি ” হলে ২০২২ -২০২৩ আর্থিক বছরের শেষ ৯ মাসের জন্য পুর কাউন্সিলরদের বোর্ড বৈঠক ডাকা হয়।
বৈঠক শুরু হওয়ার কথা ছিলো সকাল সাড়ে এগারোটার সময়। কিন্তু আধ ঘন্টারও বেশি সময় অপেক্ষা করার পরেও মেয়র বিধান উপাধ্যায় না আসায় বিজেপির ৫ কাউন্সিলর বেলা বারোটার পরে বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। যার নেতৃত্বে ছিলেন চৈতালি তেওয়ারি। পুরনিগমের ভেতরেই তারা স্লোগান দিতে থাকেন। বোর্ড বৈঠকে মেয়রের পরিবর্তে কাউন্সিলরদের সামনে বাজেট প্রস্তাবনা পাঠ করেন শাসক দলের কাউন্সিলর অভিজিৎ ঘটক ( তৃনমুল কংগ্রেসের তরফে ঘোষণা করা দুই ডেপুটি মেয়রের মধ্যে একজন। পুর আইনের সংশোধনে রাজ্যপাল সই না করায় তিনি এখনো শপথ নেননি)।


এবারের বাজেটে নতুন কোন কর চাপানো ও কর বৃদ্ধির কথা না বলা হলেও, জোর দেওয়া হয়েছে সব ধরনের আদায়ে ( সম্পত্তি কর , ট্রেড লাইসেন্স ও অনান্য কর আদায়)। এছাড়াও ক্লিন ও গ্রিন আসানসোল, প্রতি বাড়িতে জল সংযোগ ও পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহ , স্থায়ী সম্পত্তি নির্মণ ( যেমন সড়ক , ড্রেন , স্ট্রীট লাইট ) , স্বাস্থ্য , শিক্ষা , ক্রীড়া ও সংস্কৃতি , আর্থ – সামাজিক ও আভ্যন্তরীণ পরিকাঠামোগত উন্নয়নে জোর দেওয়া হয়েছে। এবারের বাজেটে ২০২২-২০২৩ অর্থবর্ষের জন্য মোট ৩৮৯ কোটি ৪২ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা ব্যায় বরাদ্দ করা হয়েছে । বাজেট অনুযায়ী এই অর্থবর্ষে আয়ের সংস্থান ধরা হয়েছে মোট ৩৮৯ কোটি ৭৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা । অর্থাৎ বাজেট উদ্ধৃত্তের পরিমান ৩৩ লক্ষ ৯৩৫ হাজার টাকা। গত অর্থ বর্ষের মিলিয়ে মোট বাজেট উর্দ্ধতের পরিমান ৫১ লক্ষ ২১ হাজার টাকা । পানীয় জলের সমস্যা দূরীকরণ , ওভারহেড রিজার্ভার নির্মানের কাজ ও প্রতি বাড়িতে জল সংযোগ খাতে ব্যায় বরাদ্দের পরিমান ধরা হয়েছে ৪২৫.৬৭ কোটি টাকা। যার মধ্যে এই বছরের ( ২০২২- ২০২৩ ) আনুমানিক বাজেট বরাদ্দ ১১০ কোটি টাকা। ভূঃগর্ভস্থ পয়ঃ প্রনালী প্রকল্পে মোট প্রকল্প ব্যায় বরাদ্দের পরিমান ২২৫ কোটি টাকা । যার মধ্যে এই বছরের ( ২০২২ – ২০২৩ ) আনুমানিক বাজেট বরাদ্দ ২৫.০০ কোটি টাকা । গরীব মানুষদের জন্য ১৫ হাজার গৃহ নির্মাণের কাজ চলছে। এই প্রকল্পের আওতায় এখনো পর্যন্ত ৩৭৪৮ জনকে টাকা দেওয়া হয়েছে।


পুর কর বা সম্পত্তি কর বাবদ ২০২০-২০২১ অর্থবর্ষে ১৮ কোটি ৬৯ লক্ষ টাকা আদায় হয়েছিলো । ২০২১-২০২২ বছরের ৯ মাসে এই খাতে ১৩ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা আদায় হয়েছে । এই বছর থেকে আসানসোল পুরনিগম কর আদায়ের গতি ও পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য বাড়ি বাড়ি পরিদর্শন ও অনাদায়ী কর আদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে । সম্পত্তি কর আদায়ের ক্ষেত্রে অন – লাইনে কর দেওয়ার ব্যবস্থা, পুরনিগমের পুরানো ৫০ টি ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে। সংযুক্ত এলাকা গুলির ক্ষেত্রেও তা দ্রুত চালু হবে । এই প্রকল্পের জন্য আগামী বছর এই খাতে বেশী আদায়ের আশা করছে পুর কতৃপক্ষ। পরিবেশ বান্ধব বাড়ির জন্য সম্পত্তি করে বিশেষ ছাড় দেওয়ার নীতি তৈরী করার কথা ভাবা হচ্ছে। এই খাতে ২০২২-২০২৩ অর্থবর্ষের প্রস্তাবিত আয়ের পরিমান ধরা হয়েছে ২২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা।


একইভাবে, ট্রেড লাইসেন্স ও বাড়ির প্ল্যান , মিউটেশনের জন্যও ঐ একই ব্যবস্থা গ্রহনের পরিকল্পনা দ্রুত রূপায়িত হবে। এই তিনটি খাতে যাতে অনলাইনে সমস্ত কাজ যেমন আবেদন , নির্দিষ্ট ফি জমা দেওয়া ও সংশ্লিষ্ট অনুমোদন পাওয়া যায় তার ব্যবস্থা কার্যকর হয়েছে। গত বছরে ( ২০২১-২০২২ সালের নয় মাসের ) ট্রেড লাইসেন্সে ৫ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা আয় হয়েছিল। এবারে তাতে আয়ের,পরিমাণ ধরা হয়েছে ৯ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। একইভাবে গত বছরে বাডির প্ল্যান ২ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা মিউটেশনে ৯৩ লক্ষ টাকা আয় হয়েছিল। চলতি আর্থিক বছরের শেষ নমাসে এই দুই খাতে সাড়ে ৪ কোটি ও ২ কোটি টাকা প্রস্তাবিত আয় ধরা হয়েছে।


এদিনের বৈঠক ও বাজেট নিয়ে চৈতালি তেওয়ারি বলেন, পুরনিগমে সার্কাস চলছে। পুরনিগম নির্বাচনে ভোট লুঠ করে তৃনমুল কংগ্রেসের কাউন্সিলররা জিতেছেন। আর আমরা যারা মানুষের ভোটে জিতেছি, তারা কোন পরিসেবা পাচ্ছেন না। আমাদেরকে বলা হয়েছিলো, এটা বাজেট বৈঠক। কিন্তু পুর চেয়ারম্যান অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় বারোটা বাজার ৫ মিনিট আগে আসেন। মেয়র তখনও আসেননি। তাহলে কি করে পুর চেয়ারম্যান বৈঠক শুরু করেন? পুরনিগম কোন আইন না মেনে চলছে। তিন মাসেরও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও, পূর্নাঙ্গ পুর বোর্ড গঠন করা হয় নি। চৈতালিদেবী আরো বলেন, শহরবাসী কি চাইছেন আসানসোল পুরনিগমে দুজন ডেপুটি মেয়র ও চারজন মেয়র হন? এই পুর বোর্ডের কোন বৈধতা নেই। তাই এই বৈঠক বয়কট করেছি।


বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ বিজেপি কাউন্সিলররা বেরিয়ে যাওয়ার পরেই মেয়র আসেন। বৈঠকে ঢোকার আগে মেয়র সাংবাদিকদের বলেন, দুটো উদ্বোধনের অনুষ্ঠান ছিলো বলে আসতে দেরী হলো। কে বয়কট করে বেরিয়ে গেলো আর কে কি বললো, তা নিয়ে আর কি প্রতিক্রিয়া দেবো? সাধারণ মানুষের জন্য বাজেট করা হয়েছে।
পুর চেয়ারম্যান বলেন, বৈঠক চলাকালীন এক বিজেপি কাউন্সিলর অসাংবিধানিক কথা বলেছেন। তার বিরুদ্ধে একটা নিন্দা প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে। তারা কোন আইন জানেন না। আগে তা জেনে ও শিখে আসুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *