ASANSOL

Sehgal : সাতদিনের সিবিআই হেফাজত, বিচারকের প্রশ্নের মুখে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা, তদন্তকারী অফিসারকে শোকজ

আইনজীবীদের কর্মবিরতিতে শুনানিতে দেরী

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত ও দেব ভট্টাচার্যঃ ( Asansol Live News Today In Bangla ) গরু পাচার মামলায় ধৃত তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেনের সাতদিনের সিবিআই হেফাজত হলো। শুক্রবার বিকেলে এই মামলার দু’পক্ষের আইনজীবীদের সওয়াল-জবাব শেষে সিবিআই আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী তার জামিন নাকচ করে এই নির্দেশ দেন। পরবর্তী শুনানি দিন ঠিক হয়েছে আগামী ১৭ জুন। সিবিআই এদিন সায়গলকে ১৪ দিনের হেফাজত চেয়ে আবেদন করেছিলো।
তবে এদিনের শুনানিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিলো এই মামলার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার আইও বা তদন্তকারী অফিসারকে শোকজ করা। আইন মেনে সিআরপিসির নির্দিষ্ট ধারায় নোটিশ না পাঠিয়ে সায়গলকে গ্রেফতার করায় বিচারক মামলার আইওকে লিখিত ভাবে কারণ দর্শানোর জন্য শোকজ করেন। তাকে আগামী ১৭ জুন সেই শোকজের জবাব দিতে বিচারক নির্দেশ দেন।

Sehgal


আসানসোল সিবিআই বিশেষ আদালতে তোলা নিয়ে নানা ঘটনায় সরগরম রইলো আদালত চত্বর। এদিন এর জন্য আসানসোল সিবিআই আদালতে অনেক বেশি সংখ্যায় পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিলো। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপে দুটি গাড়িতে সায়গলকে এনে, সরাসরি সিবিআই আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী এজলাসে নিয়ে যাওয়া হয়। তার আগেই আসানসোল আদালতে চলে আসেন সায়গলের আইনজীবী অনির্বাণ গুহ ঠাকুরতা ও সঞ্জীব কুমার দাঁ।


সায়গেল হোসেনকে শুক্রবার দুপুরে একটা নাগাদ আসানসোল সিবিআই আদালতে তোলা হলেও শুনানি শুরু হতে দেরি হয়। তার কারণ আসানসোল আদালতে বার অ্যাসোসিয়েশনের তরফ থেকে কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে আদালতে। এর ফলে মামলার শুনানি হতে জটিলতা তৈরি হয়। যদিও সেই সময় সিবিআই ও সায়গলের আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন এজলাসে। কর্মবিরতি চলায় বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা শুনানি করতে বাধা দেন। কিন্তু বিচারক তাদেরকে বলেন, এটা সম্ভব নয়। শেষ পর্যন্ত বিকেল তিনটের সময় বার এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাজেশ ওরফে বান্টি তেওয়ারির নেতৃত্বে বার এ্যাসোসিয়েশনের একটি দল শুনানি করতে সম্মতি দেন। এরপর শুনানি শুরু হতেই, সায়গলের আইনজীবীরা তার গ্রেফতার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

অনির্বাণ গুহ ঠাকুরতা এজলাসে বলেন, এই গ্রেফতার বেআইনি। এক্ষেত্রে একজনের মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। ১৬০ নং ধারায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ দিয়ে ডেকে পাঠিয়ে মক্কেলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা করা যায় না। তিনি সুপ্রিম কোর্টের আরনিশ কুমার মামলার উদাহরণ দিয়ে বলেন, কাউকে গ্রেফতার করতে হলে, তাকে সিআরপিসির ৪১ নং ধারায় নোটিশ দিতে হবে। সেটা বাধ্যতামুলক। এক্ষেত্রে তা করা হয় নি। এর পাশাপাশি এ্যারেস্ট মেমো দেওয়ার ক্ষেত্রেও আইন মানা হয়নি। এরপর সওয়াল করতে গিয়ে সিবিআইয়ের আইনজীবী রাকেশ কুমার, নানা ভাবে বলার চেষ্টা করেন যে, আইন মেনে সবকিছু করা হয়েছে। কিন্তু তাকে বিচারকের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। মামলার আইও নিজেও বিচারকের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত এক ঘন্টারও বেশি সময় সওয়াল-জবাব শেষে বিচারক সায়গলের জামিন নাকচ করে দেন।


উল্লেখ্য সায়গেল হোসেনের বিরুদ্ধে আইপিসি ১২০ বি অর্থাৎ অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ও সরকারি কর্মীর দুর্নীতির জন্য পিসি অর্থাৎ প্রিভেনসেন অফ কোরাপসেন ৭/১০/১১ ধারা দেওয়া হয়েছে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে ।
কয়েকদিন আগে মুর্শিদাবাদের ডোমকলে সায়গলের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তদন্তকারীদের মতে, সায়গলের কাছে গরু পাচার মামলার অনেক তথ্য রয়েছে। সিবিআই তাকে একাধিকবার নিজামের প্যালেসে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তদন্তকারীদের মতে, সায়গলের বক্তব্যে বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। একারণেই তাকে বৃহস্পতিবার আরো একদফায় গ্রেফতার করা হয়েছে।


প্রসঙ্গতঃ গরু পাচার মামলায় অনুব্রতর ঘনিষ্ঠদের একের পর এক ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। মামলার প্রধান অভিযুক্ত বিনয় মিশ্র বর্তমানে পলাতক। এই মামলার অন্যতম এনামুল হক ও বিএসএফের কম্যান্ডার সতীশ কুমারকে সিবিআই গ্রেফতার করলেও তারা এই মুহুর্তে শর্তসাপেক্ষে জামিন দিয়েছে। একই সঙ্গে বিনয়ের ভাই বিকাশ মিশ্রকেও গ্রেফতার করেছিলো সিবিআই। বিকাশ দুদিন আগেই আসানসোলের সিবিআই আদালত থেকে গরু পাচার মামলায় জামিন পেয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *