আসানসোল পুরনিগমের ৫ মেয়র পারিষদের শপথ, দলের কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত ও রাজা বন্দ্যোপাধ্যায় : সাড়ে তিন মাসেরও বেশি সময় পরে আসানসোল পুরনিগমের মেয়র পারিষদ গঠন হলো। বৃহস্পতিবার ৫ মেয়র পারিষদ বা এমএমআইসির নাম ঘোষণা করেন মেয়র বিধান উপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার বেলা বারোটার পরে আসানসোল পুরনিগমের মুখোমুখি হলে মেয়র পারিষদদের নাম ঘোষণা নিয়ে পুর কাউন্সিলরদের নিয়ে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছিলো। পুর চেয়ারম্যান অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় সেই বৈঠকের সূচনা করেন। মেয়র বিধান উপাধ্যায় এরপর ৫ মেয়র পারিষদের নাম ঘোষণা করেন। তারা হলেন, গুরুদাস ওরফে রকেট চট্টোপাধ্যায়, মানস দাস, দিব্যেন্দু ভগৎ, ইন্দ্রানী মিশ্র ও সুব্রত অধিকারী। পরে তাদের শপথ বাক্য পাঠ করান পদাধিকারবলে মেয়র।
প্রসঙ্গতঃ বুধবারই মেয়র সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বৃহস্পতিবার পুরনিগমের ৫ মেয়র পারিষদ বা MMIC এর নাম ঘোষণা করা হবে। মেয়র ও চেয়ারম্যান এবং ৫ মেয়র পারিষদ শপথ নিলেও, আইনী জটিলতার কারণে দুই ডেপুটি মেয়রের শপথ গ্রহণ হয়নি ও তারা দায়িত্ব নিতে পারেননি। পরে মেয়র বিধান উপাধ্যায় বলেন, পাঁচ মেয়র পারিষদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
তাদের দপ্তর বন্টন দ্রুত করা হবে। আমরা সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই। দলে কোন সমস্যা নেই। উল্লেখ্য , অভিজিৎ ঘটক ও ওয়াসিম-উল-হককে আসানসোল পুরনিগমের দুই ডেপুটি মেয়র হিসেবে গত ফেব্রুয়ারী মাসে দলের তরফে ঘোষণা করা হয়েছিলো। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মেয়র হিসাবে বিধান উপাধ্যায় ও পুর চেয়ারম্যান হিসাবে অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়ের শপথ নিয়েছিলেন। কিন্তু তার পর সাড়ে তিনমাসেরও বেশি সময় হয়ে গেলেও মেয়র পারিষদ ও বোরো চেয়ারম্যান সহ পূর্ণাঙ্গ পুর বোর্ড গঠন করা না হওয়ায় শাসক দল তৃনমুল কংগ্রেসকে বিজেপি সহ অন্য বিরোধী দলগুলি কটাক্ষ করেছে।
বিজেপি কাউন্সিলরদের দলনেত্রী চৈতালি তেওয়ারি বলেন, আমাদের নিমন্ত্রণ বা বৈঠকের কথা জানানো হয় নি। এটা পুর আইন বিরোধী। মনে হচ্ছে শাসক দল ভয় পাচ্ছে। যদিও গত পুর বোর্ডে ৭ জন মেয়র পারিষদ ছিলেন। কিন্তু আমরা যে উচ্চ আদালতে মামলা করায় তড়িঘড়ি ৫ জনকে নিয়ে মেয়র পারিষদ গঠন করা হলো। এখনো বোরো চেয়ারম্যান করা হয়নি। আমরা বিষয়টি আদালতে জানাবো। আমাদের উদ্দেশ্য দল না সব মানুষ যাতে পুর পরিসেবা পান। যদিও মেয়র এই অভিযোগ মানতে চাননি।
আসানসোল উত্তর বিধান সভা থেকে গুরুদাস ওরফে রকেট চট্টোপাধ্যায় , আসানসোল দক্ষিণ বিধান সভা থেকে মানস দাস, জামুরিয়ার সুব্রত অধিকারী রানিগঞ্জের দিব্যেন্দু ভগৎ ও কুলটি থেকে ইন্দ্রাণী মিশ্রকে মেয়র পারিষদ করা হয়েছে। একমাত্র দিব্যেন্দু ভগৎকে দিলে বাকি চারজন আসানসোল পুরনিগমে প্রথম বার মেয়র পারিষদ হলেন। তারমধ্যে কুলটির ইন্দ্রানী মিশ্র আসানসোল পুরনিগম ভোটের কয়েকদিন আগে মন্ত্রী মলয় ঘটকের হাত ধরে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। তারপর পুর ভোটে জিতে কাউন্সিলর হওয়া ও মেয়র পারিষদের দায়িত্ব পেলেন ইন্দ্রানী। তার এই দায়িত্ব পাওয়া নিয়ে কুলটির শাসক দলের পুর কাউন্সিলরদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কুলটির এক প্রবীন কাউন্সিলর বলেন, এটা আমরা মানতে পারছিনা। আরো অন্ততঃ দুজনকে মেয়র পারিষদ করা হবে বলে শুনেছি। সেই সময় পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করবো। যদি তখনও আমাদের করা না হয়, তাহলে আমরা কয়েকজন দল ছেড়ে দেওয়ার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারি। তবে শুধু কুলটি নয়, অন্য বিধানসভা এলাকাতেও একই রকম খবর মিলছে। তার প্রমাণ হলো, এদিনের মেয়র পারিষদ গঠন করা নিয়ে, যে বৈঠক ডাকা হয়েছিলো, সেখানে বিরোধী দলের পাশাপাশি শাসক দলের অনেক কাউন্সিলর গরহাজির ছিলেন।
পরে দুপুরে মেয়র, পুর চেয়ারম্যান ও দুই ডেপুটি মেয়র নব নির্বাচিত ৫ মেয়র পারিষদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এদিনের মেয়র পারিষদ গঠন নিয়ে শাসক দলের নেতা ও কর্মীদের উচ্ছ্বাস ছিলো চোখে পড়ার মতো। কাউন্সিলরদের অনুগামীরা ফুল, মালা ও আবীর নিয়ে সকাল থেকে আসানসোল পুরনিগমে চলে আসেন। ফাটানো হয় পটকাও।