রানীগঞ্জে তিন দিনব্যাপী ধর্মরাজ পূজা অনুষ্ঠিত হলো
বেঙ্গল মিরর, চরণ মুখার্জী, রানীগঞ্জ: রানীগঞ্জের সিয়ারসোল রাজ বাড়ি এলাকার ধীবর পাড়াতেই তিন দিনব্যাপী ধর্মরাজ পূজা অনুষ্ঠিত হলো জাকজমকের সঙ্গেই। এখানে জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রার অনুষ্ঠানের দিন শুরু হয় ধর্মরাজ পুজো। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন বল্লাল সেনের সময়কাল থেকেই প্রায় সাড়ে সাতশ বছরেরও আগে গঙ্গায় স্নান করতে গিয়ে এক শিলা কুড়িয়ে পান সিয়ারসোল এর নাথ পরিবারের এক সদস্য, গত কয়েক পুরুষ ধরে সেই নাথ পরিবারের সদস্যদের সিয়ারসোল রাজ পরিবারের উপাধি পেয়ে দাস উপাধি লাভ করেন। আর সেই দাস উপাধি পাওয়া পরিবারের সদস্যরাই বংশানুক্রমে ধর্মরাজ পূজা চালিয়ে আসছেন রানীগঞ্জের সিয়ারসোল গ্রাম এলাকায়।




বর্তমান প্রজন্মের সদস্যরা কলকাতার বাসিন্দা, ওষুধ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত এক সদস্য প্রসেনজিৎ দাস, এখনো তাদের দীর্ঘ পরম্পরা কে বজায় রেখে ধর্মরাজ পুজো শ্রদ্ধার সঙ্গে করে আসছেন। আর সেই ধারাবাহিকতাকে বজায় রেখে নির্দিষ্ট দিন ধরে পূজো সামিল হয়েছেন ওই পরিবারের প্রত্যেক সদস্য। এখানে ধর্মরাজ পূজোর বেশ কিছু বিশেষত্ব লক্ষ্য করা যায়। অন্য সকল পুজো গুলি থেকে এখানের ধর্মরাজ পূজো তাই অনেকটাই আলাদা। যেমন এখানে ধর্মরাজ ঠাকুর এর ওপর চাপানো পদ্ম ফুল যতক্ষণ না পর্যন্ত ধর্মরাজ ঠাকুরের মাথা পড়ে ততক্ষণ দিয়াসি অর্থাৎ যিনি পুজোর দায়িত্বে রয়েছেন তিনি ঠাকুর মন্দির থেকে যেতে পারবেন না, বের হবেন না ধর্মরাজ। আর ফুল দিয়াসির হাতে পড়ে গেলেই যাত্রা শুরু হবে ধর্মরাজের।

এরপরই ঠাকুর চলে যান স্নানযাত্রায়, যেখানে চতুর দোলায় করে ঠাকুরকে স্নান করাতে নিয়ে যান হাজার হাজার মানুষ। সেখানে ধর্মরাজ ঠাকুরের স্নানযাত্রা সম্পন্ন হওয়ার পর, সাধারণ মানুষ সেই জলে স্নান করে পবিত্র হন। তবে সকলের আগেই বানেশ্বর বাবার ওপর দিয়াসী সাইত হয়ে শুরু করেন ভক্ত লোটন। সাধারণ মানুষ এরপরই শুরু করে ভক্ত লোটন দেওয়া। বিগত বছরগুলি ন্যায় এ বছরও হাজারো ধর্মপ্রাণ মানুষের উপস্থিতিতে ভক্ত লোটন এর মধ্যে দিয়ে ধর্মরাজ বাবার পূজা অর্চনা শুরু করেন ভক্তরা। আর এসবের মাঝেই কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই পুজোর বিশেষ মুহূর্ত শুরু হয়, মন্দিরে শক্তিশেল পুজোর মাধ্যমে। পরে বিকেলে ধর্মরাজ বাবা রাজবেশে বের হন রাজবাড়ী উদ্দেশ্যে। এ সময় থেকে শুরু হয় ভক্তদের মানত পূরণের পালা।
এবারে প্রায় 235 জন ভক্ত নিজের শরীরকে যাতনা দিয়ে বাবা ধর্মরাজের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন। যেখানে এবার দেখা গেছে গাড়ি তোলা ক্রেনের মাধ্যমে এক বিশাল উচ্চতায় শরীরে কাঁটা বিঁধে দুই ভক্তকে প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে অন্য ভক্তদের সাথেই মন্দিরে হাজির হয়েছেন। এ ছাড়াও বহু ভক্ত কেউ নিজের শরীরে চাবুক দিয়ে আঘাত করে, কেউ আবার নিজের শরীরে কাঁটা বিঁধে গরুর গাড়ি নিয়ে গেছেন ধর্মরাজের মন্দির প্রাঙ্গণে। এসকল নানা বিধ যাতনা দিয়ে ভক্তরা নিজেদের মানত পূরণ করেছেন। যদিও এই সকল প্রসঙ্গে ভক্তদের কাছে জানতে চাওয়া হলে ওই বিশাল উচ্চতায় ঝুলতে থাকা দুই মানত পূরণকারী যুব ভক্ত সটান জানিয়ে দেন, তাদের শরীরে কোন ব্যথা বেদনা নেই, তাদের অসুস্থ হওয়ার কোনো লক্ষণও দেখা যায়নি। তাদের একটাই দাবি সব তারা বাবার ইচ্ছে করে গেছেন তাদের ওই কর্ম টা নিমিত্ত মাত্র।