আসানসোলের জাতীয় সড়কে মর্মান্তিক পথ দূর্ঘটনা, ট্যাঙ্কারে পিষ্ট হয়ে বাবা ও মেয়ের মৃত্যু, জখম মা
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের ২ নং জাতীয় সড়কে ঘটে গেলো এক মর্মান্তিক পথ দূর্ঘটনা। সেই ঘটনায় মৃত্যু হলো মোটরবাইক সওয়ার বাবা ও মেয়ের। গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন মা। শনিবার দুপুরে এই ঘটনাটি ঘটেছে আসানসোল উত্তর থানার জুবিলি মোড়ের অদূরে পলাশডিহার। মৃত বাবা ও মেয়ের নাম হলো দীপক চট্টোপাধ্যায় (৫৩) ও দোয়েল চট্টোপাধ্যায় (১৮)। আহত মহিলার নাম দোলা চট্টোপাধ্যায় (৫০)। তারা পাশের জেলা পুরুলিয়ার নিতুরিয়া থানার হিজুলি গ্রামের বাসিন্দা। দীপকবাবু পুরুলিয়ায় রেলের ঠিকাদার। মেয়ে দোয়েল এই বছর পুরুলিয়ার পারবেলিয়া হাইস্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে।




এই ঘটনার পরেই গোটা এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এলাকার বাসিন্দারা এলাকায় ২ নং জাতীয় সড়কে যান নিয়ন্ত্রণ ও ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েনের দাবিতে পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেন। তাদের দাবি, এই এলাকায় যান চলাচলে নিয়ন্ত্রণ ও ট্রাফিক ব্যবস্থা বলে কিছু নেই। সব গাড়ি বেপরোয়া ভাবে চলাচল করে। যে কারণে এলাকার বাসিন্দাদের প্রাণ নিয়ে হাঁটাচলা করতে হয়। প্রায়ই এখানে দূর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ আধিকারিকরা আশ্বাস দিয়ে বলেন, গোটা এলাকায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক ব্যবস্থা ঠিক করা হবে। দূর্ঘটনা আটকাতে সব ব্যবস্থা করা হবে। এরপর এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এদিন দুপুরে একটি মোটরবাইকে দীপক চট্টোপাধ্যায় স্ত্রী দোলা চট্টোপাধ্যায় ও মেয়ে দোয়েল চট্টোপাধ্যায় পুরুলিয়া থেকে আসানসোলের জামুড়িয়া থানার চাঁদায় শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিলেন। দীপকবাবু মাথায় হেলমেট পড়ে থাকলেও, মেয়ে ও স্ত্রী তা পড়েছিলেন না। আসানসোল উত্তর থানার ২ নং জাতীয় সড়কে জুবিলি মোড়ের অদূরে পলাশডিহায় টাল সামলাতে না পারায় দীপকবাবু মোটরবাইক বেসামাল হয়ে যায়। তাতে মোটরবাইক সহ তিনজন রাস্তায় পড়ে যান। সেই সময় পাশ দিয়ে যাওয়া একটি বড় তেলের ট্যাঙ্কার তাদের পিষে দেয়। তাতে তিনজনই গুরুতর জখম হন। এলাকার বাসিন্দারা দেখতে পেয়ে দৌড়ে আসেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে আসানসোল উত্তর থানার ট্রাফিক গার্ডের পুলিশ। সঙ্গে সঙ্গে তিনজনকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে এমারজেন্সি বিভাগের চিকিৎসক দীপকবাবু ও তার মেয়েকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। আহত অবস্থায় দোলাদেবীকে ফিমেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় একঘন্টার মধ্যেই তাকে বাইরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
ঘটনার খবর পেয়ে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ছুটে আসেন দীপক চট্টোপাধ্যায়ের ভাই সঞ্জিত চট্টোপাধ্যায় সহ পরিবারের সদস্য, আত্মীয় পরিজন ও এলাকার বাসিন্দারা। সঞ্জিত চট্টোপাধ্যায় বলেন, বাবা একমাস আগেই মারা গেছেন। তাই নিয়ম মেনে দাদা বৌদী ও ভাইঝিকে নিয়ে জামুড়িয়ার চাঁদায় শ্বশুরবাড়িতে ঘাট পালতে যাচ্ছিলো। কি হলো বুঝতে পারছিনা। এমন হবে ভাবতেই পারছিনা। গোটা ঘটনার আকস্মিকতায় চট্টোপাধ্যায় পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে। এদিকে এলাকায় থাকায় একটি বেসরকারি সংস্থার সিসি ক্যামেরায় গোটা ঘটনা ধরা পড়েছে। সেই সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে পুলিশ জানায়, মোটরবাইকটি আসানসোল থেকে রানিগঞ্জ যাওয়ার লেনের একবারে মাঝখান দিয়ে যাচ্ছিলো। পলাশডিহার কাছে আচমকাই পেছন দিক থেকে তেলের ট্যাঙ্কারটি চলে আসে। তাই চালক দীপকবাবু পাশ দিতে গিয়ে কোনভাবে বেসামাল হয়ে যান। তখনই তিনজনই বাইক সহ রাস্তায় পড়ে যায়। সেই সময় ট্যাঙ্কারের পেছনের চাকায় তারা পিষে যায়। পুলিশ আরো জানায়, চালক ও খালাসি পালিয়ে গেলেও, কিছুটা দূরে ট্যাঙ্কারটিকে আটক করা হয়েছে।