ASANSOL

আসানসোলের মানুষ পথ দেখিয়েছেন, অগ্নিপথ থেকে সমাজকর্মীদের গ্রেফতার, বিজেপিকে অলআউট আক্রমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত ও কাজল মিত্রঃ আসানসোল লোকসভা উপনির্বাচনে দলের প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহাকে জিতিয়ে এখানকার মানুষেরা বিজেপিকে “খামোশ ” করিয়ে দিয়েছেন। এতো ভোটে জিতিয়ে আসানসোলের মানুষ একটা দিশা দেখিয়েছেন বলে মঙ্গলবার আসানসোলের দলের কর্মীসভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করলেন। একইসঙ্গে এদিনের সভা থেকে অগ্নিপথ থেকে তিস্তা সেতলাবাদদের মতো সমাজকর্মীদের গ্রেফতার করার প্রসঙ্গ টেনে বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকারকে অলআউট আক্রমন করলেন তৃনমুল কংগ্রেসের সুপ্রিমো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলতে গেলে বক্তব্য রাখার প্রথম থেকেই একইসঙ্গে আক্রমনাত্মক ও সংযত ছিলেন। আসানসোলের পোলো ময়দানে এদিন সভা শুরুর সময় ছিলো দুপুর দুটো থেকে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার বেশ খানিকটা আগে একটা চল্লিশ মিনিট নাগাদ সভাস্থলে পৌঁছে যান। তবে তিনি সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চে উঠেননি। মঞ্চের নিচে তৈরী করা অস্থায়ী বিশ্রাম নেওয়ার জায়গায় বসেন। দুটো নাগাদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঞ্চে উঠতেই তৃনমুল কংগ্রেসের কর্মী ও সমর্থকেরা শ্লোগান দিতে শুরু করেন।

প্রায় আধঘন্টা পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বক্তব্য রাখতে উঠে আসানসোল লোকসভা উপনির্বাচনে দলের প্রার্থীর জয়ের প্রসঙ্গে বলেন, আমি আসানসোলের মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ। গরমের মধ্যে ভোট দিয়ে ভারতবর্ষের গর্বকে জিতিয়েছেন। আপনারা ভালো থাকবেন। আপনাদের ভালোবাসা ও ধন্যবাদ জানাই। এরপরেই তিনি অগ্নিপথের প্রসঙ্গ টেনে বিজেপিকে আক্রমন করে বলেন, ২০২৪ সালের ভোটের কথা ভেবে বিজেপি “ললিপফ” দেখাচ্ছে। যেখানে মানুষের ৪০ বছর চাকরি করার কথা। সেখানে ৪ বছর চাকরি করিয়ে, হঠিয়ে দেবে। কেন হবে? এই অগ্নিপথ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের” ফেসলস ” হয়েছে। তাই অবস্থা সামাল দিতে আর্মিকে সামনে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা নিয়ে রাজ্য সরকারকে এক কর্নেলকে দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাতে কি বলা হয়েছে জানেন?

বলা হয়েছে, চারবছর চাকরি করার পরে ওদেরকে রাজ্য সরকার চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করুক। কেন আমরা দেবো? ওদের দলের শাখাপ্রশাখা থেকে সব আসবে, আর আমরা চাকরি দেবো। ওদের পাপের ভাগিদার আমরা কেন হবো? ওদের নোংরা ভরা ডাস্টবিন আমরা কেন পরিষ্কার করবো? রাজ্য সরকার বাংলার ছেলেমেয়েদেরকে চাকরি দেবে। এখনো দিচ্ছে। আমরা তো এক্স আর্মিম্যানদের তো চাকরি দিয়ে থাকি। সারাদেশে আন এমপ্লয়মেন্ট বা বেকারত্বের হার শতকরা ৪০ শতাংশ। সেখানে বাংলায় কমসংস্থানের হার ঠিক উল্টো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আক্রমণ করে বলেন, নরেন্দ্র মোদি প্রথম সরকারে আসার সময় বলেছিলেন ১৫ লক্ষ টাকা করে একাউন্টে দেবে। দিয়েছে? আপনারা কি পেয়েছেন? পাননি। উজালার গ্যাস সিলিন্ডার দিয়েছিলো। এখন সেই সিলিন্ডার হাজার টাকা পার করেছে। কৃষকদের কি অবস্থা সারাদেশে। আর কেউ কিছু বললেই ইডি, সিবিআইকে লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সত্যি কথা বলা যাবে না। যারা দাঙ্গা করে, উস্কানি দেয়, তাদের গ্রেফতার করা হয় না। ওদের কেউ খুন করলেও, কিছু হয়না। উল্টে সিকিউরিটি দেওয়া হয়। ক্ষীর খাওয়ানো হয়।

এদিনের সভা থেকে তিস্তা সেতলাবাদদের মতো সমাজকর্মীদের গ্রেফতার করা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলে বিজেপি ও কেন্দ্র সরকারকে কাঠগড়ায় তোলেন। কেন তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে? কি দোষ তাদের? তিনি বলেন, বাংলা কিন্তু এইসব হয়না। হবেও না। এখানে দোষ করলে শাস্তি পেতে হবে। বিজেপি মুখপাত্র নুপুর শর্মার নাম না করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমি বাজে লোকদের নাম মুখে আনতে চাইনা। তার নামে সমন হয়েছে। তাকে আমরা ছাড়বো না। সোশাল মিডিয়ার অপপ্রচার নিয়েও এদিনের সভা থেকে সরব হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, আমি সোশাল মাধ্যম ভালোবাসি। কিন্তু বিজেপি সেই মাধ্যম দিয়ে ফেক ভিডিও ছড়াচ্ছে। কুৎসা করছে। দাঙ্গায় উস্কানি দিচ্ছে। তাই বলছি, আপনারা সাবধানে থাকবেন। কাউকে আধার কার্ড দেবেননা। এরা ছবি বিকৃত করে ব্ল্যাকমেল করবে। আসল কথা হলো, বাংলা সব জায়গায় এগিয়ে চলছে। তাই বিজেপি হিংসায় জ্বলছে, আর লুচির মতো ফুলছে।

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় টাকা বন্ধ করা নিয়ে কেন্দ্র সরকারকে আরো একবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসানসোলের সভা থেকে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, যদি উত্তর প্রদেশে উত্তর প্রদেশ বাড়ি হতে পারে, রাজস্থানে রাজস্থান বাড়ি হতে পারে, তাহলে বাংলায় হবে না কেন? আসল কথা হলো ওরা সব জায়গায় পিএমের ছবি লাগাতে চায়। লাগাক কে মানা করেছে। এইভাবে ছবি লাগাতে লাগাতে একদিন ছবি হয়ে যাবে বিজেপি। সাইনবোর্ড হয়ে যাবে। তখন কি হবে?

Leave a Reply