PANDESWAR-ANDAL

পান্ডবেশ্বরের বিস্ফোরণে চারটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত, NIA তদন্ত দাবি বিজেপির, ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে সন্দেহ বিধায়কের

বেঙ্গল মিরর, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত ও রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়, আসানসোল : পাণ্ডবেশ্বরের পুরনো শ্মশান এলাকায় বোমা বিস্ফোরণে চারটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে এলাকা ঘিরে ফেলে। ওই জায়গায় কাউকে যেতে দেওয়া হয়নি। এই প্রসঙ্গে রবিবার প্রাক্তন আসানসোল মেয়র, প্রাক্তন পাণ্ডবেশ্বর বিধায়ক তথা বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি তাঁর আবাসিক অফিসে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন। জিতেন্দ্র তিওয়ারি অভিযোগ করেন যে পাণ্ডবেশ্বরের পুরানো শ্মশানের কাছে বোমা বিস্ফোরণে চারটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে নির্মিত ৪টি বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন অন্তত ১০০ টিরও বেশি বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে। তবেই এত বড় ক্ষতি হতে পারে। এ বিষয়টিও চাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এসময় তিনি ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের দিকে আঙুল তুলে বলেন, উন্নয়ন কাজ না করে এভাবে অস্ত্র মজুত করছেন। তারা জমা করা উচিত কিনা তা নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত বিজেপি কর্মীদের উপর রাজনৈতিক আক্রমণ অব্যাহত ছিল তারা নিরব ছিলেন। কিন্তু এখন বিষয়টি রাষ্ট্র ও দেশের নিরাপত্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এখন তারা চুপ থাকবেন না।

তিনি বলেন যে পাণ্ডবেশ্বরে যা ঘটেছে তা দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে জানানো হয়েছে এবং তারা এই পুরো ঘটনার এনআইএ দ্বারা তদন্তের দাবি করেছেন। জিতেন্দ্র তিওয়ারি জানিয়েছেন, পুরো বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তার কাছে অভিযোগও করা হয়েছে। তিনি বলেন, এনআইএ তদন্ত করলে প্রকৃত দোষীরা জেলে যাবে। দুর্গাপুরে যখন মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠক চলছে, তা নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি। একই দিনে সকালে দুর্গাপুর মহকুমার পাণ্ডবেশ্বরে কীভাবে এমন বোমা হামলা হতে পারে। এতেই বোঝা যায় নিরাপত্তার ব্যাপারে প্রশাসন কতটা উদাসীন। জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন যে একটি বিরোধী দলের হওয়ায় তিনি বিষয়টির বিরোধিতা করেন এবং তিনি তৃণমূল নেতাদের কাছে বিষয়টির বিরোধিতা করতে এবং একটি সুষ্ঠু তদন্ত করার জন্য আবেদন করেন।

তিনি বলেন, এসব অসামাজিক দুষ্কৃতীদের ক্ষমতাসীন দলকে ব্যক্তিগত স্বার্থে সমর্থন করলেও শেষ পর্যন্ত এটি তৃণমূল দলের জন্যও বিপজ্জনক প্রমাণিত হবে কারণ এই দুষ্কৃতীরা রাজ্য এবং দেশের জন্য বিপজ্জনক। শিল্পাঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কিছু তীক্ষ্ণ প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। এই সাংবাদিক সম্মেলনে জিতেন্দ্র তিওয়ারি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অজিত রানা, পিনাকী মিশ্র, সন্তু হালদার, সুজন সূত্রধর, সুদীপ সিং প্রমুখ।

জিতেন্দ্র তেওয়ারির অভিযোগের জবাবে পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, আমি গত দুদিন ধরে খুব ব্যস্ত ছিলাম। আসানসোলে মুখ্যমন্ত্রীর জনসভা ছিল। এরপর দুর্গাপুরে প্রশাসনিক বৈঠক। এমন সময় জানতে পারি, পান্ডবেশ্বরে পুরনো শ্মশানের চারটি বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এরজন্য বোমা বিস্ফোরণের কারণ জানাচ্ছেন কয়েকজন। তিনি বলেন, অভিযোগ উঠলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু যেদিন দুর্গাপুরে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠক , সেদিন কেন এমন ঘটনা তা নিয়ে কিছুটা হলেও বিস্ময় প্রকাশ করেন নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, তার আগের রাতে পাণ্ডবেশ্বরে বোমা বিস্ফোরণের কথা রয়েছে। এমনকি এনআইএকে চিঠি লেখা হয় ও সকালে সাংবাদিক সম্মেলনও করা হয়। এর পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে সন্দেহ করেন তিনি।

পাশাপাশি তিনি এসব অভিযোগকারী জনগণকে সতর্ক করে বলেন, পাণ্ডবেশ্বর একটি শান্তিপ্রিয় এলাকা। কেউ যদি তাতে বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করে তাহলে পাণ্ডবেশ্বরবাসী তা বরদাস্ত করবে না। তবে তিনি বলেন, যদি সত্যিই কোনো ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে গণমাধ্যমের পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্তের জন্য অনুরোধ করছি। এতে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

একইসঙ্গে এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ডিসিপি অভিষেক গুপ্তা বলেন, এখানে যে চারটি বাড়ি ভেঙেছে , সেগুলো ভেঙে পড়েছে। খুব জীর্ণ অবস্থা ছিলো। তিনি বলেন, তিনি যা দেখছেন, তাতে মনে হচ্ছে হঠাৎ করে ভেঙে পড়েছে। তিনি বলেন, অভিযোগ পাওয়া গেছে। ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। যাদের ফরেনসিক পরীক্ষার পরই জানা যাবে হঠাৎ করে এভাবে বাড়ি ভেঙে পড়ার কারণ। এইসব বাড়িতে কেউ থাকে না। এ কারণে তাদের এভাবে পড়ে যাওয়ার প্রকৃত কারণ কেউ বলতে পারছে না। তবে এ ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। জানতে চাইলে কেউ কেউ বলছেন বোমা বিস্ফোরণের মতো কিছু শব্দ শুনেছেন। তিনি বলেন, এটি তদন্তের বিষয়। কারণ কেউ কেউ বলছেন, তারা বাড়ি ভেঙে পড়ার শব্দ শুনেছেন। পুরো বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *