ASANSOLRANIGANJ-JAMURIA

ইসিএলের চারটি খনি সহ কুড়িটি কয়লা খনি বেসরকারী সংস্থার কাছে বিক্রির অনুমোদন দিলো কয়লা মন্ত্রক, ৩৮ টি ভূগর্ভস্থ খনি বন্ধের মুখে

কোল ইন্ডিয়া থেকে দুই সহায়ক সংস্থাকে আলাদা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কয়লা মন্ত্রক, ভারতীয় মজদুর সংঘ সহ সর্বভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন যৌথ ভাবে প্রতিবাদে নেমেছে

বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য, আসানসোল। (Coal India News) ইস্টার্ন কোয়ালফিল্ড লিমিটেডে এই মুহূর্তে উৎপাদন বন্ধ থাকা ৪ টি কয়লা খনি সহ কোল ইন্ডিয়ার কুড়িটি কয়লা খনিকে বেসরকারী সংস্থার হাতে সম্পূর্ণ ভাবে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল কয়লা মন্ত্রক। কয়লা দপ্তরের চলতি আর্থিক বছরের অ্যাকশন প্ল্যান এই সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছে। জানা গেছে ইসিএলের চিনাকুড়ি, ময়রা, মধুজোর এবং শ্যামপুর সহ চারটি কয়লা খনি কে অন্য আরো কুড়িটি খনির সাথে বেসরকারি সংস্থাগুলোর হাতে তুলে দেওয়া হবে ।ওই অ্যাকশন প্ল্যান আরো বলা হয়েছে কোল ইন্ডিয়ার সহায়ক সংস্থা সি এম পি ডি আই এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ভারত কোকিং কোল লিমিটেডের ২৫ শতাংশ শেয়ার হস্তান্তর করার জন্য ইতিমধ্যেই মন্ত্রী পর্যায়ের এবং কোল বোর্ড পর্যায়ে অনুমোদন মিলেছে।

coal India News

এই বিষয় ইতিমধ্যেই চারটি স্বীকৃত ট্রেড ইউনিয়ন ভারতীয় মজদুর সংঘ ,এ আই টি ইউ সি ,সিটু এবং হিন্দু মজদুর সভার পক্ষ থেকে সম্প্রতি যৌথ বিবৃতি জারি করে ভারত সরকারকে জানানো হয়েছে তারা কিছুতেই এই সিদ্ধান্তগুলি মানবেন না। শুধু তাই নয় এই মুহূর্তে সারা দেশের কয়লা খনির শ্রমিকদের একাদশ বেতন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা চলছে। এর মাঝখানে এই ধরনের সিদ্ধান্তর তারা তীব্র বিরোধিতা করছেন। কোনও অবস্থাতেই কোল ইন্ডিয়া থেকে বি সি সি এল এবং সিএমপি ডি আই কে আলাদা করার সিদ্ধান্ত তারা মানবেন না।


একইভাবে এসব নেতাদের আশঙ্কা এরপরেই ইসিএলের যেহেতু ভূগর্ভস্থ আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত খনির সংখ্যা বেশি ও পরপর দু’বছর কিছুটা আর্থিক ক্ষতি বেড়ে যাওয়ায় কোল ইন্ডিয়া থেকে ই সি এল কেও আলাদা করে নেওয়ার দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে কয়লা মন্ত্রক।
ইসিএলের কমিটি সদস্য ও সিটু নেতা সুজিত ভট্টাচার্য বলেন এই অ্যাকশন প্ল্যান এর মধ্যে দিয়ে গত ৩১ শে মে ভারত সরকার তা প্রকাশ করে বুঝিয়ে দিয়েছে কিভাবে তারা রাষ্ট্রায়ত্ত্য কয়লা খনি গুলিকে ধীরে ধীরে বড় বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেবে এবং তারাই উৎপাদন করবে, তারাই লাভও না দেখিয়ে সরকারকে কোন অর্থ দেবে না।

আর খনির শ্রমিকরা ধীরে ধীরে ক্রীতদাসে পরিণত হবে ।তিনি বলেন গত বছরের ১২ ই আগস্ট কোল ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে অত্যন্ত গোপনে একটি চিঠি দিয়ে ইসিএলের ৩৮ টি ভূগর্ভস্থ কয়লা খনির যাবতীয় তথ্য তারা দিতে বলেছিলেন এবং সেই ৩৮ টি খনি কে ইসিএলের পক্ষ থেকে পরিসংখ্যান দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যে এখানে উৎপাদন করতে যে খরচ হয় বেতন দিতেই তার চেয়ে অনেক বেশি খরচ হয়। লিখিতভাবে না বললেও গোপনে এই ৩৮ টি কয়লাখনি কে এই কারণেই বন্ধ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি ইসিএলের ট্রেড ইউনিয়নের সাথে সংস্থার চেয়ারম্যানের যে বৈঠক হয় সেই বৈঠকেও আমি এই নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ করেছি এবং আমরা বলেছি ।এগুলো বন্ধ না করে আমাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সেখানে বিনিয়োগ করে যদি কিছু যন্ত্রপাতি আনা হয় এবং পরিকাঠামোর সামান্য উন্নয়ন করা হয় তাহলে বিপুল পরিমাণ যে কয়লা খনিতে আছে তা তোলা সম্ভব হবে। আসলে কয়লা মন্ত্রক চাইছে এগুলো বন্ধ করে বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিতে। এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আজকেও আমরা ইসিএলের সোদপুর এরিয়ার একাধিক কয়লা খনিতে আন্দোলন করেছি এবং আমাদের এই আন্দোলন চলবে।

ইসিএলের ট্রেড ইউনিয়ন গুলির জয়েন্ট একশন কমিটির নেতা এবং এ আই টি ইউ সির সর্বভারতীয় খনি শ্রমিক নেতা রামচন্দ্র সিং বলেন একদিকে ইসিএলের চারটি কয়লাখনি নিলাম করা, অন্যদিকে ৩৮ টি খনিকে বন্ধ করার যে চক্রান্ত এবং ইসিএল কে কোল ইন্ডিয়া থেকে আলাদা করার যে পরিকল্পনা তার বিরুদ্ধে যত বড় আন্দোলন করতে হয় আমরা তা করব। এই নিয়ে একাধিকবার আমরা সব ইউনিয়ন যৌথভাবে বৈঠক করেছি। অন্যদিকে ভারতীয় মজদুর সংঘের সর্বভারতীয় খনি শ্রমিক নেতা কে লছমান রেড্ডি এইসব ইস্যুতে যৌথ প্রতিবাদে স্বাক্ষর করে সামিল হয়েছেন ।

অন্যদিকে এই সংগঠনের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বসন্ত কুমার রায় বলেন আমাদের কাছে খবর আছে ২০২৩ এর মধ্যে ই সি এল সহ কোল ইন্ডিয়ার ১৪৮ টি ভূগর্ভস্থ ক্ষতিগ্রস্থ কয়লা খনি বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হবে। এবং কেবলমাত্র যে ৬০/৬৫টি খোলামুখ লাভবান খনি আছে সেগুলোই কোল ইন্ডিয়া চালাবে । সেক্ষেত্রে স্থায়ী কর্মীসংখ্যা দু লাখ পঁচাত্তর হাজার থেকে নেমে একলাখে চলে আসবে ।মূল উদ্দেশ্য পেনশন বা বেতন দেয়ার ক্ষেত্রে সরকার সমর্থক হচ্ছেন না।

Leave a Reply