ASANSOL

আসানসোল সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে ৮ ইসিএল কর্তার জামিন নাকচ

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ কয়লা পাচার মামলায় ধৃত ইসিএলের প্রাক্তন ও বর্তমান জিএম বা জেনারেল ম্যানেজার সহ আটজনের সোমবার জামিন নাকচ হলো আসানসোল সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে। দু’পক্ষের আইনজীবীর সওয়াল-জবাব শেষে বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী তাদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। আগামী ১ আগষ্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে বলে বিচারক নির্দেশ দিয়েছেন। এদিন সিবিআইয়ের তরফে আইনজীবী রাকেশ কুমার এই আটজনকে নতুন করে আর হেফাজতে নেওয়ার জন্য আদালতে কোন আবেদন করেননি। তবে তিনি ধৃতদের জামিন দেওয়ার আবেদনের বিরোধিতা করেন। এদিন সিবিআইয়ের তরফে জেল হেফাজতে থাকার সময় মামলার তদন্তের জন্য ধৃতদের জেরা করার আবেদন করা হয়েছিলো। বিচারক সেই আবেদন মঞ্জুর করেছেন।


সিবিআই কয়লা পাচারের এই মামলায় গত ১৩ জুলাই বুধবার যে সাতজনকে গ্রেফতার করেছিল তারা হলেন ইসিএলের প্রাক্তন জেনারেল ম্যানেজার অভিজিৎ মল্লিক, সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, তন্ময় দাস, বর্তমান জেনারেল ম্যানেজার এসসি মৈত্র এবং মুকেশ কুমার। এছাড়া রয়েছেন দুই নিরাপত্তা আধিকারিক দেবাশীষ মুখোপাধ্যায় ও রিংকু বেহেরা। সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয় গত শুক্রবার রাতে। শনিবার থেকে তিনি তিনদিনের সিবিআই হেফাজত ছিলেন। বাকি সাতজন গত বৃহস্পতিবার থেকে পাঁচ দিনের জন্য সিবিআই হেফাজতে ছিলেন।
এদিন সকালে কলকাতার নিজাম প্যালেস থেকে আটজনকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপে আসানসোলের সিবিআই বিশেষ আদালতে নিয়ে আসা হয়।


সিবিআইয়ের আইনজীবী এদিন আদালতে সওয়াল করে বলেন, ইসিএলের এই আধিকারিকরা কয়লা পাচার মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত অনুপ মাঝি ওরফে লালার সঙ্গে সরাসরি যোগ ছিলো। তাদের মধ্যে মোটা অংকের টাকাও লেনদেন হয়েছে। তিনি আরো বলেন, লালার বাড়িতে তল্লাশি পাওয়া ডায়েরিতে চিরকুটের মতো এমন কিছু পাওয়া গেছে, , যার মাধ্যমে সেই টাকা নেওয়া হয়েছে লালার এজেন্ট মারফত। সেই চিরকুটে বিশেষ কিছু সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে। সেইসব চিরকুটের এইসব চিহ্নের রহস্য ( কোড/ ডিকোড) বার করা হয়েছে। আরো বার করার চেষ্টা করা হচ্ছে । এদের জামিন দেওয়া হলে তারা পালিয়ে যেতে পারে বা সাক্ষ্যকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবেন।
যদিও গ্রেফতার হওয়া আটজনের আইনজীবীরা সিবিআইয়ের এই দাবি, মানতে চাননি। তারা এজলাসে পাল্টা জবাব দিয়েছেন।

সুশান্ত বন্দোপাধ্যায় সহ পাঁচ ধৃতের আইনজীবী আশীষ মুখোপাধ্যায় বলেন, আমার মক্কেলদের পাঁচ দিন হেফাজতে নিয়ে জেরা করে কি পাওয়া গেছে, তা সিবিআই বলতে পারে নি। আর লালার কাছ থেকে এজেন্টের মাধ্যমে চিরকুট দিয়ে টাকা নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। চিরকুট দিয়ে কি কোন প্রমাণিত হয়? অথচ যাদের মাধ্যমে টাকা নেওয়া হয়েছে তাদের কাউকেই গ্রেফতার করা যায় নি। তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে বাইরে। ধৃতরা কেউ পালাবে না। সবাই আসানসোলে থাকেন। অনেকে তো চাকরিও করেন না। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের আইনজীবী উদয়চাঁদ মুখোপাধ্যায় ও দুলাল ভট্টাচার্য সওয়াল করে বলেন, সিবিআই মক্কেলের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার হওয়ার পরিমাণ একেক সময় এক এক রকম বলছে। তার কোন সঠিক তথ্যও নেই। আমাদের মক্কেল তার ভাইঝির বিয়ের জন্য টাকা ধার নিয়েছিলেন। তার কাগজ রয়েছে। আদালত চাইলে তা জমা দেওয়া হবে।


অন্যদিকে, তন্ময় দাসের আইনজীবী আশীষ কুমার এদিনও সওয়াল করে বলেন, মক্কেল পদে থাকার সময় বেআইনি কয়লা তোলা নিয়ে একাধিক চিঠি দিয়েছেন সব জায়গায়। কিন্তু কোন পদক্ষেপ কেউ নেয়নি। আটজনেরই আইনজীবী জামিন দেওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী সেই আবেদন নাকচ করেন।
এদিন, ধৃত আটজনেরই পরিবারের সদস্যরা আদালতে হাজির ছিলেন। তারা বলেন, সবাইকে ফাঁসানো হয়েছে। আইনী লড়াই চালিয়ে যাবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *