বালুরঘাট জেলা আদালতের আইনজীবী কালীদাস চক্রবর্তীর সদা হাস্যময় মুখ মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় ভেসে থাকবে আজীবন
মৃত্যুর পরে কালীদাস চক্রবর্তীর পুত্র ও হাইকোর্টের আইনজীবী কল্যান কুমার চক্রবর্তী জানালেন কিছু অজানা তথ্য
বেঙ্গল মিরর, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত : গত রবিবার ১৮ ই জুলাই বার্ধক্য জনিত কারণেবালুরঘাট আদালতের আইনজীবী কালীদাস চক্রবর্তী প্রয়াত হয়েছেন । মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। তার মৃত্যুতে বালুরঘাট জেলা আদালতের এর আইনজীবী ও কর্মীরা কর্মবিরতি পালন করেন। ১৯৬৪ সালে বালুরঘাট সান্ধ্য কমার্স কলেজের সূচনা । তিনি ছিলেন কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্র । রেগুলার পড়ুয়াদের সাথে অফিস কাছারিতে কর্মরত কিছু মানুষও ভর্তি হয়ে ছিলেন রাত্রিকালীন কলেজে । বাকু চ্যাটার্জী , অবিনাশ দত্ত , নরেশ বসু , সাচ্চা চ্যাটার্জী , গৌরীশঙ্কর অধিকারীর মতো আরো অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব তাঁর সহপাঠী ছিলেন। তাঁর স্নেহশীল ব্যবহারের সৌজন্যে সবার প্রিয়পাত্র ছিলেন তিনি । তাঁর মুখের মিষ্টি হাসি ছিল তার সম্বল ।
২০২১ সালে করোনার মারণ কালেও সে হাসি মুছে যায়নি । রাস্তাঘাটে দাঁড়িয়ে হাসি মুখে কুশল বিনিময় করতেন পরিচিত সবার সঙ্গেই। কালীদাস চক্রবর্তী ১৯৩৮ সালে ঢাকার বিক্রমপুরে জন্ম গ্রহণ করেন । তাঁর বাবা ছিলেন বীরেশ্বর চক্রবর্তী , তিনিও বালুরঘাট আদালতের সাথে যুক্ত ছিলেন । কলকাতার আশুতোষ কলেজ থেকে তিনি আই এ পাশ করার পরে বালুরঘাট আদালতে প্রেসকারের পদে যোগ দেন । পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ থাকায় রাতের কমার্স কলেজ চালু হতেই বি কম ক্লাসে ভর্তি হয়ে যান । এরপরে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন ।
২০২০ সাল পর্যন্ত বালুরঘাট ও বুনিয়াদপুর আদালতে কাজ চালিয়ে গিয়েছেন তিনি । বালুরঘাটের যে পাড়ায় তাঁর বাড়ি এখন সেই স্থানকে রথতলা বলা হলেও সাবেক নাম ছিল ফৌজদারি পাড়া । ফৌজদারি পাড়ার বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজে ছোট বেলা থেকেই যুক্ত ছিলেন তিনি । পাশাপাশি ছোটদের উৎসাহিত করে পাড়ার সরস্বতী পুজার সুচনা করে ছিলন। খেলাধুলার প্রতিও তার যথেষ্ট উৎসাহ ছিল ।
এই ব্যাপারে তার পুত্র কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী কল্যান কুমার চক্রবর্তী বলেন , বাবার বন্ধু ও লোকমুখে শোনা ফ্রেন্ডস ইউনিয়ন ক্লাব একসময় ছিল ফুটবলের বিখ্যাত নাম । একদিকে টাউন ক্লাব এবং অন্যদিকে ফ্রেন্ডস ইউনিয়নের ডার্বি নিয়ে রেষারেষি কম ছিল না । সেই ফ্রেন্ডস ইউনিয়ন ক্লাবের গোলপোস্টে নীচে দাঁড়িয়ে পড়তেন তিনি । লম্বা দোহারা চেহারায় ভরসা দিতেন ক্লাবকে । জমিজমা সংক্রান্ত মামলাতেই দক্ষতা অর্জন করেন । আর এই জমিজমা সংক্রান্ত মামলার দীর্ঘসূত্রতা সর্বজন বিদিত । ফলে গরীব মানুষদের প্রায়শই বঞ্চনার শিকার হতে হয় । সেক্ষেত্রে আইনজীবী কালীদাস চক্রবর্তী মক্কেলের প্রতি সর্বদা সহানুভূতিশীল থাকতেন ।
আইনের ব্যবসায় যুক্ত থাকলেও তিনি ছিলেন অজাতশত্রু । মানবিক ও সামাজিক কল্যাণকর কাজে যুক্ত থেকে আর্ত মানুষের সেবা করে গিয়েছেন সারা জীবন । মৃত্যু কালে তিনি রেখে গেছেন পুত্র কল্যাণ ও কন্যা কাকলীকে । পিতার কর্মধারা অনুসরণ করে পুত্র কল্যাণ চক্রবর্তী বর্তমানে কলকাতা উচ্চ আদালতের নামী আইনজীবী ও সিনিয়ার কাউন্সেল । বালুরঘাট থেকে দূরে চলে গেলেও কল্যাণ জেলার মানুষকে ভুলে যাননি তিনি । জেলার মানুষের প্রয়োজনে পাশে থেকে পায়শই আইনি পরামর্শ দিয়ে চলেছেন। আর দেখা হবে না কালীদা তোমার সাথে । জাগতিক নিয়মে কালীদাস চক্রবর্তীর অমলিন হাসি আর বাস্তবে ভেসে উঠবে না হয়ত কিন্তু মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় সদা হাস্যময় থাকবেন তিনি।