ASANSOL

নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পরিত্যক্ত পাথর খাদানে তলিয়ে গেল বোলেরো সহ চালক

আজ উদ্ধার করা হল মৃতদেহ, কাল কয়েক ঘন্টার পর উদ্ধার হয়েছিল বাহন

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্যঃ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার ধারে পরিত্যক্ত পাথর খাদানে পড়ে জলে তলিয়ে গেল বোলেরো গাড়ি সহ চালক। রাস্তার ধারে রয়েছে প্রায় ১২০ ফুট গভীর এই পরিত্যক্ত পাথর খাদান। জল জমা রয়েছে সেই খাদানে। সেই খাদানেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বোলেরো গাড়ি সহ জলের নিচে তলিয়ে গেছে চালক সুনীল হাঁসদা। বছর ৩১ এর সুনীলের বাড়ি আসানসোল উত্তর থানার আসানসোল পুরনিগমের ১৫ নং ওয়ার্ডের কালিধাওড়ায়। রবিবার রাত আটটা নাগাদ আসানসোল উত্তর থানার মনোহরবহালের বড়পুকুরিয়া এলাকায় ঘটেছে এই ঘটনা। রবিবার রাতের এই ঘটনার খবর সোমবার সকালে জানাজানি হতেই গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েন। আশপাশের কয়েকশো মানুষ এলাকায় এসে ভিড় জমান।

সঙ্গে ছিলেন সুনীল হাঁসদার পরিবারের সদস্যরাও। ছিলেন ১৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শ্যাম সোরেন। আসেন আরো এক কাউন্সিলর তথা তৃনমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি উৎপল সিনহা। খবর দেওয়া হলে ঘটনাস্থলে আসে আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ। গাড়ি যে ঐ খাদানের জলেই আছে, তা নিশ্চিত হওয়ার পরে ডেকে আনা হয় পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসনের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের বিশেষ উদ্ধারকারী দলকে। জলের মধ্যে ভারী লোহার বস্তুর সঙ্গে চুম্বক লাগিয়ে গাড়ির খোঁজ শুরু হয়। বেশ কয়েক ঘন্টা চেষ্টার পরে বোঝা যায়, জলের মধ্যেই রয়েছে ঐ গাড়ি। এরপর বিকেল পাঁচটা নাগাদ ক্রেন এনে পাথর খাদানের জল থেকে তোলা হয় গাড়িটিকে। যদিও ঐ গাড়ির চালকের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। তার খোঁজে জলে তল্লাশি চলছে।


রবিবার রাত পৌনে আটটা নাগাদ গাড়ি নিয়ে কালিধাওড়ার বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিলো সুনীল হাঁসদা। সে কেন্দ্রীয় সংস্থা সিএমপিডিআইয়ের গাড়ি চালাতো। তার দাদা শুক্লা হাঁসদা এদিন বলেন, রবিবার রাত পৌনে আটটা নাগাদ ভাইয়ের কাছে ফোন আসে। সে আসানসোল স্টেশনে এক আধিকারিককে আনতে যাচ্ছি বলে বেরিয়ে যায় । রাতে তখন বৃষ্টি পড়ছিল। বৃষ্টির মধ্যেই বেরিয়ে পড়েন স্টেশন যাওয়ার জন্য। কিন্তু সে স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছাননি। মাঝপথেই নিখোঁজ হয়ে যায়। রাতে খোঁজাখুঁজি করেও তার হদিস মেলেনি। বাড়ির লোকেরা তার মোবাইলে ফোন করলে দেখা যায় সেটি বন্ধ রয়েছে।


সোমবার সকালে পরিবারের সদস্যরা তাকে খুঁজতে বেরোন। তখন তারা কালিধাওড়া থেকে আসানসোলে যাওয়ার মেন রাস্তায় মনোহরবহালের বড়পুকুরিয়ায় আসেন। সেখানে তারা লক্ষ্য করেন রাস্তার পাশে পাথর খাদান সংলগ্ন ঐ এলাকায় সিমেন্টের ডিভাইডার ভাঙ্গা রয়েছে। পরিত্যক্ত খাদানের জলে ভাসছে গাড়ির লগবুক। তখনই বোঝা যায় গাড়িটি গতকাল রাতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পরিত্যক্ত পাথর খাদানে তলিয়ে গেছে। ঘটনার খবর পেয়ে আসে উত্তর থানার পুলিশ। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে খবর দেওয়া হয়। উদ্ধারের কাজ শুরু হয়। স্থানীয় বাসিন্দারারা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, এই এলাকায় অনেকগুলি পরিত্যক্ত খাদান রয়েছে। যেগুলি জলে ভর্তি। রাস্তার ধারে সেই সমস্ত খাদান। কিন্তু ফেন্সিং বা গার্ড নেই। ফলে প্রায় দিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। তারা দাবি করেন, পুলিশ ও প্রশাসন এখানের পরিত্যক্ত খাদানগুলি নিয়ে কোন ব্যবস্থা নিক।


কাউন্সিলর শ্যাম সোরেন বলেন, বিকেলের দিকে গাড়ি উদ্ধার করা হলেও, চালককে পাওয়া যায়নি। তাকে উদ্ধার করতে পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলছি। পুলিশ জানায়, তল্লাশির পর গাড়িটি উদ্ধার করা গেলেও এখনো খোঁজ মেলেনি সুনীল হাঁসদার। আজ সকালে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

Leave a Reply