বিয়ের দেড় বছরের মধ্যে শ্বশুরবাড়ি থেকে গৃহবধূর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার, খুনের অভিযোগ বাবার, ধৃত স্বামী
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ বিয়ের মাত্র দেড় বছরের মধ্যে শ্বশুর বাড়ি থেকে সিলিং ফ্যানে গলায় দড়ি দেওয়া ঝুলন্ত অবস্থায় এক গৃহবধূ মৃতদেহ উদ্ধার করা হলো। বৃহস্পতিবারের এই ঘটনায় আসানসোলের কুলটি থানার মিঠানি গ্রামে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। মৃত গৃহবধূর নাম দিশা পাত্র ( ২৫)। মৃতার বাবা বীরভূমের পাইকর থানার পাইকর গ্রামের বাসিন্দা অসিত পালুধি বৃহস্পতিবার রাতেই কুলটি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে বলেন, মেয়েকে জামাই সরোজ পাত্র, শাশুড়ি মনিতা পাত্র, বিবাহিতা ননদ মৌমিতা চট্টোপাধ্যায় ও ননদাই অর্পণ চট্টোপাধ্যায় অত্যাচার করতো। তারাই মেয়েকে গলা টিপে খুন করে ঘরের সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে দিয়েছে। পুলিশ সেই অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর করেছে। স্বামীকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও, বাকি তিনজন ঘটনার পর থেকেই পলাতক। ধৃতদের বিরুদ্ধে পুলিশ ভারতীয় দন্ডবিধির ৪৯৮/এ, ৩০২ ও ৩৪ নং ধারায় মামলা দায়ের করেছে।
ধৃত স্বামী সরোজ পাত্রকে শুক্রবার সকালে আসানসোল আদালতে তোলা হলে বিচারক তার জামিন নাকচ করে ৫ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। এদিন সকালে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ম্যাজিস্ট্রেটের রিপোর্টের ভিত্তিতে গৃহবধূর মৃতদেহর ময়নাতদন্ত হয়।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ৮ মার্চ বীরভূমের পাইকরের বাসিন্দা দিশা পালুধির সঙ্গে বিয়ে হয় কুলটি থানার মিঠানি গ্রামের বাসিন্দা ইসিএলের সোদপুর ওয়ার্কসপের কর্মী সরোজ পাত্রর। বিয়ের সময় পন হিসাবে দিশার বাপের বাড়ি থেকে নগদ সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা, ১২ ভরি সোনার গয়না সহ বিভিন্ন জিনিস দেওয়া হয়।
এদিন দিশা পাত্রর বাবা অভিযোগ করে বলেন, বিয়ের মাস কয়েক পর থেকেই জামাই, শাশুড়ি, ননদ ও ননদাই মেয়ের উপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করতো। এমনকি বাপের বাড়ি থেকে আরো টাকা আনতে বলতো। মেয়ে কিছু না বললেও, বিভিন্ন সূত্র মারফত আমি তা জানতে পারি। জেনেছিলাম। মেয়েকে দিয়ে সব কাজ করানো। বিয়ের পর একবার মাত্র মেয়ে বাপের বাড়ি যায়। তিনি আরো বলেন, মেয়েকে ওরা আসতে দিতোনা। বৃহস্পতিবার মেয়ের এক মামা শ্বশুর বৃহস্পতিবার সকালের দিকে ফোন করে আমাকে বলে মেয়ের কিছু একটা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে আমি আমার এক আত্মীয়কে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে যেতে বলি। তিনি সেখানে আসেন। জানতে পারেন মেয়েকে গলায় দড়ি দেওয়া ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
তাকে পুলিশ আসার আগেই জামাই ও বাড়ির লোকেরা আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে চলে আসে। সেখানে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, মেয়ে আত্মহত্যা করেনি। তাকে জামাই সহ চারজন মিলে খুন করে ঝুলিয়ে দিয়েছে। আমি চাই পুলিশ চারজনকেই গ্রেফতার করে কঠিন সাজা দেওয়ার ব্যবস্থা করুক।
পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় একটি এফআইআর করা হয়েছে। স্বামীকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়ে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। বাকি তিনজন পলাতক।