ASANSOL

গরু পাচার মামলা : বন্ধ খামে বিচারককে তথ্য জমা তদন্তকারী অফিসারের

জোর সওয়াল-জবাব, প্রভাবশালী তত্ত্বে জামিন খারিজ

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ আবার সেই প্রভাবশালী । আর তাকেই নিজেদের অস্ত্র করলো গরু পাচার মামলায় তদন্তকারী কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। সেই তত্ত্বেই শনিবার আসানসোলের সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে জামিন খারিজ হয়ে গেলো গ্রেফতার হওয়া বীরভূমের তৃনমুল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অনুব্রত মন্ডলের। এদিন বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী তার জামিন নাকচ করে চারদিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেন। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ২৪ আগষ্ট বলে এদিন বিচারক নির্দেশ দিয়েছেন।


এদিন ১০ দিন সিবিআই হেফাজত শেষে কলকাতার নিজাম প্যালেস থেকে ১০টি গাড়ির কনভয়ে দুপুর পৌনে একটা নাগাদ আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে নিয়ে আসা হয়। তার নিরাপত্তায় কনভয়ে ৫০ জনেরও বেশী কেন্দ্রীয় বাহিনী যেমন ছিলো, তেমনি এদিন আসানসোল আদালত চত্বরকে দূর্গে পরিনত করা হয়। আদালতের যে ভবনে সিবিআই এজলাস রয়েছে, সেখানে সব গেটে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। আইনজীবী, সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি ছাড়া কারোর প্রবেশাধিকার বলতে গেলে ছিলো না। রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি, রেফ ও কমব্যাট ফোর্স মোতায়েন করা হয়। করা হয়েছিলো ব্যারিকেড।


এদিন একটার সময় শুনানি শুরু হয়। নিয়ম মতো সিবিআইয়ের তরফে লিখিত ভাবে অনুব্রত মন্ডলকে আরো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারদিন হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করা হয়। প্রথমে অনুব্রত মন্ডলের আইনজীবী সন্দীপন গাঙ্গলি সওয়াল করতে গিয়ে নতুন করে চারদিনের হেফাজতে নেওয়ার বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, গত ১০ দিনে সিবিআইের তদন্তকারী অফিসার তাকে জেরা করে কি পেয়েছেন, তা কি আদালতে জানানো হয়েছে? বলা হচ্ছে, তিনি খুবই প্রভাবশালী। তাহলে তাকে যখন একটা নোটিশ দিয়ে বাড়ি থেকে তুলে ৫ ঘন্টা পরে গ্রেফতার দেখানো হয়। কেউ কি সিবিআইকে বাধা দিয়েছে? তিনি শারীরীক ভাবে অসুস্থ।

২০১১ সাল থেকে তার চিকিৎসা চলছে। বিখ্যাত চিকিৎসকরা তাকে দেখছেন। তার রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। সিবিআই তাকে যখন ডেকেছে, তাতে তিনি সহযোগীতা করেছেন। শারীরিক অবস্থার জন্য ডাকা হলেও, তিনি না গেলেও, সিবিআইকে বাড়িতে এসে বা ভার্চুয়াল জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য বলেছেন। কিন্তু সিবিআই বার বার শুধু নোটিশ পাঠিয়ে ডেকেছে। আইনজীবী আরো বলেন, যে রাইস মিলের কথা বলা হচ্ছে, তা তিনি শ্বশুরমশাইয়ের কাছ থেকে পেয়েছেন। আর যে টাকার কথা তদন্তকারী সংস্থা বলছে, তা তার প্রয়াত স্ত্রীর জীবনবিমা থেকে পাওয়া। আমার মক্কেলের এই মামলায় এফআইআরে নাম নেই। কোন চার্জশিটে তার নাম নেই। পাশাপাশি এই মামলায় প্রধান অভিযুক্ত সেই বিএসএফের কমান্ডান্ট্য সতীশ কুমার ৩২ দিনে জামিন পেয়েছে। তদন্তকারী সংস্থা যে সব অভিযোগের কথা বলছে, তা ধারণার উপরে ভিত্তি করে বলে শুনানিতে দাবি করেন আইনজীবী সন্দীপন গাঙ্গলি। অনুব্রত মন্ডলের আরো এক আইনজীবী অনির্বাণ গুহ ঠাকুরতা তাকে গ্রেফতার করার পদ্ধতি নিয়ে এদিন বিচারকের সামনে প্রশ্ন তোলেন। ৪১/এ ধারায় যে নোটিশ পাঠিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তা ঠিক নয়। এক্ষেত্রে নিয়ম মানা হয়নি। এই ধারায় নোটিশ পাঠিয়ে গ্রেফতার যে করা যায়না, তার উদাহরণ অনেক আছে। মক্কেলকে যে কোন শর্তে জামিন দেওয়ার আবেদন করেছি।


এরপর সিবিআইয়ের আইনজীবী কালিচরণ মিশ্র সওয়াল করতে উঠে বলেন, এই ব্যক্তি অনেক প্রভাবশালী। তার একটা সরকারি যোগ আছে। তিনি তদন্তে জেরা করার সময় কোন সহযোগিতা করছেন না। চুপ থাকছেন। বলতে গেলে জেরায় তিনি চরম অসহযোগিতা করছেন। এমনকি, তার মেয়েও তদন্তে সহযোগিতা করছেন না। এক্ষেত্রে যে অপরাধ হয়েছে, তা একার নয়। একটা চেন কাজ করেছে। তার মাথা বা হেড হলো এই অনুব্রত মন্ডল। এখানে এনামুল হক ও অনুব্রত মন্ডলের “মিডিয়েটার বা মধ্যস্থতাকারী” হলো সায়গল হোসেন। তাদেরকে জেরা করে আগেই অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। তাতে অনুব্রত মন্ডলের যোগসূত্র মিলেছে। তিনি আরো বলেন, ধৃতর শরীরের কথা যে বলা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। কমান্ড্য হাসপাতালে তার শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়েছে। তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। এছাড়াও গত ১০ দিনে তাকে জেরা করে ও বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি করে বেশ কিছু ” লিড বা সূত্র ” পাওয়া গেছে। সে সবকিছু ” ক্রস ইগজামিনেশন ” করতে হবে। তাই তাকে ৪ দিনের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। সেই সময় অনুব্রত মন্ডলের আইনজীবী সন্দীপন গাঙ্গলি আবার বলেন, তদন্তকারী সংস্থা বলছে, ১০ দিনে জেরায় সহযোগিতা করেন নি। তাহলে এই চারদিনে কি করবেন? তখন বিচারক বলেন, ১০ দিনে করেননি বলে, ৪ দিনে করবেন না, তা তো নাও হতে পারে।


সওয়াল-জবাবের সময় বিচারক সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসারের কাছে জানতে চান নতুন কি পাওয়া গেছে? তখন তদন্তকারী অফিসার একটি মুখ বন্ধ খাম তুলে দেন বিচারকের কাছে। জানা গেছে, তাতে অনুব্রত মন্ডলের এক পরিচিতর সম্পত্তির নথি রয়েছে।
শেষ পর্যন্ত বিচারক এক ঘন্টার সওয়াল-জবাব শেষে অনুব্রত মন্ডলের জামিন নাকচ করে চারদিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেন। এরপর বিকেল সোয়া তিনটে নাগাদ অনুব্রত মন্ডলকে সিবিআই আসানসোলের আদালত থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়।

Leave a Reply