সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারককে হুমকি চিঠি, গ্রেফতার আইনজীবী
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্যঃ গরু পাচার মামলায় ধৃত অনুব্রত মন্ডলকে জামিন দেওয়ার জন্য আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তীকে একটি হুমকি চিঠি দেওয়ার অভিযোগে সোমবার গ্রেফতার করা হলো পূর্ব বর্ধমান জেলা আদালতের এক আইনজীবীকে। বর্ধমানের বাসিন্দা ধৃত আইনজীবীর নাম সুদীপ্ত রায়।




এদিন তাকে আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ গোপন সূত্রে খবর পেয়ে মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে আসানসোল আদালতের বাইরে থেকে তাকে গ্রেফতার করে। এই প্রসঙ্গে আসানসোল দক্ষিণ থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জ কৌশিক কুন্ডু রাতে বলেন, ধৃতকে মঙ্গলবার আসানসোল আদালতে তোলা হবে। তাকে এই ঘটনায় আরো তদন্ত করতে পুলিশ আদালতে ১০ দিনের হেফাজত চেয়ে আবেদন করবে বলে জানা গেছে। সেই চিঠির প্রেরক হিসাবে নাম পাওয়া গেছিলো পূর্ব বর্ধমান আদালতের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের হেড ক্লার্ক বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়ের।
শুক্রবার সকালে আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশের সঙ্গে এসে আসানসোল জেলা আদালতে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ( সপ্তম) প্রান্তিক রঞ্জন বসুর কাছে গোপন জবানবন্দি দিয়েছিলো বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়। ১৬৪ নং ধারায় এই গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে। পরে বাপ্পা চট্টোপাধ্যায় বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তা সম্পুর্ণ মিথ্যে। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমি এমন কোন চিঠি কাউকে দিইনি। তার আরো দাবি, আমার সই জাল করা হয়েছে। স্ট্যাম্পও জাল। আমি পুলিশকে যা বলার বলেছি। এদিন গোপন জবানবন্দি দিলাম। পুলিশ তদন্ত করছে। তারা খুঁজে বার করুক। এর পেছনে কি রাজনৈতিক যড়যন্ত্র আছে? এর উত্তরে বাপ্পা না বলেন।
এই চিঠি কান্ডে আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ ও আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিডি বা গোয়েন্দা দপ্তর তদন্ত শুরু করে। বর্ধমানে গিয়ে দু দফায় বাপ্পাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তার সইয়ের নমুনাও পুলিশ সংগ্রহ করেছে। বিভিন্ন সূত্র ধরে পুলিশ তদন্ত করছে। জিজ্ঞাসাবাদে বাপ্পা পূর্ব বর্ধমানের এক আইনজীবীর নাম পুলিশকে জানিয়েছে। সে বলেছে , ঐ আইনজীবী তাকে এইভাবে চক্রান্ত ও যড়যন্ত্র করে ফাঁসিয়েছে।
প্রসঙ্গতঃ, গত ২৪ আগষ্ট বুধবার গরু পাচার মামলায় ১০ দিন সিবিআই হেফাজতে শেষে অনুব্রত মন্ডলের জামিনের শুনানি ছিলো।
তার ঠিক দুদিন আগে সোমবার আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী ডাক মারফত এই হুমকি চিঠি পান। সেই চিঠিতে অনুব্রত মন্ডলকে জামিন দেওয়া না হলে, বিচারকের পরিবারের সদস্যদের মাদক মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হয়েছিলো। চিঠিতে এই বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়ের নাম ও সই ছিলো। মঙ্গলবার বিচারক সেই চিঠির জেলা জজ সুনির্মল দত্তের মাধ্যমে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে পাঠান। এরপর আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ এই চিঠির তদন্ত শুরু করে। বুধবার সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে জামিনের শুনানি শুরু হওয়ার আগে, অনুব্রত মন্ডল নিজে বিচারকের কাছে এই চিঠির তদন্ত চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু বিচারক সেই আবেদন খারিজ করে দেন। তবে বুধবার অনুব্রত মন্ডল জামিন পাননি। তার ১৪ দিনের জেল হেফাজত হয়েছে।