ASANSOL

আসানসোল জেলেই দূর্গাপুজোয় থাকতে হবে অনুব্রত মন্ডলকে

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, দেব ভট্টাচার্য, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ গরু পাচার মামলায় জামিন হলো না অনুব্রত মন্ডলের। তাই বলা যেতে পারে যে, এই বছরের বাড়ির দূর্গাপুজোয় আর থাকা হচ্ছে না বীরভূমের তৃনমুল কংগ্রেসের জেলা সভাপতির। তাকে থাকবে হবে আসানসোলের জেলেই। তবে এদিন তার জামিনের জন্য যে কোন শর্তের পাশাপাশি বাড়িতে দূর্গাপুজো। তার মেয়ে বাড়িতে একা, তাই তাকে জামিন দেওয়া হোক।
এই কথা বলে “মানবিক কারণ বা হিউম্যান গ্রাউন্ডে ” অনুব্রত মন্ডলের জামিনের সওয়াল করেন তার দুই আইনজীবী সন্দীপন গাঙ্গুলি ও অনির্বান গুহ ঠাকুরতা।


সিবিআইয়ের আইনজীবী রাকেশ কুমার তার বিরোধিতা করেন। শেষ পর্যন্ত অনুব্রত মন্ডলের জামিন নাকচ করে বুধবার আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী জামিন নাকচ করে আবারও জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। আগামী ২৯ অক্টোবর তাকে আবার আসানসোলের সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে তোলা হবে। সাধারণ ভাবে ১৪ দিনের জেল হেফাজত হওয়ার কথা। কিন্তু দূর্গাপুজোর জন্য সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে আদালতে ছুটি পড়ে যাবে। তাই কোন শুনানি হবেনা। তবে নিয়ম মতো আগামী অক্টোবর মাসে দুটি দিন বিচারক তার নির্দেশে উল্লেখ করেছেন। সেই মতো ১৪ দিন পর পর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে শুনানি হবে এই মামলার। অনুব্রত মন্ডলকে তখন আদালতে পেশ করার প্রয়োজন নেই ।


এদিন সওয়াল-জবাবের মাঝে বিচারকের অনুমতি নিয়ে প্রায় ২০ মিনিট পর শৌচাগারে যায় অনুব্রত মন্ডল। ফের ফিরে আসেন এজলাসে।
অনুব্রত এজলাসের একদম পেছনের বেঞ্চে বসে ছিলেন। সিবিআই আইনজীবী রাকেশ কুমারের সঙ্গে এজলাসে ছিলেন গরু পাচার মামলার তদন্তকারী আধিকারিক সুশান্ত ভট্টাচার্য।
শুনানির শুরুতেই বিচারকের জামিনের আবেদন অনুব্রতর আইনজীবীরা। সেই সময় সিবিআইয়ের কাছে মামলার কেস ডায়েরি চান বিচারক।
অনুব্রত মন্ডলের আইনজীবী সন্দীপন গাঙ্গুলি বলেন, সবমিলিয়ে ৪২ দিন ধরে হেফাজতে রয়েছেন তিনি। এই মামলায় সাত জন গ্রেফতার হয়েছে। তার মধ্যে ৫ জন জামিনে রয়েছেন। তানিয়া সান্যাল ও বাদল কৃষ্ণ সান্যাল এনামুল হকের কাছ থেকে ৬ কোটি টাকা নিয়ে বিএসএফের কমান্ডেন্ট সতীশ কুমারকে দিয়েছিল। তারা ২ জনেই জামিনে মুক্ত। তাদের জামিনের বিরোধিতা করেনি সিবিআই।


রাশিদা বিবি ( এনামুল হকের স্ত্রী) চক্রান্তে জড়িত বলা হয়েছে। সেও জামিনে মুক্ত। আইনজীবী আরো বলেন, আনারুল শেখ এই গরু পাচার মামলায় জামিন পেয়েছেন। সিবিআই তারও বিরোধিতা করেনি। যাদের সরাসরি যুক্ত রয়েছেন বলা হয়েছে, তারা জামিন পেয়ে যান। কেউ ৩৩ দিনের মধ্যে, বা কেউ আবার আদালতে হাজির হয়েই।


অনুব্রতর অন্য আইনজীবী অনির্বাণ গুহ ঠাকুরতা, এই মামলার চার্জশিট উল্লেখ করে বিকাশ মিশ্র ও বিনয় মিশ্রের কথা বলেন। উঠে আসে আবদুল লতিফের নাম। সেই লতিফ এখন পলাতক।
সিবিআই তাদের তদন্তে পক্ষপাতিত্ব করেছে বলে সরাসরি অভিযোগ অনুব্রতর আইনজীবীর।
অনুব্রতর বিরুদ্ধে সিবিআই জানিয়েছে, আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি হীন সম্পত্তি করেছেন। তার সোর্স জানাননি অনুব্রত। সে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। যে প্রচুর সম্পত্তি করেছেন। তার পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ট দের প্রচুর সম্পত্তির উৎস সন্ধানের প্রয়োজন বলে জানিয়েছে সিবিআই। অনুব্রতকে বীরভূমে ঢুকতে না দিয়ে কলকাতায় নিজাম প্যালেসের আশপাশে থাকার শর্ত আরোপ করা হোক। একজন ব্যক্তি প্রভাবশালী বলে চিরকাল তাকে জেলের ভিতরে রাখা হবে, প্রশ্ন তোলেন আইনজীবী। অনুব্রত মণ্ডলের ৬৫ বছর বয়স। জেলের পরিস্থিতি খুব খারাপ। সেখানে এমন বয়স্ক অসুস্থ লোককে দীর্ঘদিন রাখার মত পরিবেশ নেই। জেলগুলিতে বন্দির সংখ্যা প্রচুর। তাই তাকে যে কোন শর্তে জামিন দেওয়া হোক বলে সওয়াল করেন তার দুই আইনজীবী।


পাল্টা জবাবে সিবিআই আইনজীবী রাকেশ কুমার অনুব্রতর জামিনের আবেদন খারিজ করে
আবার জেল হেফাজতে পাঠানো হোক বলে আবেদন করেন । তিনি বলেন, এখনো তদন্ত চলছে। ২ টি এনজিও র সঙ্গে অনুব্রত মণ্ডলের যোগ পাওয়া গেছে। ২০১৫ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ঐ এনজিও ২ টির প্রচুর সম্পত্তির হদিশ পাওয়া গেছে । পাশাপাশি সে যথেষ্ঠ প্রভাবশালী।


এদিন অনুব্রত মণ্ডলের জামিনের আবেদন নিয়ে সওয়াল জবাব প্রায় এক ঘন্টা ধরে চলে শুনানি।
আরো জানা গেছে, আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর গরু পাচার মামলায় আরো একটি সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করতে পারে সিবিআই। সেই চার্জশিটে নাম থাকতে পারে অনুব্রত মন্ডলের বলে সিবিআই সূত্রে খবর। বিচারকের নির্দেশের পরে পুলিশের ঘেরাটোপে আবারও অনুব্রতকে আদালত থেকে আসানসোলের বিশেষ সংশোধনাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
তবে জেল থেকে আদালতে আসা ও আদালত থেকে আবার জেলে ফিরে যাওয়ার সময় অনুব্রত মন্ডল সাংবাদিকদের কোন প্রশ্নের উত্তর দেননি। বেশ খোশমেজাজেই হাসিমুখে সাংবাদিকদের দেখেছেন।

Leave a Reply