আসানসোল গ্রামের প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো ৮ দূর্গাপুজো
করোনার চোখ রাঙানি এবার নেই, পুরনো রীতি মেনে ছন্দে ফিরছে
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ করোনা ২০২০ সালে চোখ রাঙানি ছিলো। সেই কারণেই ঐ বছর বলতে গেলে সব কিছুতেই কাটছাঁট করতে হয়েছিলো। এবার ২০২১ সালে অতোটা কড়াকড়ি না থাকলেও, করোনার কারণে কিছুটা হলেও বিধিনিষেধ ছিলো।
এবার আর তেমন কিছু নেই। তাই সব পুরনো রীতি ও আচার মেনে ২৮৮ তম বর্ষে আবার ছন্দে ফিরে আসতে চলেছে আসানসোল গ্রামের ৮টি দুর্গা পুজোয়। একসঙ্গে ৮ টি দুর্গাপুজোর নবপত্রিকা স্নান বা কলা বউ আনা থেকে দশমীর সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রা সবই হবে।
তবে প্রতিমা বিসর্জ্জনের আগে আসানসোল গ্রাম সংলগ্ন রামসায়ের ময়দানে আতসবাজির প্রদর্শন গত ২ বছর বন্ধ রাখা হয়েছিলো। এবার আবার তা করা হবে। এই আতশবাজির প্রদর্শনীর পরেই রামসায়ের পুকুরে একে একে ৮ দূর্গা প্রতিমার বিসর্জন করা হয়।আসানসোল গ্রামের এই পুজোয় সিঁদুরখেলা একটা ঐতিহ্য। এবারও তা হবে। তবে গত দুবছর আসানসোল গ্রামের পুজোয় বলি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো। এবার তা আবার হবে। ৮ টি পুজোর মধ্যে ২ টি পুজোয় ছাগ বলি হবে।
আসানসোল গ্রাম দূর্গাপুজো কমিটি ও আসানসোল গ্রাম শ্রী শ্রী নীলকন্ঠেশ্বর জিউ দেবোত্তর ট্রাস্টের সভাপতি শচীন রায় বলেন, আসানসোল গ্রামের প্রাচীন ঐতিহ্য ও সাবেকিয়ানার ধাঁচে ৮ টি দুর্গাপুজোর প্রতিমা হবে। গ্রামের ৮ টি পুজোর নবপত্রিকা একসঙ্গে স্নান করিয়ে রামসায়ের পুকুর থেকে আনা হবে মন্ডপে মন্ডপে। গতবছর তা একসঙ্গে হয়নি। আলাদা আলাদা করে তা আনা হয়েছিলো। করোনার জন্য ২০২১ সালে পুষ্পাঞ্জলি একসঙ্গে কেউ দিতে পারেন নি। সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে ছোট ছোট দল করে তা করা হয়েছিলো। এবারে কোনকিছুতেই মানা থাকছে না। দশমীতে সিঁদুর খেলা হবে। গ্রামের সব মহিলারাই সেই সিঁদুর খেলায় অংশ নেবেন। দশমীর সন্ধ্যায় যেমন রীতি মেনে প্রতিমা বিসর্জন হয় তা হবে।
শচীনবাবু বলেন, আসানসোল গ্রাম থেকে ৮ প্রতিমা একসঙ্গে শোভাযাত্রা সহকারে রামসায়ের পুকুরে যাবে।
জানা যায়, প্রায় ৩০০ বছর আগে আসানসোলের প্রতিষ্ঠাতা করেছিলেন নকড়ি রায় ও রামকৃষ্ণ রায়। বর্গীদের হাত থেকে রাঢ়বাংলাকে বাঁচিয়েছিলেন পঞ্চকোট রাজার এই দুই বীর সেনানী। বর্তমানে এই রায় পরিবারের সদস্য সংখ্যা সবমিলিয়ে দশহাজারের বেশি। আসানসোল গ্রাম, বুধাগ্রাম সহ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছেন রায় পরিবারের সদস্যরা। যদি ক্যালেন্ডার মতে বলা হয়, তাহলে আজ থেক ঠিক ২৮৮ বছর আগে এই গ্রামে দুর্গা পুজো শুরু করেছিলেন রামকৃষ্ণ রায় ও নকড়ি রায়। পরবর্তীকালে পরিবার বড় হয়। যে কারণে পুজোর সংখ্যাও বাড়ে৷ এখন ৮ টি দূর্গাপুজো হয় এই আসানসোল গ্রামে। বড় দুর্গা, মেজ দুর্গা, ছোট দুর্গা নানা নামে পরিচিত রয়েছে আসানসোল গ্রামের পুজোগুলি।
শচীন রায় আরো বলেন, এই ৮ টি পুজোর নবপত্রিকা স্নান করানো সহ সবকিছুই এতো বছর ধরে একসঙ্গে হয়ে এসেছে। এইসব দেখতে বহু মানুষের ভিড়ও হয়। বলির পর পুজো মন্ডপে মহাভোগ খেতে আসেন হাজার হাজার মানুষ । করোনার জন্য গত ২ বছর আমরা সর্বসম্মতিক্রমে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু রীতি রেওয়াজে পরিবর্তন বা বন্ধ রেখেছিলাম। এবার আর কিছু নেই। সবাই নিজেদের মতো করে শারদ আনন্দে সামিল হতে পারবেন।
পুরনো সবকিছুই আবার আগের মতো হওয়ায়
আসানসোল গ্রামের মানুষেরা যারা এইসব পুজোর সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে রয়েছেন তারা খুবই খুশি। গ্রামের মানুষেরা বলেন, গত দুবছর আমাদের মন খুবই খারাপ ছিলো। কিন্তু কিছু করার ছিলোনা । এবার আর তেমন পরিস্থিতি নেই। সবাই আমরা আনন্দে মাতবো।