সায়গলকে নথির প্রতিলিপি দিতে জেলে ইডির দুই অফিসার
মঙ্গলবার হাইকোর্টে শুনানি
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্যঃ গরু পাচার মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত বীরভূমের তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের প্রাক্তন দেহরক্ষী সায়গল হোসেনকে নিজেদের হেফাজতে নিতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি। গত শুক্রবার আসানসোল জেলা আদালতের বিশেষ ভ্যাকেশান কোর্টে ধাক্কা খাওয়ার পরে ইডি এখন দ্বারস্থ হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। শনিবারেই তারা আসানসোল জেলা আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করে। পরে রবিবার ইডির আইনজীবীরা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে জরুরি ভিত্তিতে আবেদনের শুনানির জন্য রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে দরবার করা হয় ।
জানা গেছে ইডির তরফে বলা হয়েছে, রবিবার রাতেই যেন বিশেষ বেঞ্চ বসিয়ে তাদের আবেদনের শুনানি করা হোক। কিন্তু ইডির সেই আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, জরুরি ভিত্তিতে কোন শুনানি হবে না। নিয়ম মেনে আগামী মঙ্গলবার নির্দিষ্ট বেঞ্চেই এর শুনানি হবে।
এদিকে, রবিবার সকালে আসানসোল জেল বা বিশেষ সংশোধনাগারে আসেন ইডির দুই অফিসার। তারা কলকাতা থেকে ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ বেরিয়ে সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ আসানসোল জেলে এসে পৌঁছান। জানা গেছে, ইডির এক অফিসার জেল সুপারের অনুমতি নিয়ে সায়গল হোসেনের সঙ্গে দেখা করেন। তাকে বেশ কিছু নথি দেওয়া হয়েছে। নথির প্রাপ্তি হিসাবে ইডির অফিসার একটা কাগজে সায়গলের সাক্ষরও নেন। মাত্র ১০ মিনিট ঐ অফিসার জেলে ছিলেন। এর পরে ইডির দুই অফিসার আসানসোল জেল থেকে বেরিয়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন।
গত শুক্রবার সকালে আসানসোল জেলে ঘন্টা চারেক সায়গলকে জেরা করেন ইডির ছয় অফিসার। সেই জেরার পরে জেলেই দুপুর একটা বেজে দশ মিনিটে তাকে গ্রেফতার করে ইডি। একই সঙ্গে তাকে সিআরপিসির ৪১ নং ধারা অনুযায়ী নোটিস দেওয়া হয় ইডির তরফে। শুক্রবার বিকেলে প্রথম বার ও সন্ধ্যায় দ্বিতীয় বার ইডির আইনজীবী আসানসোল জেলা আদালতের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট তথা বিশেষ ভ্যাকেশান কোর্টের বিচারক রত্না রায় বিশ্বাসের কাছে সায়গলকে “সোন এ্যারেস্ট” দেখিয়ে তার প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট ও ট্রানজিট রিমান্ডের জন্য আলাদা করে দুটি আবেদন করেন। প্রথম বারের আর্জি তো বিচারক শুনতেই চাননি। দ্বিতীয় বারের আর্জি গ্রহণ করে শুনলেও, আবেদন খারিজ করে দিয়ে বিচারক বলেন এই বিষয়টি এই আদালতের এক্তিয়ার ভুক্ত নয় । এই বিষয়টি যে আদালতে এই মামলা আছে সেই আদালতেই তাদের আবেদন করতে হবে।
শুক্রবার রাতে আসানসোল আদালত থেকে বেরোনোর সময় ইডির আইনজীবী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সায়গলকে যে গ্রেফতার করা হয়েছে, তা আসানসোলের আদালত অবৈধ বলেনি। তবে অন্য দুটি আবেদন এই আদালতের এক্তিয়ারের মধ্যে নয় বলে তা খারিজ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, সায়গলের আইনজীবী খুরশিদ আনসারি বলেছিলেন শনিবার ইডির পক্ষ থেকে আসানসোল আদালতে নতুন করে কোন আবেদন জমা করার সুযোগ ছিলো না। কেননা এদিন আদালত ছুটি ছিল। তবে তারা যেহেতু সায়গলকে শুক্রবার দুপুরে গ্রেফতার দেখিয়েছে। তাই ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাকে আদালতে পেশ না করতেই হবে। তা না হলে এই গ্রেফতার অবৈধ। উচ্চ আদালতে ইডি গেলে তার যে অন্য আইনজীবীরা আছেন, তারা নিশ্চয়ই বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
আসানসোল আদালতে যা কিছু ঘটেছে তার সবটাই আমি জানিয়ে দিয়েছি। এদিকে আসানসোল জেল সূত্রে জানা গেছে, বলেন ইডির অফিসাররা শনিবার জেলে আসেননি। শুক্রবার তারা বলেছিলেন সায়গলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু সে আসানসোল জেলেই আছে।
জেল সূত্রে আরো জানা গেছে, রবিবার সকালে ইডির এক অফিসার জেলে এসেছিলেন। কিছু কাগজ ও নথি তিনি সায়গলকে দেন ও পরে তাকে দিয়ে সই করান। মাত্র ১০ মিনিট তিনি জেলে ছিলেন।
ইডি সূত্র থেকে জানা গেছে, গরু পাচার মামলায় সায়গলকে হেফাজতে নিয়ে তারা দিল্লি গিয়ে তাকে জেরা করতে চাইছে। কেন্দ্রীয় সংস্থা এই কাজ দ্রুত করতে চাইছে।
প্রসঙ্গতঃ এর আগে, দিল্লির ইডির রাউজার্স কোর্টে ইডির পক্ষ থেকে আসানসোল জেলে থাকা সায়গলকে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করা হয়েছিল। সেই আবেদন খারিজ হয়ে যায়। এরপর আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে ইডির পক্ষ থেকে জেলে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করা হয়। সেই আবেদন মঞ্জুর করেন সিবিআইয়ের আসানসোলের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী। তারই ভিত্তিতে শুক্রবার প্রায় চার ঘন্টা সায়গলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে কোন সহযোগিতা না করার অভিযোগ এনে তাকে গ্রেফতার করে ইডি।