টানা কদিনের নাটকের যবনিকা পতন, ট্রেনে সায়গল হোসেনকে দিল্লি নিয়ে গেলো ইডি
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত ও দেব ভট্টাচার্যঃ বিভিন্ন আদালতের দরজায় ঘুরে শেষ পর্যন্ত গরু পাচার মামলায় তদন্তের জন্য নিজেদের হেফাজতে পেয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। বলা ভালো যে, সায়গলকে নিয়ে চলা টানা কদিনের নাটকের যবনিকা পতন হলো শুক্রবার বিকেলে।
এদিন সায়গল হোসেনকে সাতদিনের জন্য জেরা করার অনুমতি পেয়ে আসানসোল জেল বা বিশেষ সংশোধনাগার থেকে দিল্লি নিয়ে গেলো ইডি। কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিকদের সঙ্গে ছিলেন আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের পুলিশ কর্মীরা।




হাওড়া অমৃতসর জলিয়াওয়ালাবাগ এক্সপ্রেসে করে সায়গলকে নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লি। এই ট্রেনের সময় ছিলো বিকেল ৪ টে বেজে ১৫ মিনিটে। জানা গেছে, ট্রেনের এস ৩ কোচে সিট নম্বর ৫৮ এবং ৫৯ নং সংরক্ষণ করা হয়েছিলো। তাতে ২ জন যান। বাকি এস ৪ কামরায় ৪ জন আধিকারিকও গেছেন। এদিন বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ আসানসোল জেল থেকে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে করে আসানসোল রেল স্টেশনের সায়গলকে আনা হয়। স্টেশনের মেন গেট প্লাটফর্ম নম্বর ৫ এ জিআরপি বা আসানসোল রেল পুলিশ থানায় তাকে আনা হয়।
গোটা স্টেশন চত্বরকে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ, রেল পুলিশ ও আরপিএফের আধিকারিকদের নিয়ে বিশাল নিরাপত্তা ঘেরাটোপ করা হয়েছিলো। নির্ধারিত সময়ের ২ মিনিট পরে ঠিক ৪ টে বেজে ১৭ মিনিটে আসানসোল রেল স্টেশনে ৪ নং প্ল্যাটফর্মে ট্রেন আসে। তার আগেই অবশ্য ৫ নং প্ল্যাটফর্ম থেকে পুলিশ পাহারায় সায়গলকে ৪ নং প্ল্যাটফর্মে আনা হয়। ট্রেন থামার পরে পুলিশের সঙ্গে সায়গল নির্দিষ্ট কোচে উঠেন। আড়াই মিনিটের মতো দাঁড়ানোর পরে ট্রেন প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে যায়। রেল সূত্রে জানা গেছে, সবকিছু ঠিক থাকলে শনিবার দুপুরের পরে এই ট্রেন দিল্লি পৌঁছে যাবে।
এদিন সায়গলের পড়নে ছিলো স্কাই ব্লু রংয়ের টিশার্ট ও ব্লু জিন্সের প্যান্ট। সঙ্গে ছিলো একটি পিঠ ব্যাগও। মুখে লাগানো ছিলো মাস্ক।
জেল থেকে বেরোনো ও প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকার সময় সাংবাদিকরা তার কাছে থেকে জানতে চান, তিনি কিছু বলবেন কি না? কিন্তু সায়গল কোন কিছু বলেননি বা প্রতিক্রিয়াও দেন। তিনি বেশ নির্লিপ্তই ছিলেন। মাস্ক থাকায় তার মুখের হাবভাব স্পষ্ট করে বোঝা যায় নি। তবে চোখে যে তার চিন্তার ভাঁজ একটা ছিলো, তা বোঝা যাচ্ছিলো।
বৃহস্পতিবার বিকেলে দিল্লি হাইকোর্ট যখন তাকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার জন্য ইডির আবেদন মঞ্জুর করেছিলো, তখন আসানসোল জেলে থাকা সায়গল কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন। শুক্রবার সকালে তার আইনজীবীদের দিল্লি হাইকোর্টের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করা আবেদন সুপ্রিম কোর্ট নাকচ করে দেওয়ায় সায়গল হোসেন নিশ্চিত হয়ে যান যে, তার কিছু করার নেই। আসানসোল জেল সূত্রে জানা যায়, এরপর তিনি একটি পিঠ ব্যাগে নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস গুছিয়ে নেন। জেলের তরফে তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়, ট্রেন বিকেলে।
প্রসঙ্গতঃ, গরু পাচার মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়ে প্রায় ১৩৫ দিন বা সাড়ে চার মাস ধরে আসানসোল জেলে রয়েছে বীরভূমের তৃনমুল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অনুব্রত মন্ডলের প্রাক্তন দেহরক্ষী সায়গল হোসেন। গত জুন মাসে সিবিআই তাকে গ্রেফতার করেছিলো। আগামী ৫ নভেম্বর তাকে আবার আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে পেশ করার দিন রয়েছে। এই গরু পাচার মামলায় গ্রেফতার হয়ে এই আসানসোল জেলে রয়েছেন অনুব্রত মন্ডলও।
উল্লেখ করা যেতে পারে, গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে ইডি গরু পাচার মামলায় নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করার জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছিলো। প্রথমে তারা দিল্লিতে রাউজার্স কোর্টে আবেদন করেছিলো। কিন্তু সেখানকার কোর্ট তাতে সাড়া দেয়নি। তাদেরকে বলা হয়, যে আদালতে মামলা চলছে সেখানে যেতে। এরপর ইডির আইনজীবীরা আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে আসেন। কিন্তু আদালত তখন তাদের আবেদন শোনেনি। এরপর ইডি দূর্গাপুজোর আগে আবার আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তীর কাছে আবেদন করেন। বিচারক আসানসোল জেলে গিয়ে সায়গলকে জেরা করার অনুমতি দেন। সেই মতো গত ৭ অক্টোবর সকালে ইডির অফিসাররা আসানসোল জেলে গিয়ে ৪ ঘন্টা জেরা করেন। সেদিন বিকেলে আসানসোল জেলা আদালতে বিশেষ ভ্যাকেশান কোর্টের দায়িত্বে থাকা বিচারক রত্না রায় বিশ্বাসের কাছে ইডির আইনজীবী আবেদন করে বলেন, সায়গল হোসেন জেরায় সহযোগিতা করেছেন না। তাকে জেলেই গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা তাকে দিল্লিতে নিয়ে যেতে চান। কিন্তু বিচারক তা খারিজ করে বলেন, এই নির্দেশ দেওয়ার এক্তিয়ার এই আদালতে নেই। এরপর ইডি কলকাতা হাইকোর্টে একই আবেদন নিয়ে যায়। কিন্তু হাইকোর্টও ইডির আবেদনে সাড়া দেয়নি। এরপর ইডি দিল্লিতে রাউজার্স কোর্টে আবেদন করেছিলো চলতি সপ্তাহের শুরুতে। সেই আবেদনের ভিত্তিতে বুধবার শুনানি হলে, ইডি সায়গলকে জেরা করতে দিল্লি আনার অনুমতি পায়। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সায়গলের আইনজীবীরা দিল্লি হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে গেলেও শেষ রক্ষা হলোনা। শেষ পর্যন্ত সায়গলকে জেরা করতে দিল্লি নিয়ে গেলো ইডি।
এখন দেখার সায়গলকে জেরা করে ইডি এই গরু পাচার মামলায় কি পায়?