সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তল্লাশি, কাঠগড়ায় পুলিশ কর্মীর ভূমিকা, শুরু বিভাগীয় তদন্ত
আসানসোল জেলা হাসপাতালে বাথরুমের জানালার কাঁচ ভেঙে পালানো বিচারাধীন বন্দী
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ আসানসোল জেলা হাসপাতালে পুরনো মেল মেডিকেল ওয়ার্ডের কেবিনের গ্রিলের জানালার কাঁচ ভেঙে পালানো এক বিচারাধীন বন্দী। সোমবার রাতের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত শুরু করলেও, মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত পলাতক ঐ বিচারাধীন বন্দীর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। পুরুলিয়ার বাসিন্দা বছর ২০র ঐ বন্দীর নাম মন্দিল বিপ্লব।




এই ঘটনায় ঐ বন্দীর পাহারায় থাকা আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক পুলিশ কর্মীর ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করা হয়েছে। হাসপাতাল চত্বরে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ইতিমধ্যেই পুলিশ সংগ্রহ করেছে। সেই ফুটেজ দেখে পুলিশ জানার চেষ্টা করছে জানালার কাঁচ ভেঙে বাইরে বেরোনোর পরে ঠিক কোন জায়গা দিয়ে ঐ বিচারাধীন বন্দী হাসপাতাল থেকে পালায়।
সোমবার রাতে সাড়ে দশটার পরে আসানসোল জেলা হাসপাতালে পুলিশ হেফাজত থেকে এক বিচারাধীন বন্দীর পালিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়ার পর হাসপাতাল ও পুলিশ মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে আসানসোল দক্ষিণ থানার আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের আধিকারিকদের একটি টিম বিষয়টি তদন্ত করতে হাসপাতালে পৌঁছান। ঘটনাস্থলে আসেন ডিসিপি ( ট্রাফিক / ইনচার্জ সদর) আনন্দ রায়। তিনি মঙ্গলবার বলেন, এখনও পর্যন্ত তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। আসানসোল জেলা হাসপাতালের একটি অভিযোগের ভিত্তিতে একটি মামলা করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তদন্ত করা হচ্ছে। একইভাবে যে পুলিশ কর্মীর নজরদারিতে সে ছিলো, তার ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সূত্র মারফত জানা গেছে, তিনি দীর্ঘক্ষন কেবিনের পাহারায় ছিলেন না। অন্য কোন জায়গায় গেছিলেন। তবে তিনি তদন্তকারী অফিসারদের বলেছেন, সন্ধ্যার আগে সে ঐ বন্দীকে কেবিনে থাকতে দেখেছেন।
আরো জানা গেছে, পুরুলিয়া জেলার বাসিন্দা ঐ বিচারাধীন বন্দীর নামে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের কুলটি ও সালানপুর থানায় মোটরসাইকেল চুরি, ছিনতাইয়ের একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়াও পুরুলিয়াতেও তার নামে দুটি খুনের ঘটনা সহ অনেকগুলি মামলা রয়েছে।
গত জুলাই মাস থেকে মন্দিল বিপ্লব আসানসোল জেল বা বিশেষ সংশোধনাগারে রয়েছে। তাকে গত ২৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় জেল থেকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকেন পক্সে আক্রান্ত হওয়ায় তাকে জেলা হাসপাতালের পুলিশ সেলের পরিবর্তে পুরোনো মেল মেডিকেল ওয়ার্ডে একটি কেবিনে আইসোলেশনে রাখা হয়েছিল। তার পাহারায় কেবিনের বাইরে পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা ছিলো। তাকে কেবিনে ওষুধ দিতে গিয়ে দেখা যায় সে কেবিনে নেই। তারপর খোঁজ শুরু হয়। তখন দেখা যায়, কেবিনের বাথরুমের জানালার উপরের অংশের কাঁচ ভাঙ্গা রয়েছে। তারপর অনুমান করা হয়েছে, সোমবার সন্ধ্যা ৭টার পরে সে ঐ কেবিনের বাথরুমের গ্রিলের জানালার উপরের অংশের কাঁচ ভেঙে বাইরে আসে।
তারপর একতলার ছাদ থেকে কোনদিক থেকে নিচে নেমে পালিয়ে যায়। কেবিনের বাইরের ছাদের দিকে কোন সিসি ক্যামেরা লাগানো না থাকায় ঠিক কখন ঐ বন্দী পালিয়ে বোঝা যায়নি। রাত সাড়ে দশটার পরে এই ঘটনার জানাজানি হতেই তার খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়। আসানসোলের পার্শ্ববর্তী সমস্ত থানাকে এলার্ট করা হয়। পাশাপাশি সমস্ত নাকা চেকিং গুলিকেও এলার্ট করে শুরু খোঁজ।
হাসপাতাল সুপার ডাঃ নিখিল চন্দ্র দাস বলেন, বন্দীর খোঁজ না পেয়ে নিয়ম মতো তাকে ” এ্যাবসকন্ড ‘ দেখিয়ে আসানসোল দক্ষিণ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।