আসানসোলে কম্বল কান্ড : মৃত তিনজনের পরিবারের সঙ্গে দেখা করলেন মলয় ঘটক, আসছে রাজ্য তৃনমুল কংগ্রেসের ৫ জনের প্রতিনিধি দল
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ আসানসোলে কম্বল কান্ড রাজ্য রাজনীতিতে নতুন মাত্রা এনেছে। আর এই ইস্যু নিয়ে রাজ্যের শাসক দল তৃনমুল কংগ্রেস একদিকে মানবিক মুখকে সামনে রেখে সবরকম ভাবে মৃত তিনজনের পরিবারের পাশে থাকার চেষ্টা চালাচ্ছে। অন্যদিকে, রাজনৈতিক ভাবে এই ঘটনায় বিজেপির গাফিলতিকে সামনে এনে বাজিমাৎ করতে মরিয়া ঘাসফুল শিবির।
শুক্রবার রাতে কলকাতা থেকে ফিরেই এই ঘটনায় মৃত তিনজন কাল্লা ও রামকৃষ্ণ ডাঙালের বাসিন্দা চাঁদমনি দেবী, ঝালি দেবী বাউরি ও প্রীতি সিংয়ের বাড়ি যান রাজ্যের শ্রম ও আইন মন্ত্রী মলয় ঘটক। তার সঙ্গে ছিলেন আসানসোল পুরনিগমের কাউন্সিলর উৎপল সিনহা সহ অন্যান্যরা। মন্ত্রী তিনজনের মৃত্যুতে পরিবারকে সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি দল ও সরকার তাদের পাশে আছে বলে জানান। মন্ত্রী একইসঙ্গে গত মঙ্গলবার আসানসোলের কাল্লা দোমহানি রোডে মিনিবাস উল্টে মৃত্যু হওয়া দুজনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন।
অন্যদিকে, দলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আজ রবিবার আসানসোলে আসছে অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস বা এআইটিসির ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। তারা হলেন, নারী ও শিশু কল্যান দপ্তরের মন্ত্রী ডাঃ শশী পাঁজা, পর্যটন ও আইটি মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, সেচ মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক, বিধায়ক বিবেক গুপ্ত ও তৃনমুল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভানেত্রী সায়নী ঘোষ।
এই প্রসঙ্গে শনিবার বাবুল সুপ্রিয় বলেন, দলনেত্রী এই ঘটনাটি গুরুত্ব ও মানবিক ভাব দেখছেন। তার নির্দেশে ও তার বার্তা আমরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে দেবো।
জানা গেছে, রবিবার দুপুর একটা নাগাদ এই দল আসানসোলে আসছেন।
অন্যদিকে, এই ঘটনায় ধিক্কার জানিয়ে তৃনমুল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে গত দুদিন ধরে আসানসোলের বিভিন্ন জায়গায় মোমবাতি মিছিল করা হয়েছে। শনিবারও একটি মিছিল হয়েছে।
প্রসঙ্গতঃ, গত বুধবার দুপুরে আসানসোলের রেলপারের রামকৃষ্ণ ডাঙালে শিব চর্চা ও মেগা কম্বল বিতরণের অনুষ্ঠান হয়। এই অনুষ্ঠানের মুল উদ্যোক্তা ছিলেন আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তেওয়ারির স্ত্রী কাউন্সিলর চৈতালি তেওয়ারি। এই অনুষ্ঠানে এসেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বক্তব্য রাখার পরে একজনকে কম্বল দিয়ে অনুষ্ঠান থেকে বিকেল পাঁচটা নাগাদ চলে যায়। এরপর কম্বল বিলি শুরু হতেই হুড়োহুড়ি শুরু হয়। তাতে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় তিনজনের। আহত হয় আরো ৬ জন। পরের দিনই রাজ্য সরকার পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মৃত তিনজন ও আহত ৬ জনকে ২ লক্ষ ও ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতি পূরণ দিয়েছে। মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা ও বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশীষ বন্দোপাধ্যায় এই ক্ষতি পূরণের চেক দিতে আসানসোলে আসেন।
এর পাশাপাশি মৃত ঝালি দেবী বাউরির ছেলে সুখেন বাউরির লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে এই ঘটনা নিয়ে আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ একটি এফআইআর করেছে। তাতে জিতেন্দ্র তেওয়ারি, চৈতালি তেওয়ারি, দুই বিজেপি কাউন্সিলর গৌরব গুপ্ত ও অমিত তুলসিয়ান সহ নির্দিষ্ট করে ১০ জন সহ অন্যান্যদের নাম রয়েছে। এফআইআরে নাম থাকা উদ্যোক্তাদের মধ্যে তিনজন সহ মোট ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার আসানসোল জেলা আদালত থেকে পুলিশ এই ৬ জনকে ৮ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে।
আসানসোল দূর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার এন সুধীর কুমার নীলকান্তম এই ঘটনার তদন্তে একটি কমিটি তৈরী করেছেন। ডিসি ডিডির নেতৃত্বে এই তদন্ত চলছে। ইতিমধ্যেই ধৃতদের হেফাজতে নেওয়ার পরে তাদের জেরা করেছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। জানা গেছে, দিন দুয়েকের মধ্যেই এই ৬ জনকে নিয়ে ঘটনার পুননির্মাণ বা রিকনস্ট্রাকশন করাবে পুলিশ।