দুই বর্ধমানের শিল্প সম্ভাবনাকে সামনে রেখে আসানসোলে ” সিনার্জি এন্ড বিজনেস কনক্লেভ
রাজ্যের তাঁতশিল্পীদের জন্য নতুন এ্যাপের উদ্বোধন
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ* এই প্রথম কোন দুটি জেলার শিল্প সম্ভাবনাকে সামনে রেখে আয়োজন করা হলো এক অনুষ্ঠানের।
বৃহস্পতিবার আসানসোলের রবীন্দ্র ভবনে রাজ্যের ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প উদ্যোগের তরফে হলো দুই বর্ধমান জেলা ( পূর্ব ও পশ্চিম) নিয়ে ” সিনার্জি এন্ড বিজনেস ফ্যালিসিটেশন কনক্লেভ ২০২২ -২৩ “।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা রাজ্যের ৪ মন্ত্রী ডাঃ শশী পাঁজা ( শিল্প ও বানিজ্য), মলয় ঘটক ( আইন ও শ্রম) চন্দ্রনাথ সিনহা ( ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প উদ্যোগ) ও স্বপন দেবনাথ ( প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন) দুই বর্ধমান জেলায় রাজ্য সরকারের শিল্প নিয়ে বিভিন্ন ভাবনা ও পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।
ডাঃ শশী পাঁজা বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প ( এমএসএমই) নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছেন। মুলতঃ ২০১৩ সাল থেকে তার ভাবনা শুরু হয়েছে। অনেক নতুন নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ও হচ্ছে। তারই নির্দেশ মতো এই প্রথম আসানসোলে সিনার্জির আয়োজন করা হয়েছে। ভাবতে ভালো লাগে যে, সারা দেশের প্রায় ১৪ শতাংশ এমএসএমই ক্ষেত্রে এই রাজ্যের কনট্রিবিউশন রয়েছে। সবমিলিয়ে ৮৯ লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে। কর্মসংস্থানের ১২ শতাংশেরও বেশি এই বাংলা থেকে রয়েছে। তিনি আরো বলেন, দুই বর্ধমানের শিল্পটাও আলাদা। পূর্ব বর্ধমানে রয়েছে কৃষি ভিত্তিক শিল্প। আর পশ্চিম বর্ধমানে খনি ও লৌহ ইস্পাত সম্পর্কিত শিল্প। পূর্ব বর্ধমানে তাঁতের পাশাপাশি রয়েছে সীতাভোগ, মিহিদানা, গোবিন্দভোগ সহ বিভিন্ন চালের ভান্ডার। এই জেলার পানাগড়ে রয়েছে শিল্প পার্ক। বীরভূমের দেওচি পাঁচামির মতো পশ্চিম বর্ধমানের গৌরান্ডিতে রাজ্য সরকারের কয়লাখনি চালু হতে চলেছে। এখানে বিনিয়োগ হবে। বাড়বে কর্মসংস্থানও। অন্ডালে কাজি নজরুল ইসলাম বিমানবন্দরকে কেন্দ্র করে অনেক কিছু করা হচ্ছে। কোথাও জল ও বিদ্যুতের ঘাটতি নেই। বলতে গেলে সারপ্লাস আছে।
এদিনের অনুষ্ঠানে গোটা রাজ্যের তাঁতশিল্পীদের সুবিধায় ” ইয়ার্ন ব্যাঙ্ক এ্যাপ” র উদ্বোধন করেন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা। তিনি বলেন, এই ব্যাঙ্ক এ্যাপের মাধ্যমে রাজ্যের ৬ লক্ষের বেশি তাঁতশিল্পীরা উপকৃত হবেন। এর ভাবনা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এই এ্যাপের মাধ্যমে তাঁতশিল্পীরা নিজেদের প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী সরকারি সুবিধাপ্রাপ্ত সুতো কিনতে পারবেন। সুতোর দাম জানতে পারবেন।
রাজ্যের আইন ও শ্রম মন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, রাজ্য সরকার আরো একটি শিল্প তালুক গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে। তা হবে পশ্চিম বর্ধমান জেলার বার্ণপুরের ঢাকেশ্বরীতে। শেষ মন্ত্রীসভার বৈঠকে তার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এখানে মোট জমি আছে ১৯৩ একর। এই জেলায় যেহেতু কয়লাখনি ও লৌহ ইস্পাত কারখানা রয়েছে। তাই নতুন এই শিল্প তালুকে সেই শিল্প নির্ভর কারখানা গড়ে তোলা হবে।
এদিনের অনুষ্ঠানে দুই বর্ধমান জেলার এমএসএমই ক্ষেত্রে কি আছে তার তথ্য প্রজেক্টের সাহায্য তুলে ধরেন দুই জেলা এস অরুণ প্রসাদ ( পশ্চিম ) ও প্রিয়াঙ্কা সিংগালা ( পূর্ব)।
অনুষ্ঠানে বার্ণপুর ইস্কো কারখানা বা আইএসপি ও ডিএসপি বা দূর্গাপুর ইস্পাত কারখানা কতৃপক্ষ এমএসএমইর ক্ষেত্রে তাদের পরিকল্পনা তুলে ধরেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরে আসানসোল ও দূর্গাপুরের বিভিন্ন বনিকসভার সদস্যরা শিল্প মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। তারা বিভিন্ন সমস্যা ও অভিযোগ মন্ত্রীকে বলেন। মন্ত্রী কলকাতায় এসে তার সঙ্গে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ছিলেন ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প দপ্তরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি রাজেশ পান্ডে, দুই বর্ধমানের জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুভদ্রা বাউরি ও শম্পা ধাড়া, আসানসোল দূর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার এন সুধীর কুমার নীলকান্তম, আসানসোল দূর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ বা আড্ডার চেয়ারম্যান তাপস বন্দোপাধ্যায়, বিধায়ক হরেরাম সিং।
এদিন সকালে প্রদীপ জ্বালিয়ে সিনার্জির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।