ASANSOLPURULIA-BANKURA

আইআইটিতে অসুবিধে হবেনা ছোটনের পাশে দাঁড়ালো আসানসোলের সামাজিক সংগঠন প্রগতি

বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য্য, আসানসোল : মাত্র বছর তিনেক আগেও নিজেই গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন জিনিস নিয়ে ছোটন কর্মকার ফেরি করেছে । তার বাবা কানাই কর্মকার দীর্ঘদিন গ্রামের পর গ্রাম সাজগোজের নানান জিনিস সহ বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী নিয়ে ফেরি করে বেড়ান । সেই অর্থেই ছেলেদের পড়াশোনা থেকেই সংসার চালান কোনমতে বাঁকুড়ার শালতোড় এর পাবড়া গ্রামের বাসিন্দা কানাই বাবু। সেই ছোটন এবার জয়েন্ট এট্রান্স পরীক্ষায় ভালো ফল করে আইআইটি খড়্গপুরের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে বিটেকে ভর্তি হয়েছে।

গ্রামের ফেরিওয়ালার ছেলে ছোটন খড়্গপুরে ভর্তির পর থেকেই তার এবং তার বাবা-মার দুশ্চিন্তা শুরু হয়েছিল ।ওর পড়ার টাকা আসবে কোথা থেকে ? আচমাই ছোটনের এই আর্থিক সংকটের কথা জানতে পেরে তার পাশে দাঁড়ালো আসানসোলের সামাজিক সংগঠন আসানসোল প্রগতি। বড়দিন অর্থাৎ ২৫ শে ডিসেম্বর শালতোড়ার পাবরা গ্রামে ছোটনের বাড়িতে পৌঁছে যান প্রগতির অন্যতম সদস্য পিন্টু ওরফে শুভব্রত ভট্টাচার্য সহ অন্যরা । আগে থেকেই তার চাহিদা মত আলোচনা করে এদিন তার হাতে পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক তুলে দেয়া হয় আসানসোল প্রগতির পক্ষ থেকে।

ছোটন, ছোটনের মা ববিতা কর্মকার এবং তার বাবা কানাই কর্মকার এর আজ আনন্দে প্রায় চোখে জল এসে গিয়েছে। ছোটন আসানসোল প্রগতির কাছে লিখিতভাবেই আবেদন করে বলেছিল আমার বাবা সাধারণ ফেরিওয়ালা ।আমি মাধ্যমিকে এবং উচ্চমাধ্যমিকে ৯৫ শতাংশের বেশি নম্বরপেয়ে পাস করেছিলাম। এবার জয়েন্ট এন্ট্রান্স এ ভালো ফলাফল করে খড়গপুর আইআইটি তে পড়ার সুযোগ পেয়েছি । কিন্তু সেখানকার সুবিধে ও সরকারি স্কলারশিপ পেলেও বছরে আমার আরো ষাট হাজার টাকা করে পড়ার জন্য লাগবে ।এই টাকা জোগাড় করতে না পারলে আমার পক্ষে পড়া অসম্ভব হয়ে যাবে । এই আবেদন হাতে পেয়ে আসানসোল প্রগতির সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেন আগামী চার বছর তাকে এই অর্থ দিয়ে তারা সাহায্য করবেন। তার পড়ার জন্য কোন অসুবিধে যাতে না হয় সেজন্য তারা সব সময় পাশে থাকবেন। অবশ্য আসানসোল প্রগতি শুধুই এদের ক্ষেত্রে নয় এর আগেও এমন ৬০ জন ছাত্রছাত্রীর পড়ার সমস্ত খরচ বহন করেছে।


এই চেক হাতে পাওয়ার পর ছোটন এই সময়কে জানায় ভীষণ আনন্দ লাগছে। আমি যখন থেকেই অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি তখন থেকেই আমাদের এলাকায় বিবেকানন্দ সমিতির সামাজিক কাজকর্ম দেখে স্বামী বিবেকানন্দের ভাবনা এবং চিন্তায় অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত হয়েছি। ঈশ্বর যেন ওনাদের আমার কাছে নিয়ে এসে আমার পাশে দাঁড় করিয়েছেন। আগামী দিনে আমি পড়াশোনা শেষে যে চাকরি পাই না কেন আমি সামাজিক কাজে যুক্ত হব এবং প্রগতির মতো সংগঠনের সদস্য হওয়ার চেষ্টা করব। ছোটন নিজেই জানায় সে যখন এইট ,নাইনে পড়তো তখন সেও বাবার জিনিসপত্র নিয়ে নিজেও ফেরিওয়ালার কাজ করেছে। খড়্গপুরে তার ভর্তি হওয়ার বিষয়টিও খুব উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ছোটনের বাবা কানাই কর্মকার বলেন আইআইটি কি জিনিস তা অবশ্য আমার জানা নেই। তবে শুনেছিলাম ওখানে পড়তে অনেক টাকা লাগে। স্থানীয় অভিজিৎ মন্ডল নামে এক শিক্ষক ও একাধিক সমাজকর্মী ছোটনকে ভর্তির ব্যবস্থা করে দিয়েছিল এমনকি ট্রেনেও তাকে তুলে দিয়ে এসেছিল।

ঐ শিক্ষক বলেছিলেন দুবেলা ফেরি করে ওদের পেটের ভাত জোগাড় করা কঠিন। তাদের পক্ষে আইআইটি তে ভর্তির টাকা জোগাড় করাও স্বপ্ন মাত্র। প্রগতির পক্ষে শুভব্রত ভট্টাচার্য বলেন এই ধরনের ছাত্র-ছাত্রীদের খবর পেলেই আমরা তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি । ইতিমধ্যেই আমাদের সাহায্য নিয়ে যারা পড়াশোনা করে চাকরি পেয়েছে তেমন অন্তত তিনজন তারা নিজেরাও প্রত্যেকই এই কাজে সাহায্য করতে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন এটাই আনন্দের কথা। ছোটনের মা ববিতা কর্মকার বলেন ওনাদের কি বলে ধন্যবাদ দেবো বুঝে উঠতে পারছি না। উনারা সবাই মিলে আশীর্বাদ করেছেন আমার ছেলেকে। আমার বিশ্বাস আমার ছেলে একদিন সত্যিকারের ভালো মানুষ হবে এবং ও এমন ভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াবে।

Leave a Reply