ASANSOL

আসানসোল কম্বল কান্ডের এক মাস, জিতেন্দ্র তেওয়ারির দাবি নিয়ে রাজনৈতিক তরজা, পাল্টা জবাব শাসক দলের

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ আসানসোল কম্বল কান্ডের ঠিক এক মাস পরেও রাজনৈতিক তরজা অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তেওয়ারির দাবি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরী হলো। তার দাবির পাল্টা জবাব ফিরিয়ে দিতে দেরী করেনি শাসক দল তৃনমুল কংগ্রেস। জিতেন্দ্র তেওয়ারির দাবির জবাবে তাকে আক্রমণ করেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন তরফে দাসু। এদিন দুপুরে আসানসোলের আবাসনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে জিতেন্দ্র তেওয়ারি বলেন, আমরা একমাস দেখলাম শাসক দল ও তাদের পরিচালিত প্রশাসন কি করলো। বলা হয়েছিলো মৃত তিনজনের পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়া হবে। কিন্তু কেউ চাকরি এখনো পায়নি। তার আরো দাবি, এই তিনজনের পরিবার আর্থিক সাহায্য দেওয়ার জন্য জামুড়িয়া, পান্ডবেশ্বর সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ৬০ থেকে ৭০ লক্ষ টাকা তোলা হয়েছে। কিন্তু সরকারি সাহায্য ছাড়া ঐ তিনজনের পরিবার কোন সাহায্য পায়নি।

টাকা তোলার কোন তথ্য ও প্রমাণ না দিলেও জিতেন্দ্র তেওয়ারির দাবি, কেউ কি বলে, আমি টাকা দিয়েছি? প্রমাণ হিসাবে তিনি, পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও মানিক ভট্টাচার্য যে টাকা নিয়েছে চাকরি দেওয়ার জন্য, তার কি প্রমাণ আছে? নেই। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আমরা ঐ ঘটনা নিয়ে প্রথম থেকেই কোন রাজনীতি করতে চাইনি। আজও চাই না। কিন্তু যারা মৃতদেহ নিয়ে রাজনীতি করেছে, তারা কি করলো, তা তো সাধারণ মানুষের জানা উচিত। তিনি আরো বলেন, শেষ পর্যন্ত দেখবো কি হয়। তারজন্য যেখানে যা করার, তা করবো। দলের কর্মী ও নেতাদেরকে হয়রানি করা হচ্ছে।


এর পাল্টা জবাব দিয়ে ভি শিবদাসন তরফে দাসু বলেন, কারা রাজনীতি গরীব মানুষদের কম্বল দেওয়া নিয়ে করেছিলো, তা সবাই জানেন। আমরা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আসানসোল পুরনিগমের মেয়র বিধান উপাধ্যায় মৃত তিনজনের বাড়ি গিয়ে তাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, পুরনিগমে পরিবারের একজন করে চাকরি দেওয়া হবে। মেয়রের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, পরিবারের কে চাকরি করবে, তা তো লিখিত ভাবে দিতে হবে। এখনো তা দেওয়া হয়নি। দিলেই তা করা হবে। তিনি আরো বলেন, টাকা তোলা হয়েছে, তার প্রমাণ থাকলে, তা জনসমক্ষে আনুন। হাওয়ায় ভাসিয়ে কোন লাভ হবেনা। বাংলার মানুষেরা আর বিজেপির নেতাদের কথা শোনেন না।


প্রসঙ্গতঃ, ২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর আসানসোলের রেলপারের রামকৃষ্ণ ডাঙালে শিব চর্চা ও মেগা কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠান করা হয়েছিলো। সেই অনুষ্ঠানের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন জিতেন্দ্র তেওয়ারির স্ত্রী আসানসোল পুরনিগমের বিরোধী দলনেত্রী চৈতালি তেওয়ারি। সেই অনুষ্ঠানে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এসেছিলেন। তিনি অনুষ্ঠান থেকে চলে যাওয়ার পরেই কম্বল বিতরণ নিয়ে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। তাতে পদপিষ্ট হয়ে এক স্কুল পড়ুয়া সহ তিনজনের মৃত্যু হয়। আরো ৬ আহত হয়েছিলেন। সেই ঘটনায় গোটা রাজ্য জুড়ে তোলপাড় হয়। মৃত ঝালি দেবী বাউরির ছেলে সুখেন বাউরির লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ একটি এফআইআর করে। চৈতালি তেওয়ারি ও বিজেপির দুই কাউন্সিলর সহ মোট ১০ জনের নাম তাতে ছিলো। এই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত মোট ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশে পুলিশ দুবার চৈতালি তেওয়ারিকে জেরাও করেছে।

Leave a Reply