ASANSOL

বোরো চেয়ারম্যান নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রশ্ন, বয়কট প্রাক্তন ব্লক সভাপতি সহ ৪ তৃনমুল কাউন্সিলারের

আসানসোল পুরনিগম এলাকায় শাসক দলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে , অস্বস্তিতে জেলা নেতৃত্ব

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ আসানসোল পুরনিগমের ১০ বোরো চেয়ারম্যান নির্বাচন নিয়ে শাসক দল তৃনমুল কংগ্রেসের গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এলো। সোমবার আসানসোল পুরনিগমের ২ নং বোরোর রানিগঞ্জ পুর এলাকার শাসক দলের ৪ কাউন্সিলার চেয়ারম্যান নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলে ভোট বয়কট করেন। স্বাভাবিক ভাবেই দলের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে চার কাউন্সিলারের এহেন বিদ্রোহে চরম অস্বস্তিতে পড়েছেন পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃনমুল কংগ্রেস নেতৃত্ব। দলের চার কাউন্সিলারের এহেন আচরণ যে ভালো ভাবে নেয়নি তা পরে আসানসোল পুরনিগমের মেয়র তথা প্রাক্তন জেলা সভাপতি বিধান উপাধ্যায়ের কথায় স্পষ্ট হয়েছে। তবে এই চারজনের ভোট বয়কটে ২ নং বোরো চেয়ারম্যান নির্বাচনে কোন ব্যাঘাত ঘটেনি। ৭ জন কাউন্সিলারের সমর্থন পেয়ে ২ নং বোরো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন মোজাম্মিল হোসেন শাহাজাদা। তিনি দলের কাউন্সিলরদের বিরোধিতা নিয়ে বলেন, বেশির ভাগ কাউন্সিলর আমাকে সমর্থন করেছেন। ভেতরে কেউ বা কারা কিছু বলেননি বা করেননি। বাইরে কে বা কারা কি করেছেন বা বলেছেন বলতে পারবো না। গোটা বোরোর সব ওয়ার্ডের মানুষের জন্য কাজ করবো।


অন্যদিকে, দলের ঠিক করা প্রার্থীর সরাসরি বিরোধিতা বা বয়কটের পথে না হাঁটলেও বেশ কিছুটা হলেও দলীয় নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন আসানসোল পুরনিগমের ৪ নং বোরোর অধীন ৪১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জিতু সিং ওরফে রনবীর সিং ভারারা। তিনি বলেন, ৪ নং বোরো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন রাজেশ তেওয়ারি। তবে বুঝলাম রাজনীতিতে বয়স ও অভিজ্ঞতার কোন মুল্য নেই। কোন দাদার হাত মাথায় আছে, সেটাই বড় কথা।
রানিগঞ্জ যে ৪ জন কাউন্সিলার মুলতঃ এদিন বিদ্রোহ করেন তার নেতৃত্বে ছিলেন রানিগঞ্জের দলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি ৯৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অলোক বসু। বাকি তিনজন হলেন ৯২, ৯১ ও ৯০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শ্যামা উপাধ্যায়, রাজু সিং ও শক্তি রুইদাস।


প্রসঙ্গতঃ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি মেয়র বিধান উপাধ্যায় দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশ মতো আসানসোল পুরনিগমের ৯৭ জন দলের কাউন্সিলরকে নিয়ে পুরভবনের আলোচনা হলে একটি বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে জানানো হয় ২৭ ফেব্রুয়ারি ১০ টি বোরো অফিসের চেয়ারম্যান নির্বাচন হবে। দলীয় নেতৃত্বের ঠিক করে দেওয়া ১০ টি বোরো চেয়ারম্যানের নাম জানিয়ে দেওয়া হয়েছিলো তৃনমুল কংগ্রেসের কাউন্সিলরদের। জানানো হয়েছিলো চেয়ারম্যান প্রার্থীর নাম কারা প্রস্তাব করবে ও কারা সমর্থন করবে। সেদিন কিন্তু কোন বিক্ষোভ বা বিদ্রোহ হয়নি।


এদিন সকাল সাড়ে এগারোটার পরে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে আসানসোল পুরনিগমে ১ নং বোরো দিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু তাল কাটে এরপরেই। যখন রানিগঞ্জ পুর এলাকার ২ নং বোরো চেয়ারম্যান নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়। মিনিট কয়েকের মধ্যেই অলোক বসু, রাজু সিং, শ্যামা উপাধ্যায় ও শক্তি রুইদাস নির্বাচন হল থেকে বেরিয়ে চলে আসেন। তারা সাংবাদিকদের বলেন, এটা কি নির্বাচন হচ্ছে? ওপেন সমর্থন কি ভোটে হয়? চমকে প্রার্থীকে সমর্থন করতে বলা হয়েছে। আমরা মানিনা, চাপিয়ে দেওয়া বোরো চেয়ারম্যানকে। রানিগঞ্জের মানুষেরাও এই চেয়ারম্যানকে মানবেন না। আমাদের সঙ্গে ৯ জন কাউন্সিলর আছেন বলে তারা দাবি করেন।


বিকেলের মধ্যে কোন সমস্যা ছাড়াই ১০ টি বোরোর চেয়ারম্যান নির্বাচন সম্পন্ন হয়।
মেয়র বিধান উপাধ্যায় বলেন, রানিগঞ্জের বোরো নিয়ে এটা কেন হলো বুঝলাম। দলে আলোচনা করে প্রার্থী ঠিক করা হয়েছে। আগে তা জানানো হয়েছে। কেউ কারোর পছন্দের নাই হতে পারে। দল সব জানে। আশা করি দলীয় নেতৃত্ব এই চারজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। মেয়র হিসাবে আমার যা করার আমিও করবো। তিনি আরো বলেন, নিয়ম ও আইন মেনে বোরো চেয়ারম্যান নির্বাচন হয়েছে।


রাজ্যের শাসক দলের চার কাউন্সিলারের ভোট বয়কটকে সমর্থন করে আক্রমন করেছেন বিজেপি নেতা বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, বিরোধী দল শুধু নয় তৃনমুল কংগ্রেসের কাউন্সিলাররাই নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে ঐ দলের কি অবস্থা।
এর আগে আসানসোল পুরনিগমের বিরোধী বিজেপি কাউন্সিলারদের দলনেত্রী চৈতালি তেওয়ারিও এই বোরো চেয়ারম্যান নির্বাচন নিয়ে টুইটে কটাক্ষ করেছেন।
এদিন পুরনিগমের ১০ টি বোরোর নির্বাচিত চেয়ারম্যানরা হলেন ১ -এ শেখ শানদার, ২ -এ মোজাম্মিল হোসেন শাহাজাদা, ৩-এ উৎপল সিনহা, -৪-এ রাজেশ তিওয়ারি, বরো-৫-এ অনির্বাণ দাস (অনিমেষ), ৬-এ ডাঃ দেবাশীষ সরকার, ৭-এ শিবানন্দ বাউরি , ৮-এ রবি লাল টুডু, ৯-এ চৈতন্য মাজি ও ১০ এ শতাব্দী ভান্ডারীকে প্রার্থী। অনিমেষ দাস ও শেখ সানদার ছাড়া বাকি ৮ জন নতুন মুখ।

Leave a Reply