ASANSOL

কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা অব্যাহত, আর্থিক দূর্নীতির অভিযোগ তুলে তীব্র আন্দোলনের হুঁশিয়ারী একাংশ অধ্যাপকের, পাল্টা থানায় অভিযোগ উপাচার্যের

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ পরীক্ষা চলার মধ্যেই মঙ্গলবারের পরে বুধবারেও অচলাবস্থা অব্যাহত পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সদ্য তিনমাসের জন্য নতুন করে দায়িত্ব পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডঃ সাধন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে আর্থিক দূর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক অধ্যাপক, অধ্যাপিকা ও শিক্ষা কর্মীরা ।
অন্যদিকে, পাল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থার কথা জানিয়ে আসানসোল উত্তর থানায় এফআইআর করেছেন উপাচার্য ডঃ সাধন চক্রবর্তী। সেই এফআইআরে নাম রয়েছে মঙ্গলবারই পদ থেকে ডিসচার্জ করা রেজিস্ট্রার ডঃ চন্দন কোনার সহ একাধিক অধ্যাপকের।


যদিও বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের চেম্বারে ছিলেন রেজিস্ট্রার। শুধু তাই নয় এদিন তিনি উপাচার্যের বিরুদ্ধে সরব হয়ে আন্দোলন করা অধ্যাপক ও অধ্যাপিকাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এদিন তিনি জোরের সঙ্গে বলেন, গত একমাসে দায়িত্ব নেওয়ার পরে যেসব অনিয়ম দেখেছি সব সরকারের হায়ার এডুকেশন দপ্তরকে জানিয়েছি। পাশাপাশি আমাকে যে পদ থেকে ডিসচার্জ করা হয়েছে, তাও জানিয়েছি। দপ্তর আমাকে কাজ চালিয়ে যেতে বলেছে।


বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স হলে রাজ্যের শাসক দল তৃনমুল কংগ্রেস অনুমোদন দেওয়া ওয়েস্ট বেঙ্গল কলেজ এ্যান্ড ইউনিভার্সিটি প্রফেসর এ্যাসোসিয়েশন বা ওয়েবকুপার কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তরফে এক সাংবাদিক সম্মেলনে উপাচার্যর বিরুদ্ধে আর্থিক দূর্নীতি সহ একাধিক অভিযোগ করা হয়। এই সাংবাদিক সম্মেলনে ওয়েবকুপার বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কনভেনার অধ্যাপক সজল কুমার ভট্টাচার্য বলেন, গত বেশ কিছুদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে সংকটময় মুহূর্ত চলছে। এই উপাচার্যের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন উন্নয়ন সেই রকম ভাবে হয়নি। তৈরী করা হয় নি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামো। কিছু কিছু বিভাগে তো কিছুই হয়নি। তিনি আরো বলেন, বর্তমান উপাচার্যের স্ট্যাটাস কি আমরা জানিনা। উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ না দেখে নিজের স্বার্থ দেখছেন। লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি টাকা তিনি এমন কাজে ব্যবহার করছেন, তা অনেকটা আর্থিক দূর্নীতির সমান। শুধু তাই নয়, তিনি রাজ্য সরকারের মনোনীত হওয়া সত্বেও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। নানা ইস্যুতে তিনি কলেজের অধ্যাপক ও অধ্যাপিকাদের বিরুদ্ধে সরকারের কাছে ভুল বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আমরা সবকিছু বুঝতে পারার পরে তাই নিজেদের দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছি। আমরা ঠিক করেছি, এই উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে কোনরকম সহযোগিতা করবো না। সরাসরি বলতে গেলে আমরা অসহযোগিতা করবো। আমরা এই উপাচার্যকে মানছি না। আমরা তার পদত্যাগ দাবি করছি। আমরা আমাদের দাবি সরকারের যেখানে জানানোর সেখানে বলেছি।


অন্যদিকে, ওয়েবকুপা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের তোলা অভিযোগ মানতে চাননি উপাচার্য ডঃ সাধন চক্রবর্তী। তিনি এক বার্তায় বলেন আমি এইসব অভিযোগের উত্তর দিতে বাধ্য নই। যে রেজিস্ট্রারকে আমি মঙ্গলবার যে রেজিস্ট্রারকে ডিসচার্জ করেছি, তিনি জোর করে বিশ্বিবদ্যালয়ে ঢুকে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছেন। তিনি বহিরাগত। তার সঙ্গে রয়েছেন কিছু অধ্যাপক। সবাই মিলে মঙ্গলবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করছেন। এক আধিকারিককে শারীরিক ভাবে হেনস্তা করা হয়েছে। আমি সবকিছু জানিয়ে ঐ রেজিস্ট্রার সহ আরো কয়েকজনের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। উপাচার্য আরো বলেন, আমি যদি আর্থিক দূর্নীতি করি বা উন্নয়ন না করি, তাহলে সরকার আমাকে কেন রেখেছে ঐ পদে? আসল কথা হলো ঐ রেজিস্ট্রার সহ অন্যান্য অন্য এক রাজনৈতিক দলের মতাদর্শে নিয়ে এইসব করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ এইসব কিছু কড়া হাতে মোকাবিলা করবে। এফআইআর হওয়া নিয়ে অধ্যাপক সজল কুমার ভট্টাচার্য বলেন, ঐসবে পাত্তা দিচ্ছি না। যা হচ্ছে হোক। এদিকে, আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ জানায়, উপাচার্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত শুরু হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *