দামোদর নদীর জলের দূষণের কারণে চর্মরোগ থেকে বুকের রোগ নানা ভাবে ছড়াচ্ছে
আসানসোলে” স্কিন এলার্জি ও ক্যান্সার” সচেতনতায় সিএমইর আয়োজন
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্যঃ পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল দূর্গাপুর শিল্পাঞ্চল সহ আশপাশের এলাকার অনেক কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ দামোদর নদীতে গিয়ে মিশছে। সঙ্গে মিশছে আবর্জনাও। দামোদর নদীর জলের দূষণের কারণে চর্মরোগ থেকে বুকের রোগ নানা ভাবে ছড়াচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করা প্রবীণ চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এমনই অভিমত।
শনিবার রাতে আসানসোল ক্লাব একটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে ” স্কিন এ্যালার্জি এন্ড ক্যান্সার ” এ্যায়ারনেস শীর্ষক একটি সিএমই বা কন্টিনিউয়িং মেডিক্যাল এডুকেশনের আয়োজন করা হয়েছিলো। চর্মরোগ , ব্রেস্ট সহ অন্যান্য ক্যান্সার ও শিশুদের আরো বেশি মাত্রায় চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে সমাজের সমস্ত স্তরের ব্যক্তিদের ডেকে সচেতন করা জন্য এর আয়োজন করা হয়েছিলো।




বিভিন্ন শিল্পে শ্রমিকরা কাজ করতে গিয়ে তাদের নানান ধরনের যে চর্মরোগ হয় তার উপর নিজের লেখা একটি বইয়ের উদাহরণ তুলে ধরে প্রবীণ চিকিৎসক ডাঃ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, দামোদর নদীর পাশে থাকা একেবারে ঝাড়খন্ড থেকে শুরু করে দুর্গাপুর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় দীর্ঘদিন নানান ধরনের জল ও রাসায়নিক পরীক্ষার পর লক্ষ্য করেছি এই শিল্পাঞ্চলে এবং ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ সহ বিভিন্ন জায়গায় স্কিন বা চর্মরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে অন্যান্য শারীরিক সমস্যাও তৈরি হচ্ছে।
পাশাপাশি তিনি বলেন, আসানসোল দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে আরেকটি সমীক্ষায় ধরা পড়েছে যারা কয়লা খনির সাথে কাজে যুক্ত শ্রমিক তারা ঠিকঠাক গ্লাভস না পড়ে কাজ করার জন্য “কোল ডামাটাইটিজ ” নামে এক ধরনের অসুখ আক্রান্ত হচ্ছেন। যা ধীরে ধীরে ঘা হতে থাকে। তিনি আরো বলেন, এই শিল্পাঞ্চলে পাথর ও সিমেন্ট শিল্পের সঠিক যুক্তদের অনেকেই সিলিকাসিস জাতীয় এক ধরনের রোগ হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা যারা অ্যালুমিনিয়ামের কেবল জয়েন্টের কাজ করেন তাদের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, দুই হাতে ভরে যায় এক ধরনের একজিমায়। দামোদরের আশেপাশে যারা দামোদরের জল ব্যবহার করছেন তাদের মধ্যেও নানান ধরনের চর্মরোগ হচ্ছে । কিভাবে এর থেকে বাঁচতে পারেন তার জন্য প্রয়োজনে চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। অবশ্যই এই ধরনের কাজ যেসব শ্রমিকরা করেন তারা হাতে গ্লাভস ব্যবহার ও মুখে প্রয়োজনে মাস্ক পড়ার করার কথাও তিনি বলেন।
পিজি হাসপাতালের ক্যান্সারের অন্যতম বিশেষজ্ঞ এবং অধ্যাপক চিকিৎসক ডাঃ দীপ্তেন্দ্র সরকার ( ইনচার্জ, ব্রেস্ট সার্ভিসেস, আইপিজিএমইআর) ব্রেস্ট ক্যান্সার কিভাবে বেড়ে যাচ্ছে এবং সেক্ষেত্রে কি ধরনের সচেতনতা মহিলাদের নেওয়ার দরকার তার ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, এই বিষয়ে আরো সতর্ক ও সচেতন হতে হবে।
মিল্ক ব্যাংক সহ নানান কাজের সাথে যুক্ত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ অগ্নিমিতা গিরি ( ইনচার্জ, লেকটেশিয়ান সার্ভিসেস, আইসিএইচ) শিশুদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা বিশেষ করে তাদের খাওয়ার দুধ সহ একাধিক বিষয় তার বক্তব্যে তুলে ধরেন।, এই অনুষ্ঠানে প্রাক্তন অলিম্পিয়ান অর্জুন প্রাপক ক্যাপ্টেন ভগীরথ সামুইকে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়।
গোটা অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন অতীন চৌধুরী। এদিনের সিএমইতে নামী একাধিক চিকিৎসকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ, স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষেরা উপস্থিত ছিলেন।