ASANSOL

জিতেন্দ্র তেওয়ারিকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হলো, চৈতালি তেওয়ারি কাঁদতে – কাঁদতে বলেন ঈশ্বর তাকে দ্রুত ভালো করুন

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত ও দেব ভট্টাচার্যঃ বুকের ব্যথা সঙ্গে কিছুটা শ্বাসকষ্ট। বলতে গেলে একদিন আসানসোল জেলা হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা করা হলেও, কোনকিছু কমছে না আসানসোল কম্বল কান্ডে গ্রেফতার হয়ে আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র ও বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তেওয়ারির। বুকে ব্যথা অনুভব করায় বুধবার রাত আটটা নাগাদ তাকে আসানসোল জেল থেকে জেলা হাসপাতালে আনা হয়। জেলা হাসপাতালের অন কল ফিজিশিয়ান ডাঃ শুভজিৎ দত্ত এমারজেন্সি বিভাগে পরীক্ষা করে তাকে সিসিইউতে ভর্তি করেন। বুধবার রাতে তিনি সেখানেই ছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে ব্যাথা না কমায় তাকে এখানকার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ইউএসজি করতে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন তিনি বলেন, বুকে ব্যথা কমেনি। খুব কষ্ট হচ্ছে।


জেলা হাসপাতালে এই মুহুর্তে কোন কার্ডিওলজিস্ট না থাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তার শারীরিক পরীক্ষা করতে পারেননি। তার পরিবর্তে সাধারণ মেডিসিন ও ফিজিশিয়ান তাকে পরীক্ষা করেন। কিন্তু বুকের ব্যথা না কমায়, তার ইকোকার্ডিওগ্রাফি সহ বেশ কিছু পরীক্ষা করার দরকার। কিন্তু এই ব্যবস্থা এখানে নেই। তাই তাকে চিকিৎসকরা বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই মতো বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা হাসপাতালের তরফে গোটা বিষয়টি লিখিত জেল কতৃপক্ষকে জানানো হয়। তার কারণ জিতেন্দ্র তেওয়ারি এই জেল হেফাজতে রয়েছেন ১৪ দিনের জন্য। তাকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবে জেল কতৃপক্ষ।
এদিন সকাল থেকে জেলা হাসপাতালের সিসিইউর সামনে ছিলেন জিতেন্দ্র তেওয়ারির স্ত্রী ও বিজেপি কাউন্সিলরদের দলনেত্রী চৈতালি তেওয়ারি ও মেয়ে পল্লবী তেওয়ারি, কাউন্সিলর গৌরব গুপ্ত সহ অন্য বিজেপির নেতা ও কর্মীরা। চৈতালিদেবী বলেন, ইকোকার্ডিওগ্রাফি সহ বেশ কিছু পরীক্ষা করাতে হবে। কিন্তু তার ব্যবস্থা নেই। তাই তাকে রেফার করা হয়েছে বলে আমায় জানানো হয়েছে। এছাড়া তার ” স্লিপ এ্যাপনিয়া ” রয়েছে। নল দিয়ে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে।


জেলা হাসপাতালের কথায় বিকেল তিনটের পরে একটি সাধারণ অ্যাম্বুলেন্সে জেল কতৃপক্ষ তাকে বর্ধমানে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন চৈতালী তেওয়ারি । মেয়ে সহ অন্যরা দাবি করেন, একটা ভেন্টিলেটার যুক্ত অক্সিজেন সাপোর্ট সিস্টেম অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করতে হবে। চৈতালিদেবী এই ব্যাপারে জেল সুপারের সঙ্গে কথা বলেন। তখন জেলের তরফে প্রাথমিকভাবে বলা হয় তাদের কাছে তেমন কোন অ্যাম্বুলেন্স নেই। এরপর বিষয়টা নিয়ে তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। সেই সময় জেলা হাসপাতালে রোগী রেফার নিয়ে বৈঠক করতে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম বর্ধমান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক বা সিএমওএইচ ডাঃ ইউনুস খান। হাসপাতাল সুপার ডাঃ নিখিল চন্দ্র দাস ও ডেপুটি সুপার কঙ্কন রায়ের উপস্থিতিতে সিএমওএইচের চৈতালি তেওয়ারির কথা হয়। শেষ পর্যন্ত চার ঘণ্টা পরে বিকেল চারটে নাগাদ অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে জটিলতা কাটে। ভেন্টিলেশন যুক্ত এসি এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা হয়। বিকেল সাড়ে চারটের পরে জিতেন্দ্র তেওয়ারিকে আসানসোল জেলা হাসপাতাল থেকে একটি বেসরকারি লাইফ সাপোর্ট এ্যাম্বুলেন্সে করে বর্ধমান মেডিকেল কলেজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। সেই সময় কান্নায় ভেঙে পড়লো পরিবারের সদস্যরা ।

চৈতালি তেওয়ারি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার স্বামী সবসময় আসানসোলের মানুষের কি করে ভালো হয় সেই চেষ্টা করেছেন। ঈশ্বর তাকে দ্রুত ভালো করুন, আপনারা সেই প্রার্থনা করুন। উনি যেন সুস্থ হয়ে ফিরে এসে আবার মানুষের কাজ করতে পারেন। একইভাবে বাবার মাথায় হাত রেখে কাঁদতে কাঁদতে পল্লবী বলে, নিশ্চয়ই তুমি ভালো হয়ে যাবে। এরপর জিতেন্দ্র রওনা হয়ে গেলে চৈতালী দেবী, মেয়ে ও গৌরব গুপ্ত টোটো করে হাসপাতাল থেকে বাড়ি চলে যান।
উল্লেখ্য মঙ্গলবার জিতেন্দ্র তেওয়ারির ৯ দিনের পুলিশ হেফাজত শেষে কম্বল কাণ্ডে তাকে ১৪ দিনের জন্য জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন আসানসোল আদালতের সিজিএম তরুণ কুমার মন্ডল। বুধবার সন্ধ্যায় তিনি অসুস্থ হয়ে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি হন।

Leave a Reply