ASANSOLKULTI-BARAKAR

জঙ্গল থেকে গুলিবিদ্ধ যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার , খুনের অভিযোগে ধৃত দুই

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ ( Kulti News ) পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের কুলটি থানার নিয়ামতপুর ফাঁড়ির বিষ্ণু বিহার এলাকার বাসিন্দা বিট্টু সাউ(২৭) নামে এক যুবকের গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার হলো। সোমবার রাতের এই ঘটনায় গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে পুলিশ যুবকের মৃতদেহ উদ্ধারের কথা জানতো না। পরে কুলটি থানা ও নিয়ামতপুর ফাঁড়ির পুলিশ তা জানতে পারে। রাতেই আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের ডিসিপি (পশ্চিম) অভিষেক মুদি সহ পুলিশ অফিসাররা এলাকায় যান। তারা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে যে জায়গা থেকে মৃতদেহ পাওয়া যায় সেখানে তল্লাশি চালানো হয়। তখন সেখান থেকে একটি কার্তুজের খোল পুলিশ পায়। এই ঘটনায় পুলিশ সোমবার গভীর রাতেই দুই নিকট আত্মীয়কে সন্দেহবশতঃ আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছিলো। পরে মঙ্গলবার তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের নাম হলো সনু সাউ ও ছটু সাউ। সনু সীতারামপুর ও ছটু খুন হওয়া যুবকের বাড়ি যেখানে, সেই এলাকার বাসিন্দা। পুলিশের কাছে ধৃতরা জেরায় বিট্টুকে পরিকল্পনা করে গুলি চালিয়ে খুন করার কথা স্বীকার করেনি। তারা বলে, তিনজন ঐ জঙ্গলের কাছে মাঠে বসে মদ খাচ্ছিলো। তখন সঙ্গে থাকা পাইপগান থেকে গুলি চলে যায়। যদিও পুলিশ তা মানতে চায়নি। রাতেই মৃত যুবকের পরিবারের তরফে করা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ খুনের মামলা দায়ের করেছে। কি কারণে ঐ যুবককে খুন করা হয়েছে, তা পুলিশ জানার চেষ্টা করছে। তবে প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, ব্যক্তিগত কোন আক্রোশ বা পারিবারিক সম্পত্তি বিবাদের কারণে ঐ যুবককে পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে। পুলিশ ধৃতদেরকে হেফাজতে নিয়ে আরো জেরা করে খুনের আসল কারণ কি তা জানার চেষ্টা করবে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি বিট্টুর মোবাইল ফোন ও খুনে ব্যবহৃত পাইপগান কোথায় রয়েছে, তা পুলিশ জানবে ধৃতদের জেরা করে।


মৃত যুবকের শরীরের পিঠে ও মাথার পেছনে দুটি আঘাতের চিহ্ন ছিলো। বিক্রম সাউ নামে তার এক ভাই বিট্টু সাউকে সোমবার রাত আটটা নাগাদ আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসে। হাসপাতালের এমারজেন্সি বিভাগের চিকিৎসক পরীক্ষা করে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। যুবকের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে মঙ্গলবার যুবকের দেহের ময়নাতদন্ত আসানসোল জেলা হাসপাতালে।
ময়নাতদন্তে যুবকের মাথা থেকে একটি গুলি পাওয়া যায়। পিঠের দিকের আঘাত থাকলেও কোন গুলি পাওয়া যায়নি। ঐ গুলি শরীর ভেদ করে সামনে দিয়ে বেরিয়ে যায়। কিন্তু ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক নিশ্চিত হতে, মৃতদেহর এক্সরে করান। তাতেও কোন গুলি পাওয়া যায় নি।


গোটা বিষয়ে মৃত যুবকের ভাই বিক্রম কুমার সাউ বলেন, সোমবার দুপুর আড়াইটে/ তিনটে থেকে বিট্টকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। কারোর ফোন পেয়ে সে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলো। এরপর তারা খোঁজখবর শুরু করেন। বাড়ির লোকজন যখন তার মোবাইলে ফোন করেন তখন তা কেউ রিসিভ করেনি। পরে ফোন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বিট্টুর বন্ধুদের ফোন করা হলে তারা বলে যে তাদের সঙ্গে সে নেই। এতে চিন্তিত হয়ে বাড়ির লোকজন নিয়ামতপুর মোড় বাজার থেকে শুরু করে সংলগ্ন সমস্ত জায়গায় তার খোঁজ করেন। এরপর তারা সেখানে না পেয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। আবার বাড়ির আশেপাশে বিট্টুর খোঁজ করতে শুরু করেন। এরপর কোন জায়গায় না পেয়ে সন্ধ্যায় বাড়ির অদূরে পলাশ বাগান জঙ্গলে দিকে তারা যান। তাকে সেখানে তারা রক্তাক্ত অবস্থায় উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখেন। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে তারা কুলটির একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসেন। কিন্তু সেখানে বলা হয়, যুবকের শারীরিক অবস্থা ঠিক নয়। এরপর তাকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স করে নিয়ে আসা হলে এমারজেন্সি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা করে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
আরো জানা গেছে, মৃত যুবক ঝাড়খণ্ডের কোন কলেজ থেকে স্নাতক হয়। বর্তমানে চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, গুলির অবস্থান দেখে মনে হচ্ছে পেছনের দিক থেকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে ঐ যুবককে গুলি করা হয়েছে। দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করে খুনের আসল কারণ জানার চেষ্টা করা হবে।

Leave a Reply