ASANSOL

উপাচার্যের পদত্যাগ দাবির আন্দোলনের মধ্যেই আবারও অধ্যাপকদের ” ই হাজিরা “র বিঞ্জপ্তি, বিতর্কের সঙ্গে বিরোধিতা

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, দেব ভট্টাচার্য,সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত ও রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে আবারো অধ্যাপক ও অধ্যাপিকাদের ” ই- অ্যাটেনডেন্স বা ই – হাজিরা” ই – পোর্টালে দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি জারি করা হল। মাস তিনেক আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে একইভাবে অধ্যাপক ও অধ্যাপিকাদের ” ই -অ্যাটেনডেন্স” দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল । তারপরেই তা নিয়ে হইচই শুরু হয়। তখন একাংশ অধ্যাপক অধ্যাপিকারা এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তারা বলেছিলেন, যেহেতু রাজ্যে অন্য কোনও বিশ্ববিদ্যালয় এই ধরনের হাজিরার ব্যবস্থা নেই, তাই তারাও এটা মানছেন না। পরে বিষয়টি রেজিস্টারের কাছেও গেছিল।


৬ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী আবারো একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলেন, প্রত্যেক অধ্যাপক, অধ্যাপিকা আছেন যারা অধ্যাপনা করেন তাদের সবাইকেই ” ই অ্যাটেনডেন্স বা ই হাজিরা” দিতে হবে। এটা এই সংক্রান্ত নির্দিষ্ট যে পোর্টাল আছে, তাতে তা করতে হবে । বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে এটা দরকার। তাছাড়াও এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলেও এই নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের “ওয়েবকুপা ” শাখার আহ্বায়ক অধ্যাপক সজল ভট্টাচার্যকে ফোন করা হলেও তিনি এদিন ফোন ধরেননি। ফলে তার প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।


অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসে অনুমোদিত অধ্যাপকদের এই সংগঠনের জেলা সভাপতি স্থানীয় কলেজের অধ্যাপক বীরু রজক বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি আমরা কলেজে যেহেতু হাজিরা দিই তাই সেটা বিশ্ববিদ্যালয় দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু সেটা ই-পোর্টালে না করে সশরীরে আমাদের মতই খাতায় হাজিরা দেওয়া উচিত। উপাচার্যকে পছন্দ করেন এমন দু-একজন অধ্যাপক অধ্যাপিকার স্বার্থেই তিনি এই ধরনের ই-পোর্টালে হাজিরার ব্যবস্থা রাখছেন। এতে যারা বাইরে যাবে বা অন্য কাজ করার সময়ও বাইরে থেকেই কিন্তু এই হাজিরা দিয়ে দিতে পারেন। উপাচার্য নাকি বলছেন যারা বাইরে কোন সেমিনার বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে থাকছেন তারা বাইরে থেকে অনলাইনে ক্লাসের কারণে “ই- এটেনটেন্ডেন্স” দিতে পারেন । সে ক্ষেত্রে আমি মনে করি যিনি এই সব কাজে বাইরে যান তিনি অন ডিউটিতেই বাইরে যান। সেটাই তার হাজিরা। অন্যদিকে বামপন্থী অধ্যাপকদের সংগঠন ওয়েবকুটার জেলা সম্পাদক চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি বাইরে থেকে ফিরছি । বিষয়টি খোঁজ নিয়ে কথা বলে মন্তব্য করব।


এই বিষয় উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে ইনফরমেশন কমিউনিকেশন টেকনোলজির (ই সি টি) পাইলট প্রজেক্ট একমাত্র কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শুরু হয়েছে। যেখানে একজন পড়ুয়ার ভর্তির শুরু থেকে তার হাতে পরীক্ষার ফলাফল বা সার্টিফিকেট তুলে দেওয়ার কাজ সবটাই এই পদ্ধতিতেই হয়ে থাকে। পড়ুয়া ও শিক্ষা কর্মীরাও এই ভাবেই হাজিরা দিয়ে থাকেন। স্বাভাবিকভাবেই একজন অধ্যাপক যখন ই-পোর্টালে হাজিরা দেন তখন তার বিভাগীয় প্রধান সঙ্গে সঙ্গে ঐদিনই অনুমোদনও দেবেন। এ নিয়ে বিতর্ক থাকা উচিত নয়। একথা সত্যি আগে আরেকবার এই বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল। আমি আশা করবো এবার সমস্ত অধ্যাপক অধ্যাপিকারা এই নির্দেশ মানবেন।


প্রসঙ্গতঃ এই মুহূর্তে এই বিশ্ববিদ্যালয় একশ্রেনীর অধ্যাপক, অধ্যাপিকা, কর্মচারী ও পড়ুয়াদের একাংশ উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছেন তা শুরু হয়েছে গত ১৩ মার্চ থেকে। এই আন্দোলনের জন্য উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে পারেননি। তিনি কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। হাইকোর্টের নির্দেশে তিনি আপাততঃ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে পারছেন। পাশাপাশি আন্দোলনও চলছে। স্বাভাবিকভাবেই আবার নতুন করে হাজিরা নিয়ে এই বিজ্ঞপ্তি জারি ঐ আন্দোলনের আগুনে ঘি ঢালবে কিনা, তা সময় বলবে।

Leave a Reply