ASANSOL

আবারও সিবিআইয়ের ” প্রভাবশালী ” তত্ত্বে আটকালো জামিন

দ্বিতীয় চার্জশিটে নাম থাকা ইসিএলের প্রাক্তন ডিরেক্টর ও সিআইএসএফের ইন্সপেক্টরের আরো ১৪ দিন জেল

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ কয়লা পাচার মামলায় আরো ১৪ দিনের জেল হেফাজত হলো ইসিএলের প্রাক্তন ডিরেক্টর টেকনিক্যাল ( অপারেশন তথা ভারপ্রাপ্ত সিএমডি বা চেয়ারম্যান কাম ম্যানেজিং ডিরেক্টর) সুনীল কুমার ঝাঁ ও সিআইএসএফের ইন্সপেক্টর আনন্দ কুমার সিংয়ের। কয়লা পাচার মামলায় দ্বিতীয় চার্জশিটে নাম থাকা এই দুজনকে ১৪ দিন হেফাজত শেষে সোমবার আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে পেশ করা হয়েছিলো। এদিন দুপক্ষের আইনজীবীর সওয়াল-জবাব শেষে দুজনের জামিন নাকচ করে আগামী ১২ জুন এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে বলে আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী নির্দেশ দেন।

गौ तस्करी CBI चार्जशीट


এই দুজনের আইনজীবী শেখর কুন্ডু এদিন তাদের যে কোন শর্তে জামিন দেওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু সিবিআইয়ের তরফে আগের দিনের মতোই ” প্রভাবশালী ” তত্ত্বে এই দুজনের জামিনের বিরোধিতা করেন আইনজীবী রাকেশ কুমার। তিনি বলেন, এখনো তদন্ত বাকি আছে। নতুন নতুন তথ্য উঠে আসছে। সেই সবকিছু পরীক্ষা ও যাচাই করা দরকার। এমন ক্ষেত্রে তাদেরকে জামিন দেওয়া হলে তদন্ত ব্যহত হবে। সাক্ষীদের প্রভাবিত করার চেষ্টা হতে পারে। তাই তাদের জামিন নাকচ করে জেল হেফাজত পাঠানো হোক।


এদিন সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে শুনানির শুরুতে ইসিএলের প্রাক্তন কর্তা ও সিআইএসএফের ইন্সপেক্টরের জামিনের সওয়াল করতে গিয়ে আইনজীবী শেখর কুন্ডু, এই মামলায় সবাইকে জামিন দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, চার্জশিটে নাম থাকা অনেকে আদালতে হাজিরা দিয়েই জামিন পেয়েছে। সিআইএসএফের ইন্সপেক্টর ফারাক্কায় থাকেন। তার কর্মস্থল সেখানে। যেদিন যেদিন সিবিআই ডেকেছে সেদিন সে গিয়ে সহযোগিতা করেছেন। তার পালাবার কোন কারণ নেই। বাড়ি রয়েছে। এছাড়াও যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, তখন বেশির ভাগটাই তিনি বাইরে বা ছুটিতে। বিচারক জানতে চান, সিআইএসএফ ইন্সপেক্টর দায়িত্বে থাকাকালীন কি কয়লা চুরি নিয়ে এফআইআর করেছিলন?

তখন সিআইএসএফ ইন্সপেক্টর নিজেই বলেন, ৫/৬ টা এফআইআর করেছিলাম। শেখর কুন্ডু আরো বলেন, ২০১৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর থেকে সুনীল কুমার ঝাঁ ইসিএলের ডিরেক্টরের পদে রয়েছেন। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। তার বয়স ৬৪ বছর। তিনি বর্তমানে দিল্লিতে থাকেন ২০১৭ সালে একটি টিউমারে অপারেশন হয়েছে ও পায়ে প্লেট লাগানো রয়েছে। তার বাড়ি সার্চ হয়েছে। ইনকাম ট্যাক্স তার কাছ থেকে কোন আয় বহির্ভূত সম্পত্তি পায়নি। তিনি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরে পিএফ ও গ্র্যাচুয়িটি পেয়েছেন। তাই তাদেরকে যে কোনো শর্তে জামিন দেওয়া হোক।
এরপর পাল্টা জবাবে সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, এই মামলার সূত্রপাত ২০১৫ সাল থেকে। এর এফআইআর ২০২০ সালে হয়েছে। দুজনেই প্রভাবশালী। এরা বৃহত্তর যড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত। তাই আরো তদন্তের দরকার। আরো সাক্ষী আছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের আগে জামিন দেওয়া হলে তদন্তে প্রভাব পড়বে। শেষ পর্যন্ত সিবিআইয়ের তথ্যে শিলমোহর দিয়ে বিচারক দুজনের জামিন নাকচ করে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।


প্রসঙ্গতঃ গত বৃহস্পতিবার ১১ মে নোটিশ দিয়ে সুনীল কুমার ঝাঁ ও আনন্দ কুমার সিংকে সিবিআই জেরার জন্য কলকাতার নিজাম প্যালেসে ডেকে পাঠায়। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে সেদিন রাতে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। পরের দিন শুক্রবার ১২ মে তাদেরকে আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে পেশ করে চারদিনের হেফাজত নিয়েছিলো কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।
উল্লেখ্য, এই কয়লা পাচার মামলায় ২০২২ সালের ১৯ জুলাই সিবিআই প্রথম চার্জশিট জমা দিয়েছিলো আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে। তাতে ৪১ জনের নাম ছিলো। তারমধ্যে ৩৯ জন এখন জামিনে বাইরে আছে। বাকি ২ জনের মধ্যে অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত অনুপ মাঝি ওরফে লালা সুপ্রিম কোর্টের রক্ষা কবচে আছে। পলাতক রয়েছে। বিনয় মিশ্র। এর ১০ মাস পরে গত ২০ মে সিবিআই এই মামলায় দ্বিতীয় চার্জশিট জমা দিয়েছে। তাতে নাম রয়েছে সুনীল কুমার ঝাঁ ও আনন্দ কুমার সিংয়ের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *