ASANSOL-BURNPUR

বার্ণপুরে নবম শ্রেণির ছাত্রর খুনের ঘটনা, তিনমাসের মধ্যে ধৃত তিনজনের বিরুদ্ধে জেলা আদালতে চার্জশিট জমা পুলিশের

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ আসানসোলের হিরাপুর থানার বার্ণপুরের রামবাঁধের বার্নপুর বয়েজ হাইস্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র শুভম সিসকার খুনের ঘটনায় তিন মাসের মধ্যে চার্জশিট জমা পড়লো আসানসোল জেলা আদালতে।
হিরাপুর থানা সূত্রে জানা গেছে, সোমবার এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার হওয়া তিনজনের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমান সহ এই চার্জশিট জমা দিয়েছেন তদন্তকারী অফিসার বা আইও রাজেশ ভট্টাচার্য। ধৃতরা হলো সুরজ মন্ডল, বিট্টু মন্ডল ও উদয় মন্ডল ওরফে আকু। হিরাপুর থানার বার্ণপুরের শ্যামবাঁধের বাসিন্দা সুরজ ও বিট্টু সম্পর্কে দাদা ও ভাই। উদয় তাদের মামা। ধৃতদের বিরুদ্ধে পুলিশ ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৬৩, ৩৬৪, ৩৬৪/এ, ৩০২, ১২০/বি, ৩৭৯, ৪১১ ও ৩৪ নং ধারায় মামলা দায়ের করেছে। ধৃত তিনজনই বর্তমানে জেল হেফাজতে রয়েছে।
নিখোঁজ হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পরে গত ২৮ মার্চ বার্ণপুরের দামোদর নদী লাগোয়া ডিহিকা ভূতনাথ মন্দিরের অদূরে একটি জঙ্গলের পাশে জলের পাইপলাইনের ঝোপঝাড়ের মধ্যে ১৪ বছরের শুভমের দেহ মেলে উদ্ধার করা হয়েছিলো। দেহ ক্ষতবিক্ষত ও পচন ধরে ছিলো।
এর একদিন আগে শুভমের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোনটি পাওয়া যায় আসানসোল রেল স্টেশনের কাছে রেলপারের রেললাইনের কাছ থেকে।

file photo


প্রসঙ্গতঃ গত ২৬ মার্চ রবিবার দুপুর ১টা নাগাদ বাড়ি থেকে শুভম বেরিয়েছিল। সে তখন তার মাকে বলেছিলো, তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এসে খাবার খাবে। সঙ্গে ছিল তার মোবাইল ফোন। তারপর সে আর বাড়িতে ফেরেনি। বাড়ির লোকেরা তার মোবাইলে বারবার ফোন করলেও দেখা যায় তার মোবাইল সুইচ অফ। তার আত্মীয়-স্বজন ,পরিজনদের বাড়ি খুঁজেও তার খোঁজ মেলেনি। এরপর হিরাপুর থানায় গোটা ঘটনার কথা জানানো হয়েছিলো।
শুভমের বাবা মনোজ সিসকার লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ একটি মিসিং ডায়েরি করে। হিরাপুর থানার ওসি প্রসেনজিৎ রায় সহ অন্য অফিসাররা তদন্তে নামেন। শেষ পর্যন্ত দামোদর নদীর কাছে ভূতনাথ মন্দিরের অদূরে একটি জঙ্গল সংলগ্ন পাইপলাইনে ঝোপঝাড়ের মধ্যে হাত বাঁধা ও গলায় কাপড় বাঁধা অবস্থায় শুভমের দেহ উদ্ধার হয়।


আসানসোল জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পরে পুলিশ জানতে পারে, তাকে শ্বাস রোধ করে খুন করা হয়েছে। পুলিশ প্রথমে গ্রেফতার করে শুভমের বন্ধু সুরজ মন্ডল ও তার দাদা বিট্টু মন্ডলকে। তাদেরকে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে গোটা ঘটনার পেছনে রয়েছে তাদের মামা উদয় মন্ডল ওরফে আকু। কিন্তু সে বেপাত্তা রয়েছে। এরপর পুলিশ তার খোঁজ শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত প্রায় ১ মাস পরে ২৬ এপ্রিল বিহারের ভাগলপুর জেলার বাথ থানার মনিহারি থেকে উদয়কে হিরাপুর থানার পুলিশ গ্রেফতার করে। পুলিশ জানতে পারে, ধৃতর বিরুদ্ধে বাথ থানায় আগে থেকেই চুরি ও ডাকাতির মতো ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৫ টি মামলা রয়েছে।
পুলিশের দাবি, ধৃতরা তাদের অপরাধের কথা স্বীকার করেছে। মুলতঃ শুভমকে কিডন্যাপ করে বাড়ি থেকে মোটা রকমের মুক্তিপন আদায়ের পরিকল্পনা করা হয়েছিলো। সেই জন্য সুরজ মন্ডল বন্ধু শুভমকে ফোন করে ডাকে। কিন্তু পরে বুঝতে পারে যে, শুভমের বাড়ি থেকে কোন টাকা পাওয়া যাবে না। তখনই তারা শুভমকে খুন করে। মৃতদের ফেলে বার্ণপুরে। তার মোবাইল ফোন ফেলে আসা হয় আসানসোলে। যাতে পুলিশ কোনভাবেই কোন হদিশ না পায়। যদিও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। পুলিশ নিখুঁত তদন্ত করে তিনজনকে ধরে ও খুনের কিনারা করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *