পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদ বিরোধী শুন্য, পঞ্চায়েত সমিতিতে শক্তি বাড়ালো দুই বিরোধী দল
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ লড়াইয়ে খুব কাছে না থাকলেও, এবারের পঞ্চায়েত ভোটে পশ্চিম বর্ধমান জেলার ৮ ব্লকে পঞ্চায়েত সমিতিতে কিছুটা হলেও নিজেদের শক্তি বাড়ালো দুই বিরোধী দল বিজেপি ও সিপিএম। যেমনটা গ্রাম পঞ্চায়েতে হয়েছে। তবে জেলা পরিষদে কোন কিছুই করতে পারেনি বিরোধীরা। ২০১৮ সালের মতো এবারেও তাদের ঘর শুন্য। এবারে কাঁকসা ব্লকে জেলা পরিষদে একটি আসন বেড়ে ২ থেকে ৩ হয়েছে। তার পশ্চিম বর্ধমানের জেলা পরিষদের ১৮ টি আসনেই লড়াই হয়। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কোন জয় না থাকায় ৮ জুলাই ১৮ টি আসনেই ভোট হয়েছিল। তৃনমুল কংগ্রেসের পাশাপাশি দুই প্রধান বিরোধী দল বিজেপি ও বামফ্রন্ট ১৮ টি আসনেই প্রার্থী দেয়। কংগ্রেস জেলা পরিষদের ১০ টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিলো। মঙ্গলবার সকালে গণনা শেষ হওয়ার পরে দেখা যায় ১৮ টি আসনেই জয়ী হয়েছেন শাসক দলের প্রার্থীরা। ২০১৮ সালে জেলা পরিষদের ১৭ টি আসনই দখল করেছিলো শাসক দল। অন্যদিকে, ২০১৮ সালে পশ্চিম বর্ধমান জেলার ৮ টি ব্লকের ৮ টি পঞ্চায়েত সমিতির ১৬২ টি আসনের মধ্যে ১৬১ টি পায় তৃনমুল কংগ্রেস। ১ টি পায় সিপিএম । বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পঞ্চায়েত সমিতিতে শাসক দল ৫৯ শতাংশ আসনে জয়ী হয়েছিলো ।




এবারে জেলার ৮ টি ব্লকের ৮ টি পঞ্চায়েত সমিতিতে আসন সংখ্যা ১০ টি বেড়ে হয়েছে ১৭২। তার মধ্যে ১৮ টিতে শাসক দল তৃনমুল কংগ্রেস বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছে। শতাংশে ১০ এর সামান্য বেশি। ভোটের প্রচার চলাকালীন পান্ডবেশ্বর ব্লকের তৃনমুল কংগ্রেসের প্রার্থী মদন বাউরির মৃত্যু হয়। সেই কারণে ঐ আসনে নির্বাচন কমিশন ভোট স্থগিত করে দেয়। বাকি ১৫৩ টি আসনে গত জুলাই ভোট হয়েছিল। মঙ্গলবার সকালে ভোট গণনা শেষ হওয়ার পরে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানানো হয়েছে, ভোট হওয়া ১৫৩টি আসনের মধ্যে ১৪৭ টিতে জয় পেয়েছে শাসক দল। সবমিলিয়ে ১৭১ টি আসনের মধ্যে শাসক দলের দখলে যায় ১৬৫ টি আসন। তিনটি করে আসনে জয় পেয়েছে বিজেপি ও সিপিএম। পান্ডবেশ্বর ( ১৭), দূর্গাপুর- ফরিদপুর ( ১৮), জামুড়িয়া (২৫), সালানপুর ( ২৮) ও বারাবনিতে ( ২৩) বিরোধীরা কোন আসন পঞ্চায়েত সমিতিতে পায়নি। অন্ডাল ব্লকের ২৩ টি আসনের মধ্যে তৃনমুল কংগ্রেস ২২ টি ও বিজেপি ১ টি জেতে। একইভাবে রানিগঞ্জ ব্লকের ১৬ টি আসনের মধ্যে ১৪ টি তৃনমুল ও ২ টি সিপিএম পায়। কাঁকসা ব্লকের ২১ টি আসনের মধ্যে ১৮ টি পায় তৃনমুল। এই ব্লকে বিজেপি ২ ও সিপিএমের দখলে গেছে ১ টি আসন।
এই জেলার ৬২ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০২০ আসনের মধ্যে ১০২০ টি আসনের ফল বেরিয়েছে। তাতে শাসক দল তৃনমুল কংগ্রেস পেয়েছে ৯৪১। সিপিএমের দখলে যায় ৫০ টি আসন। ২৫টি আসনে বিজেপির প্রার্থীরা জয় পেয়েছে। কংগ্রেস একটি আসনে জয় না পেলেও, নির্দলেরা ৪ টি আসনে জয়ী হয়েছেন। জেলায় একমাত্র রানিগঞ্জ ব্লকের আমড়াসোঁতা গ্রাম পঞ্চায়েত সিপিএম ( ৩-২) জিতে নিজেদের দখলে রেখেছে। ২০১৮ সালেও এই পঞ্চায়েত সিপিএম জিতেছিলো।
শাসক দলের তরফে পঞ্চায়েতের তিন স্তরে দলের সাফল্যকে এলাকার মানুষ ও উন্নয়নের জয় বলে জানায়। তবে শাসকের এই দাবি বিরোধীরা মানতে চায়নি। বিজেপির জেলা সভাপতি দিলীপ দে বলেন, গোটা বাংলার মানুষেরা দেখেছেন কি ভোট হয়েছে। পুলিশ, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে কাজে লাগিয়ে শাসক দল প্রার্থীর মনোনয়ন থেকে ভোট গণনা পর্যন্ত সব জায়গায় সন্ত্রাস চালিয়েছে। যেসব আসনে সংগঠনের জোরে, শাসক দলের অত্যাচার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পেরেছি সেখানে দলের প্রার্থী জিতেছে। তিনি বলেন, দলের তরফে পঞ্চায়েত ভোটের একটি রিপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, ২০১৮ সালের তুলনায় এবারের পঞ্চায়েত ভোটে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে আসন কিছুটা হলেও বেড়েছে। এটা অবশ্যই ভালো দিক। গ্রামবাংলার মানুষেরা কিছুটা হলেও আস্তে আস্তে বামেদের উপর ভরসা রাখতে শুরু করেছে। আরো কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলে, ফল অন্য রকম হতো।
যদিও, বিরোধীদের অভিযোগ মানতে চাননি তৃনমুল কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন তরফে দাসু। তিনি বলেন, বিরোধীদের সংগঠন বলে কিছু নেই। মানুষেরাও তাদের পাশে নেই। তাই নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে আমাদেরকে দোষারোপ করছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে বাংলার মানুষের পাশে থেকে কাজ করেন, তার প্রমাণ এই ভোট।