ASANSOLBARABANI-SALANPUR-CHITTARANJAN

আসানসোলে ঝাড়খণ্ডের বিডিওর চারচাকা গাড়ির সঙ্গে মোটরবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষ, মৃত ১, আহত দুই নবজাতক সহ ৭

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ* ঝাড়খণ্ডের একটি ব্লকের বিডিওর চারচাকা গাড়ির সঙ্গে মোটরবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলো। রবিবার বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের আসানসোল উত্তর থানার কন্যাপুর ফাঁড়ির অন্তর্গত লালগঞ্জে সালানপুর এরিয়া অফিস কোয়ার্টার মোড়ে। জানা গেছে, সামন থেকে আসা মোটরবাইকটিকে বাঁচাতে গিয়ে চারচাকা গাড়িটি রাস্তার পাশে একটি দোকানের দেওয়ালে গিয়ে ধাক্কা মারে। তাতে গাড়ির সামনের অংশটি একবারে দুমড়ে মুচড়ে যায়। এই ঘটনায় মোটরবাইক চালকের মৃত্যু হয়। আহত হয়েছেন মোটরবাইক চালকের সঙ্গী। এছাড়াও আহত হয়েছেন চারচাকা গাড়ির চালক সহ আরো ৬ জন। তার মধ্যে দুজন নবজাতকও আছে। প্রত্যেকেই আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। দুই নবজাতককে জেলা হাসপাতালের এসএসসিইউ বা সিক নিউনেটাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।
আসানসোলের হিরাপুর থানার বার্ণপুরের নবঘন্টি গোয়ালপাড়ার বাসিন্দা মৃত মোটরবাইক চালকের নাম শ্যামল মন্ডল (৫০)। মৃত মোটরবাইক চালকের সঙ্গী অজয় গোস্বামী (৪৯) রেল শহর চিত্তরঞ্জনের বাসিন্দা। জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, অজয় গোস্বামীর শারীরিক অবস্থা যথেষ্টই সংকটজনক। তবে বাকিদের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল।


পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কালো রঙের চারচাকা গাড়িটি চালাচ্ছিলেন ঝাড়খণ্ডের দুমকা জেলায় মাসালিয়া ব্লকের বিডিও পঙ্কজ কুমার রবি (৩০)। তার সঙ্গে ঐ গাড়িতে ছিলেন তার স্ত্রী পায়েল দাস (২৮), ২১ দিনের দুই যমজ নবজাতক, বাবা রাম লক্ষণ রাম (৫১) ও মা সুমিত্রা দেবী (৪৮)। বিডিওর স্ত্রী পায়েল দাস ২১ দিন আগে দূর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে যমজ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। পরে ছুটি হওয়ার পরে বিডিও স্ত্রী ও নবজাতকদের নিয়ে মাসালিয়া ব্লকে ফিরে যান।
আরো জানা গেছে, সোমবার সকালে দূর্গাপুরের ঐ বেসরকারি হাসপাতালে দুই নবজাতকের পরীক্ষা করানোর দিন ছিলো। সেই কারণে এদিন সকালে বিডিও পঙ্কজ কুমার রবি নিজে গাড়ি চালিয়ে স্ত্রী, দুই নবজাতকের সঙ্গে বাবা ও মাকে নিয়ে দূর্গাপুরের হাসপাতালে আসেন। দুপুরে দুই সন্তানের চিকিৎসকের কাছে পরীক্ষা করানোর পরে একইভাবে বিডিও গাড়ি চালিয়ে ঝাড়খণ্ড ফিরছিলেন। বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ আসানসোল উত্তর থানার কন্যাপুর ফাঁড়ির অন্তর্গত লালগঞ্জে ইসিএলের সালানপুর এরিয়া অফিস কোয়ার্টার মোড়ের কাছে বিডিওর গাড়ির সামনে আচমকাই বারাবনির গৌরান্ডির দিক থেকে একটি মোটরবাইক চলে আসে। বিডিও মোটরবাইকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ এড়াতে যথাসম্ভব চেষ্টা করেন। কিন্তু তা না হওয়ায় গাড়িটি মোটরবাইক সহ রাস্তার পাশে জনৈক বিলু রায়ের রড ও সিমেন্ট বিক্রির দোকানের দেওয়ালে গিয়ে ধাক্কা মারে। এর ফলে চারচাকা গাড়ির সামনের অংশটি একবারে দুমড়ে মুচড়ে যায়। শব্দ পেয়ে আশপাশের লোকেরা দৌড়ে আসেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ দুটি গাড়ির আহত সবাইকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসে। তারমধ্যে শ্যামল মন্তলকে চিকিৎসক পরীক্ষা করে মৃত বলে ঘোষণা করেন। দুই নবজাতক সহ বাকি ৭ জনকে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।


ঝাড়খণ্ডের রাঁচির বাসিন্দা বিডিও পঙ্কজ কুমার রবি বলেন, আচমকাই গাড়ির সামনে মোটরবাইক চলে আসে। অনেক বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পারিনি। তবে এয়ারব্যাগ খুলে যাওয়ায় আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছি।
জানা গেছে, মোটরবাইকে থাকা দুজন বারাবনির গৌরান্ডি এলাকার একটি বেসরকারি কারখানায় চাকরি করেন। মনে করা হচ্ছে তারা ডিউটি শেষে আসানসোলে ফিরছিলেন।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তের পরে অনুমান, মোটরবাইকটি কোন গাড়িকে ওভারটেক করে ঐ চারচাকা গাড়ির সামনে চলে আসে। তখনই এই ঘটনাটি ঘটে। মোটরবাইকে থাকা দুজনের পরিবারের সদস্যদের ঘটনার কথা জানিয়ে খবর দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply