ASANSOL

ডেঙ্গি নিয়ে সতর্ক আসানসোল পুরনিগম, চলছে এলাকায় সমীক্ষা ও নজরদারি

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ বর্ষাকাল চললেও, এবার বৃষ্টি প্রায় হয়নি বললেই চলে আসানসোল শিল্পাঞ্চলে। ফলে জল জমার পরিমাণটা তুলনামূলক কম। কিন্তু শিল্পাঞ্চল জুড়ে প্রচুর খাটাল থেকে নর্দমায় গোবর ফেলে বন্ধ করা বা নোংরা পরিবেশ তৈরি হওয়ায় সমস্যা আছে। সেই সঙ্গে এমন কিছু বহুতলের বেশ কিছু আবাসন আছে, যেখানে আবাসনের বাসিন্দারা পিছনের ফাঁকা জায়গায় বা ড্রেনের মধ্যে নোংরা ফেলে দুর্গন্ধময় পরিবেশ তৈরি করছেন। একইভাবে কিছু কিছু নিচু জমি আছে যেখানে জল এমনিতেই জমে। কোথাও কোথাও কেউ কেউ কাঁচা নর্দমা তৈরি করে ফেলেছেন। সঙ্গে পুরনো জিনিসপত্রে বাড়ির ছাদে, ব্যালকনিতে বা কোন কোন দোকানের সামনে ও কারখানার ভেতরে রাখা বিভিন্ন পাত্রে জল জমে থাকার অভিযোগ রয়েছে। আর এইসব জমা জলে মশার জন্ম হয়। এইসব থেকে এই সময় ডেঙ্গির উপদ্রব শুরু হয়।
আসানসোল পুরনিগম এলাকায় এই মরশুমে এখনো পর্যন্ত ৮ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে পুরনিগমের স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে। তার মধ্যে ৬ জন আসানসোলেরই বাসিন্দা। একজন কলকাতা ও একজন জামশেদপুর থেকে ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে এসেছিলেন ।


আসানসোল পুরনিগমের স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিক চিকিৎসক ডাঃ দীপক গাঙ্গুলি বলেন, পুরনিগমের পক্ষ থেকে ৬০০ জনকে নোটিশ ধরানো হয়েছে । তাদের দশ থেকে পনের দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এই নোটিশ যাদেরকে এই নোটিশ দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে বিভিন্ন থানাও আছে।থানার সামনে পুরনো আটক করা বিভিন্ন ধরনের গাড়িতে জল জমে আছে। তার জন্য থানা গুলিকে নোটিশ দিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রায় ২০০ খাটাল মালিক , মার্কেট কমপ্লেক্স ও টায়ারের একাধিক রিপেয়ারিং দোকান আছে তাদেরও এই নোটিশ ধরানো হয়েছে।


তিনি আরো বলেন, আসানসোল পুরনিগমের কুলটির সোদপুর ও আসানসোলের রেলপারের ওকে রোডে ক্লিনিকে দুটি ইউনিট আছে। সেখানে প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে ১০০ জনের ৪৮ ঘন্টা জ্বর হবার পরেই ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুর টেস্ট করানো হচ্ছে। তাছাড়াও আসানসোল জেলা হাসপাতালে আলাদা করে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুর পরীক্ষা হয়। পুরনিগম এলাকার যে কোন মানুষ কোন জায়গায় জল জমে থাকা বা ডেঙ্গি সংক্রান্ত কোন খবর পুরনিগমে জানাতে পারেন। তা জানানোর জন্য একটি বিশেষ ফোন নম্বরে ফোন করে জানাতে পারেন। নম্বরটি হল ৭৪৭৯০০১৮৭৫। ২৪ ঘন্টা এই পরিষেবা চালু থাকছে।

এছাড়াও পুরনিগমের ৯৩৯ টি টিম রয়েছে। সেই টিমের সদস্যরা নিয়মিত বিভিন্ন বাড়িতে যাচ্ছেন ও খোঁজখবর নিচ্ছেন। আচমকা তারা বিভিন্ন ঘর, দোকান বা আবাসনের ভেতরে গিয়েও দেখে আসছেন। কোথাও জল জমার ব্যবস্থা আছে কিনা এবং সেই রকম কিছু পেলে সঙ্গে সঙ্গে স্টেট আরবান ডেভেলপমেন্ট অথোরিটি বা সুডার দেওয়া অ্যাপস এ সেই ছবি ও তথ্য পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন সেই রিপোর্ট পুরনিগমেও আসছে।, তিনি বলেন, আসানসোল পুরনিগম এলাকা জুড়ে আলাদা করে ডেঙ্গি প্রচারে ও সচেতনতা বাড়াতে একটি গাড়ি সর্বত্র ঘুরছে ।
প্রসঙ্গতঃ, গত বছর ১৯৯ জন আসানসোল পুরনিগম এলাকায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু একজনেরও মৃত্যু হয়নি।
তাই পুরনিগমের তরফে এবার আগাম সতর্কতা নেওয়া হয়েছে।


অন্যদিকে পশ্চিম বর্ধমানের জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বা সিএমওএইচ ডাঃ মহঃ ইউনুস খান বলেন, দুর্গাপুরের পলাশডিহায় দুই পর্যায়ে মোট ২৬ জনের ডেঙ্গি পজিটিভ কেস পাওয়া গেছে। জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত দুর্গাপুরে ৩৪ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি আরো জানা, আসানসোল মহকুমায় জানুয়ারি থেকে এখনো পর্যন্ত মাত্র ১০ টি ডেঙ্গির কেস হয়েছে। তারা সকলেই চিকিৎসার পরে সুস্থ হয়ে গেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *