ASANSOLKULTI-BARAKAR

চরম পরিনতি ডেকে আনলো সাপ ধরার নেশাকে, এক ছোবলেই মৃত্যু যুবকের

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল ও কুলটি, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্যঃ সাপ ধরার একটা নেশা ছিলো। কোন জায়গায় সাপ দেখা গেছে, শুনলেই দৌড়ে চলে গিয়ে, সেই সাপকে জঙ্গলে ছেড়ে আসতো। আর বলতো সাপকে মারবে না। শেষ পর্যন্ত সেই নেশাই চরম পরিনতি ডেকে আনলো জীবনে। মাত্র ২০ বছর বয়সেই বিষাক্ত ” স্পেকটকাল কোবরা বা খরিশ “র এক ছোবলে মৃত্যু হলো এক যুবকের। ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার বিকেলে। আসানসোল জেলা হাসপাতালে সন্ধ্যে ছটা নাগাদ ঐ যুবকের মৃত্যু হয়। আসানসোলের কুলটি থানার কল্যানেশ্বরী ফাঁড়ির ডুবুরডিহি নতুন বস্তি এলাকার বাসিন্দা মৃত যুবকের নাম মনু দে (২০)। সোমবার সকালে আসানসোল জেলা হাসপাতালে যুবকের মৃতদেহর ময়নাতদন্ত হয়।


যদিও, মৃত্যুর পরে যুবকের পরিবারের সদস্যরা হাসপাতাল কতৃপক্ষের কাছে মৃতদেহর ময়নাতদন্ত না করার দাবি করেছিলেন। তারা বলেছিলেন, ওঝার কাছে নিয়ে গিয়ে ঝাঁড়ফু্ক করালেই যুবক বেঁচে যাবে। কিন্তু পরিবারের সদস্যদের সেই দাবি হাসপাতাল কতৃপক্ষ পত্রপাঠ নাকচ করে দেয়। জানানো হয়, সোমবার সকালে মৃতদেহর ময়নাতদন্ত হলে, তা পুলিশ দেবে।


জানা গেছে, মনু দে” র বাবা পিন্টু দে আগে গাড়ি চালানোর কাজ করতো। বর্তমান তিনি কোন কাজ করেন না। তারা তিন ভাই। পুরুলিয়ার একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করা মনু দে ‘র দাদা মন্টু দে ুএদিন বলেন, ভাইয়ের খুব ছোট বয়স থেকেই সাপ ধরারএকটা নেশা ছিলো। প্রথম দিকে সে এমনি ছোট ছোট সাপ ধরতো। পরে নিজের থেকেই বড় সাপ ধরা রপ্ত করে। কোন জায়গায় সাপ রয়েছে খবর পেলেই মনু সেখানে দৌড়ে যেতো। নিজের কায়দায় সে সেই সাপ ধরতো ও দূরের জঙ্গলে ছেড়ে আসতো। দাদার মুখ থেকেই জানা গেলো চার বছর আগে মনুকে একটা চিতি সাপ কামড়ায়। কিন্তু তখন সে কোন চিকিৎসা করায়নি। গাছের শেকড় লাগিয়ে সে নিজেকে ঠিক করে নেয়। তারপর তার সাপ ধরার নেশা আরো বেড়ে যায়। বাড়ির লোকেরা বিপদের কথা আঁচ করে, তাকে এইভাবে সাপ ধরতে মানা করতো। কিন্তু সে তা শুনতো না। সাপুড়েরা সাপকে ঝুড়িতে আটকে রেখে খেলা দেখাতো। যে কারণে মনু এলাকায় কোন সাপুড়ে দেখলেই রেগে যেতো। সেই সাপুড়েকে এলাকা ছাড়া করতো।


জানা যায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সাপ ধরতে গেলে মনুকে কামড়ায়। তখন সে একদিনের জন্য আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তিও হয়। সেই সময় চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে সে বাড়ি ফিরে যায়। এই ঘটনার বাড়ির লোকেরা তাকে আবারও সতর্ক করে। কিন্তু সে তা শোনেনি।
রবিবার দুপুরে মনু খবর পায় যে কল্যানেশ্বরী এলাকায় সাপ রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে সে সেখানে যায়। একটা জঙ্গল থেকে সে একটা বড় ও ছোট দুটো ” স্পেকটেকাল কোবরা বা খরিশ ” ধরে। ছোট দুটো সাপকে সে সেখানেই সে ছেড়ে দিয়ে, বড়টাকে মাইথনের জঙ্গলে ছাড়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু অসাবধানতার কারণে সে সাপ তার বাঁহাতের একটা আঙ্গুলে ছোবল মারে। এরপর সে বাড়ি আসে ও ঘটনার কথা জানায়। এরপর দুই বন্ধু তাকে সন্ধ্যে পৌনে ছটা নাগাদ আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। কিন্তু মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে ছটা নাগাদ তার মৃত্যু হয়। তাকে ভর্তি করার সময় এমারজেন্সি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক ডাঃ নির্ঝর মাজি বলেন, যখন ঐ যুবককে আনা হয়, তখন তার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিলো। প্রয়োজনীয় পরামর্শ লিখে সঙ্গে সঙ্গে ভর্তি করেছিলাম।

ঐ যুবকের সঙ্গে থাকা শুভম কুমার নামে এক বন্ধু তখন আমায় বলেছিলো তাকে ” স্পেকটেকাল কোবরা ” সাপে কামড়েছে।
জেলা হাসপাতালের সুপার ডাঃ নিখিল চন্দ্র দাস এদিন বিকেলে বলেন, চিকিৎসা শাস্ত্রে বলা আছে সাপে কামড়ানোর ১০০ মিনিটের মধ্যে ১০০ মিলিমিটার ” এভিসি বা এ্যান্টি ভেনাম সিরাম ” দিতে হবে। তাহলে রোগীকে বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই থাকে। যতদুর যুবকের বাড়ির লোকেদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, ঐ সময়ের মধ্যে তাকে জেলা হাসপাতালে আনা হয়নি। বাড়ি থেকে বাসে ও টোটো করে হাসপাতালে আনার জন্য অনেকটা সময় চলে যায়। তিনি আরো বলেন, পরিবারের সদস্যরা মৃতদেহ ময়নাতদন্ত না করিয়ে ছেড়ে দিতে বলছিলো। আমি বলি, তা সম্ভব নয়। এটা মনে রাখতে হবে, সাপে কামড়ানো রোগীর চিকিৎসা শুরুর ক্ষেত্রে সময়টাই জরুরি।
এদিকে, যুবকের অকাল মৃত্যুতে দাদা, বাবা সহ পরিবারের সদস্য ও এলাকার বাসিন্দারা শোকস্তব্ধ। তারা ভাবতেই পারছেন না যে, এমনটা ঘটনা ঘটতে পারে।
পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *