ঝাড়খণ্ড-বাংলা সীমান্ত এলাকার ঘটনা, IB আধিকারিক সেজে গাড়ি চালকদের টাকা লুঠের অভিযোগ, ধৃত ৭ যুবক
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল ও ধানবাদ, দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ ভোর রাতের কিছুটা আগেই বাংলা ঝাড়খন্ড সীমানায় ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কে ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ জেলার নিরসা থানার গোপালগঞ্জ এলাকায় পুলিশের হাতে ধরা পড়ে পুলিশেরই জামা প্যান্ট খুলে নেওয়ার হুমকি দিলো ৭ দুষ্কৃতি। কিন্তু দাপটের সঙ্গে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যেতেই সমস্ত হম্বিতম্বি শেষ। জানা যায় ক্রাইম এবং ভিজিলেন্স সেল, এ্যান্টি করাপশন ফাউন্ডেশন, সোশ্যাল জাস্টিস নামে মানবাধিকার সংগঠন সহ একাধিক সংস্থার পরিচয় পত্র সহ আধিকারিক সেজে এই সাত দুষ্কৃতি জাতীয় সড়কে ট্রাক দাঁড় করিয়ে অবৈধ উপায়ে টাকা আদায় করছিল। অত্যন্ত চালাকির সঙ্গে তারা বাংলা ঝাড়খন্ড সীমান্ত এলাকাকে বেছে নিয়েছিল নিজেদের দুষ্কর্ম করার জন্য।




ধৃতদের কাছ থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে দুটি গাড়ি ( নম্বর ডব্লু বি 0২ এ বি ১২৪৬ এবং ডব্লু বি ৩৮ এ এক্স ৬০২২) একটি এয়ার পিস্তল, নগদ চার হাজার দশ টাকা, চারটি অ্যাপেল ফোন (যেগুলির এক একটির দাম ১ থেকে দেড় লক্ষ টাকা), অন্য মোবাইল ৬ টি, দুটি ছুরি, একটি আংটি এবং মুখ ঢাকার জন্য কালো কাপড়। এছাড়াও ধৃতদের থেকে পাওয়া গেছে সোশ্যাল জাস্টিস ফর ইন্টারন্যাশনাল সিভিল রাইটস, এ্যান্টি করাপশন ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়া লেখা বোর্ড। এইসব দেখিয়েই আসানসোল উত্তর থানার রেলপারের ধাদকা, আসানসোলের হিরাপুর থানার ইসমাইলের রায়পাড়া, আসানসোল দক্ষিণ থানার ঊষাগ্রাম ও কালিপাহাড়ি এবং অন্ডাল থানার রিক্সাডাঙ্গালের রোহিত কুমার সিং (২৭), তুতারপ্রিত বর্ণওয়াল(২৩), নীতেশ শ্রীবাস্তব(২৭), অনুরাগ বার্ণওয়াল (২৬), বি বি পাসোয়ান(২৩), অভিষেক সিনহা(২৪) এবং অরিত্র মন্ডল(২৩) টাকা লুঠের অপরাধে নেমেছিল।
জানা গেছে, গত ২২ আগস্ট মঙ্গলবার ভোর রাতের কিছু আগে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কে ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ জেলার নিরসা থানা এলাকার গোপালগঞ্জ মোড়ে তারা ট্রাক থামিয়ে টাকা আদায় করছিল। এক ট্রাকচালক প্রমোদ পাসোয়ানকে তারা অস্ত্র দেখিয়ে তার কাছ থেকে লাইসেন্স এবং গাড়ির কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয় পশ্চিমবঙ্গের ভিজিলেন্স অফিসার দাবি করে বলে অভিযোগ। তারপর ভয় দেখিয়ে মারধর করে ঐ ট্রাক চালকের কাছে থাকা চার হাজার দশ টাকাও হাতিয়ে নেয়। ঠিক সেই সময় নিরসা থানার পুলিশ ঐ এলাকা দিয়ে টহল দিয়ে যাওয়ার সময় ঘটনাটি দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে। অভিযুক্তদের আটক করে। এই সময় অভিযুক্তরা প্রচন্ড হম্বিতম্বি শুরু করে ও বলে তারা আইবি ও ক্রাইম ব্রাঞ্চের লোক। পুলিশের জামাকাপড় তারা খুলে নেবে। এই ধমক খেয়ে ঐ পুলিশ কর্মীরা থানায় যোগাযোগ করলে নিরসা থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জ দিলীপকুমার যাদব ঘটনাস্থলে পৌঁছান।
ট্রাক চালকের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যান। সেখানে রাতভর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে দুই রাজ্যের সীমানাবর্তী অঞ্চলকে কাজে লাগিয়ে এরা দুষ্কর্ম করছিল। ধানবাদ পুলিশের ডিএসপি অমর কুমার পান্ডে জানান, আমরা ইতিমধ্যেই আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের আসানসোল দক্ষিণ, অন্ডাল সহ অন্য থানাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করে এদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছি। মঙ্গলবার এদেরকে ধানবাদ আদালতে তোলা হলে প্রত্যেকেরই জেল হেফাজত হয়।
স্থানীয় মানুষেরা জানিয়েছেন, মাঝেমধ্যেই তাদের কাছে অভিযোগ আসছিল জাতীয় সড়কে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাতের দিকে পয়সা আদায় করা হচ্ছে। তা হচ্ছে কখনো ভিজিলেন্সের লোক কখনো বা আরটিও সেজে বা অন্য কোনভাবে। বিষয়টি তারা পুলিশকেও জানিয়েছিলেন। যদিও ডিএসপি জানান, ঐ এলাকা এমন কোন লিখিত অভিযোগ তাদের কাছে আগে হয়নি। তাহলে পুলিশ আগে থেকেই ঐ এলাকায় নজরদারি চালাতো।