ASANSOL

আসানসোল জেলা হাসপাতালের মানবিক মুখ, চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন বীরভূমের বৃদ্ধ

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ নিজের খেয়ালে সেই মার্চ মাসে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গেছিলেন। ৬ মাসেরও বেশি সময় পরে চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে শনিবার দুপুরে দুই ছেলের হাত ধরে আসানসোল জেলা হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলেন বীরভূমের সাঁইথিয়া থানার হেমন্ত বসু পল্লীর বাসিন্দা বছর ৭০ র বৃদ্ধ নকুল ওরফে ফাগু ঘোষ। স্বাভাবিক ভাবেই এত মাস পরে বাবাকে পেয়ে খুবই খুশি নকুলবাবুর দুই ছেলে বিধান ঘোষ ও হিরণ ঘোষ। তারা চিকিৎসায় সুস্থ করে বাবাকে ফিরিয়ে দেওয়ায় আসানসোল জেলা হাসপাতাল কতৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।এই বৃদ্ধকে তার বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার পেছনে অগ্রণী ভূমিকা ছিলো আসানসোল জেলা হাসপাতালের সহকারী সুপার ভাস্কর হাজরার বলে এদিন জানিয়েছেন সুপার ডাঃ নিখিল চন্দ্র দাস। এদিন দুপুরে নকুলবাবুকে তার দুই ছেলের হাতে তুলে দেওয়ার সময় অন্যদের মধ্যে ছিলেন আরো এক সহকারী সুপার ডাঃ দেবদীপ মুখোপাধ্যায়, নার্স ও কর্মীরা।


সুপার ডাঃ নিখিল চন্দ্র দাস বলেন, গত ৭ জুন পুলিশ এই বৃদ্ধকে অঞ্জাত পরিচয় হিসাবে ভর্তি করিয়েছিলো পুলিশ। তার শরীরে কিছু আঘাতের চিহ্ন থাকায় তাকে অর্থোপেডিক সার্জেন ডাঃ সুপ্রিয় মাইতির তত্ত্বাবধানে মেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছিলো। সেই সময় তিনি তার নাম বা বাড়ির ঠিকানা কিছুই বলতে পারছিলেন না। সুপার বলেন, চিকিৎসা শুরু করার পরে চিকিৎসকদের মনে হয়েছিলো, তার সামান্য হলেও কিছু সায়ক্রিয়াট্রিক বা মানসিক সমস্যা আছে। সেই কারণে জেলা হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ সৌরভ চট্টোপাধ্যায় তার পরীক্ষা করেন। এরপর আস্তে আস্তে বৃদ্ধর শরীর সুস্থ হতে থাকে। শুক্রবার তিনি নিজের নাম ও বাড়ির ঠিকানা বলেন। এরপর সহকারী সুপার ভাস্কর হাজরা সেই মতো বীরভূম জেলার সাঁইথিয়া থানার ওসির সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে বৃদ্ধর ব্যাপারে তথ্য দেন। এরপর সাঁইথিয়া থানার ওসি সেইমতো হেমন্ত বসু পল্লীতে বৃদ্ধর বাড়িতে যোগাযোগ করেন। শনিবার দুপুরে তার দুই ছেলে আসেন। জেলা হাসপাতালের তরফে আইন মতো সব পরিচয় পত্র নিয়ে তাদের হাতে তাকে তুলে দিয়েছি।


বৃদ্ধর ছেলে বিধান ঘোষ বলেন, বছর ১২ আগে মা মারা যাওয়ার পর থেকেই বাবা একটু মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। কিছু কাজ করতো না। বাড়িতে ও বাইরে মন্দির বা অন্য জায়গায় নিজের খেয়ালে বসে থাকতো। কারোর সঙ্গে তেমন কথা বলতো না। মাঝে মধ্যে এদিক সেদিক বেরিয়ে চলে যেতো। আবার দিন কয়েক পরে ফিরে আসতো। আমরাও অনেক সময় খুঁজে আনতাম। তিনি বলেন, শেষ বার গত মার্চ মাসে দোলের সময় বাবা বেরিয়ে যায়। সব জায়গায় খুঁজি। পুলিশকে জানাই। কিন্তু পাইনি। শুক্রবার সন্ধ্যায় সাঁইথিয়া থানার পুলিশ আমাকে বলে বাবা আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি আছে। এরপর আমি ফোনে এখানে সহকারী সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তার কথা মতো এদিন এসে বাবাকে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি। খুবই ভালো লাগছে। ভাবিনি বাবাকে এতো দূরে খুঁজে পাবো।
জানা গেছে, এই বৃদ্ধর চার ছেলে ছিলো। কিন্তু তার মধ্যে দুজন মারা গেছেন। তা তিনি জানেন না। এদিন জেলা হাসপাতালে দুই ছেলেকে দেখে কেঁদে ফেলেন। উত্তেজনায় হাত নেড়ে অনেক কিছু বলার চেষ্টা করেন। তাকে বলা হয় যে, সে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *