ASANSOLBARABANI-SALANPUR-CHITTARANJAN

চিটফান্ড মামলায় ৪০০ কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগ, হুগলি থেকে পালিয়ে আসা সংস্থার মালিক ধৃত রুপনারায়নপুরে

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়ঃ একটি চিটফান্ড কান্ডে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার প্রতারণা মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত দীর্ঘদিন ধরে আসানসোলের সালানপুর থানার রূপনারায়নপুরে গা ঢাকা দিয়েছিলো। শেষ পর্যন্ত সেই অভিযুক্তকে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের সালানপুর থানার রূপনারায়নপুর ফাঁড়ির পুলিশের সহযোগিতায় গ্রেফতার করলো হুগলির চুঁচুড়া থানার পুলিশ। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পরেই সালানপুর ব্লক ও রূপনারায়নপুর এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে রীতিমতো বিস্ময় দেখা দিয়েছে। কিভাবে এই ধরনের এত বড় একজন প্রতারক রূপনারায়ণপুরে এসে বাড়ি ভাড়া নিলেন ও এই ব্লকে থাকা নদীর কাছাকাছি এনটিপিসি এলাকার পাশে মাঠে একটি আলমারি ও গ্রিল তৈরির কারখানাও গড়ে তুললেন, তা নিয়েও রীতিমতো বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে গোটা এলাকায়। পাশাপাশি গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ধৃত ব্যক্তির নাম সুব্রত দাস ( ৫৭ )। তাকে এলাকার লোকজনেরা শিবুদা নামে চিনতো ও ডাকতো। তিনি সালানপুরের রূপনারায়নপুর- হিন্দুস্থান কেবলস রোডে মনসা মন্দির সংলগ্ন একটি বাড়িতে ভাড়ায় থাকতেন। এছাড়া সালানপুর ব্লকের এনটিপিসি’র কাছে একটি আলমারি ও গ্রিল কারখানা তৈরি করে চালাচ্ছিলেন।


সেবির অভিযোগের ভিত্তিতে তার নামে আদালতের থেকে হওয়া সমন নিয়ে গত মঙ্গলবার চুঁচুড়া পুলিশের সালানপুর থানা ও রূপনারায়ণপুর ফাঁড়ির পুলিশ একযোগে তার বাড়িতে ও কারখানায় হানা দিলেও খোঁজ মেলেনি। এরপরেই রূপনারায়নপুর ফাঁড়ির ওসি মইনুল হকের বিছানো জাল কেটে সে পালাতে পারেনি। প্রতিমুহূর্তেই তাকে ট্র্যাক করে শেষ পর্যন্ত রূপনারায়নপুর ফাঁড়ির ওসির নেতৃত্বে ধরা পড়া ঐ ব্যক্তি চুঁচুড়া পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।


জানা গেছে, এগরো ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড নামে চিট ফান্ডের ব্যবসা করে মূলতঃ হুগলি জেলার হাজার হাজার মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা টাকা তুলেছিল সুব্রত দাস ও তার সহযোগীরা। এই সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর ছিলেন সুব্রত দাস। তার স্ত্রী সহ আরো তিনজন ছিল এই কোম্পানির অন্যতম প্রধান কর্তা। ২০১৫ সালে তাদের বিরুদ্ধে সেবির পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগের পরেই তারা নিজেদের এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গা ঢাকা দেয়। সেই সময় সুব্রত বাবু তার স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে চলে আসেন রূপনারায়নপুরে। এখানে তিনি হিন্দুস্তান কেবলস রোডের ওপরে একটি মনসা মন্দির সংলগ্ন বাড়িতে ভাড়া নেন। তার মেয়েকে ভর্তি করেন চিত্তরঞ্জনে একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে। এখন সেই মেয়ে ব্যাঙ্গালোরে পড়াশোনা করছে বলে জানা গেছে।

ধীরে ধীরে পরিচিতি বাড়িয়ে তিনি সালানপুর ব্লকের রূপনারায়নপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত পিঠাকেয়ারির ৭২ নম্বর বুথে ভোটার তালিকায় নিজেদের নাম তোলেন। নির্বাচনে এখান থেকে তিনি ভোটও দেন। ঝাড়খন্ড সংলগ্ন সালানপুর ব্লকে এনটিপিসি মাঠের কাছেই গড়ে তোলেন তার আলমারি এবং গ্রিল তৈরির কারখানা। আর সেই কারখানায় কাঁচামাল সরবরাহ করত স্থানীয় ছোটখাটো ব্যবসায়ীরাও। হঠাৎ করে এই মানুষটা এলাকায় এসে এত বড় ব্যবসা করলেও তেমন করে কিন্তু স্থানীয় মানুষ কৌতুহল দেখিয়ে খোঁজ খবর নেয়নি। সেবির দায়ের করা ২০১৫ সালের অভিযোগ নিয়ে চুঁচুড়া পুলিশের তৎপর হয়। নিখোঁজ সুব্রত দাসের বিরুদ্ধে আদালত থেকে সমন জারি করা হয়।


চুঁচুড়া পুলিশ গোপন সূত্রে জানতে পারে সুব্রত দাস রূপনারায়নপুরে ঘাঁটি গেড়ে বসে আছেন। আর সেই সূত্রকে কাজে লাগিয়ে প্রথম বারে সম্ভব না হলেও, দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় দুদিন আগে রূপনারায়নপুর থেকে তাকে ধরা হয় ।
এদিকে খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, এই আলমারির কারখানাটি মাস তিনেক আগে সুব্রতবাবু কুলটি থানার বরাকরের এক ব্যবসায়ীকে মাসে কুড়ি হাজার টাকা ভাড়ার বিনিময় দিয়েছিলেন। এখন তদন্তের কারণে সালানপুর থানা ও রূপনারায়নপুর পুলিশ এই কারখানাটি সিল করে দিয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তাকে গ্রেফতারের করে চুঁচুড়া আদালতে তোলা হলে বিচারক তার জামিন নাকচ করে জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। বর্তমানে সে সেখানকার জেলে আছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই ঘটনায় অভিযুক্ত ঐ সংস্থার অন্য আরেক ডিরেক্টর ইতিমধ্যেই আত্মহত্যা করেছেন।

Leave a Reply