ASANSOL

সালানপুর থানার পুলিশের তৎপরতা, অপহরণের কয়েক ঘন্টার মধ্যে ঝাড়খণ্ড থেকে উদ্ধার যুবক

বেঙ্গল মিরর, কাজল মিত্র, রাজা বন্দোপাধ্যায় , সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত: অবিশ্বাস্য দ্রুততা ও তৎপরতার সঙ্গে পুলিশের যাবতীয় দক্ষতাকে ব্যবহার করে ঝাড়খন্ডে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া এক যুবককে কয়েক ঘন্টার মধ্যে ফিরিয়ে আনলো আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের সালানপুর থানার পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার।
অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এই অভিযানে সালানপুর থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জ অমিত কুমার হাটি, রূপনারায়ণপুর ফাঁড়ির ওসি মইনুল হক, কল্যানেশ্বরী ফাঁড়ির ওসি উজ্জ্বল সাহা সহ পুলিশ অফিসারদের একটি দল এই কাজে সফল হয়েছে।


জানা গেছে, সালানপুর থানার বনবিড্ডি এলাকা থেকে শুক্রবার বেলা ১২ টা নাগাদ অপহরণ করা হয় বছর ২৬-এর যুবক কিষন গরাইকে। আর এ দিনই বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ তাকে ঝাড়খণ্ডের এক জঙ্গল এলাকা থেকে উদ্ধার করে নিয়ে এলো পুলিশ। আরো জানা গেছে, সালানপুরের আল্লাডির একটি স্কুলে পড়াশোনা করে কিষনের শিশু কন্যা। তাকে স্কুল থেকে বাড়ি আনার জন্য স্কুটি নিয়ে বাসুদেবপুর- জেমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের বনবিড্ডি গ্রামের বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন কিষন। কিন্তু বাড়ি থেকে কিছুটা দূরেই একটি মারুতি গাড়ি তার পথ আটকায়। ঐ গাড়ি থেকে নেমে দুই যুবক তাকে টেনে হিঁচড়ে ঐ মারুতি গাড়িতে তোলে। এরপর সিটের নিচে তাকে ফেলে রাখে। কোথায় তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেই বিষয়ে কিষণ কিছুই বুঝতে পারছিলেন না।

এদিকে স্কুল থেকে বাচ্চা সময়মতো না ফেরায় ঘরের লোক খোঁজ খবর করতে গিয়ে ঘটনার কথা জানতে পারেন। পুলিশও খবর পায় ঐ এলাকায় রাস্তার ধারে একটি স্কুটি পড়ে আছে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ খোঁজখবর শুরু করে। একইভাবে পুলিশ কিষনের বাড়ি থেকে ঘটনার কথা জানতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে আসানসোল দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুনীল কুমার চৌধুরীর তৎপরতায় সক্রিয় হয়ে ওঠে সালানপুর থানা। দ্রুততার সঙ্গে পুলিশ একটি দল গঠন করে।

গোপন সূত্র মারফত ও মোবাইল ফোনের টাওয়ার লোকেশন অনুসরণ করে পৌঁছে যায় ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া জেলার কেলাহী অঞ্চলের শ্যামপুর গ্রামে পৌঁছায় পুলিশ। ঝাড়খন্ড পুলিশ পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করতে থাকে। শ্যামপুরে পুলিশ পৌঁছে জানতে পারে পাশের বীরগাঁও জঙ্গলে অপহৃতকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এদিকে পুলিশের ব্যাপক তৎপরতায় অপহরণকারীরা কিছুটা বিপাকে পড়ে যায়। তারা অপহৃত কিষনের কাছ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ আদায় করতে চেয়েছিল। কিন্তু ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে গভীর বীরগাঁও জঙ্গলে কিষনকে হাত-পা বেঁধে ফেলে পালিয়ে যায়। চিৎকার করলে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়।

বেশ কিছুক্ষণ পর কিষন বুঝতে পারে অপহরণকারীরা এলাকা ছেড়েছে। এরপরই কিষন কোনক্রমে বাঁধন আলগা করে জঙ্গল থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। ‌ ঠিক সেই মুহূর্তে পুলিশও একেবারে তার কাছে পৌঁছে যায়। মাইথন জলাধারের ওই অংশে ঘন জঙ্গলের ধার থেকে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে । এরপর কিষনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই ঘটনা সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য পুলিশ উদ্ধার করার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে কিষনের আদি বাড়ি ঝাড়খণ্ডের মিহিজাম এলাকায়। তার বাবার নাম সুজিত গড়াই। সে বছর ছয় ধরে বনবিড্ডিতে তার শ্বশুরবাড়িতে থাকছিল। এখানেই গ্রামের ধারে মাঠের পাশে বড় বাড়ি তৈরি করেছিল।

এদিকে অপহৃতকে উদ্ধার করার খবর পেয়েই সালানপুর থানায় চলে আসেন আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের ডিসিপি(পশ্চিম) অভিষেক মোদি ও এসিপি (কুলটি) সুকান্ত বন্দোপাধ্যায় । চলে আসেন আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকেরাও।
এই প্রসঙ্গে ডেপুটি অভিষেক মোদি বলেন, পুলিশ অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে যেভাবে অপহরণের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ভিন রাজ্য থেকে অপহৃতকে উদ্ধার করে নিয়ে এলো তা পুলিশের দক্ষতাকেই আরো একবার প্রমাণ করলো। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে।

Leave a Reply