ASANSOLBARABANI-SALANPUR-CHITTARANJAN

সম্পূর্ণ ভারতীয় প্রযুক্তিতে চিত্তরঞ্জন রেল কারখানায় প্রথম ১২ হাজার অশ্বশক্তির রেল ইঞ্জিন তৈরি হল

বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য, আসানসোল। সম্পূর্ণ ভারতীয় প্রযুক্তিতে চিত্তরঞ্জন রেল কারখানার কর্মী ও আধিকারিকরা, যৌথভাবে তাদের বহুদিনের স্বপ্নের বাস্তবায়ন করলেন। বিহারের মাধেপুরার রেল কারখানায় ফ্রান্সের এলস্টর্ম সংস্থার সাথে যৌথ উদ্যোগে ১২ হাসার অশ্ব শক্তি-সম্পন্ন রেল ইঞ্জিন নির্মাণ হচ্ছে, সেই একই ডিজাইনের সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে চিত্তরঞ্জনে প্রথম ১২ হাজার অশ্বশক্তির রেল ইঞ্জিন তৈরি হল।

এইরকম আরো ৯টি রেল ইঞ্জিন এখানে তৈরি হবে। ঘন্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে অন্তত ৫০ টি মাল ভর্তি ওয়াগান নিয়ে চলতে পারবে। এখানে তৈরি হওয়া এই ইঞ্জিনগুলি সবই মালগাড়ি টানার জন্য এখানে তৈরি হবে বলে জানান চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানার মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক অমিত আগরওয়াল । তিনি বলেন এই ইঞ্জিন তৈরি করার কৃতিত্ব অবশ্যই এখানকার কর্মী ও আধিকারিকদের। সবমিলিয়ে এমন ১০টি ইঞ্জিনের তাদের কাছে এসেছে। একটি ইঞ্জিন আপাতত তৈরি করে তা ভারতীয় রেলের হাতে তুলে দেয়া হল। রেল সূত্রে জানা গেছে নতুন ফ্রেড করিডোর দেশ জুড়ে তৈরি হওয়ায় এই ধরনের মালবাহী ইঞ্জিনের চাহিদা বাড়বে।


স্বাধীনতার পর দেশে প্রথম চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানা ১৯৫০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি প্রথম বাষ্পীয় ইঞ্জিন দিয়ে ভারতবর্ষের নিজস্ব রেল ইঞ্জিন উৎপাদন করে নতুন রেকর্ড তৈরি করেছিল। এশিয়ার বৃহত্তম এই রেল ইঞ্জিন কারখানা এরপরে ডিজেল সান্টার এবং তারপর ষাটের দশক থেকে বৈদ্যুতিক রেল ইঞ্জিন শুরু করে ।তারপর তারা ৬ হাজার অশ্বশক্তি সম্পন্ন রেল ইঞ্জিন যাত্রীবাহী ট্রেনের জন্য এবং মালবাহী ট্রেনের জন্য ৯ হাজার অশ্বশক্তির রেল ইঞ্জিন নির্মাণ করেছিল।এবার ১২ হাজার অশ্বশক্তির রেল ইঞ্জিন নির্মাণ করে ভারতীয় রেলের সবচেয়ে বড় বৈদ্যুতিক এই রেল ইঞ্জিন কারখানা সর্বকালীন এক রেকর্ড করলো।

এখনকার তৈরি রেল ইঞ্জিন দিয়ে ভারতের দ্রুততম রাজধানী, শতাব্দি, দুরন্ত এক্সপ্রেস, কালকা মেল ,পাঞ্জাব মেলের মতো ট্রেনগুলি যাতায়াত করে। সম্প্রতি তারা নন এসি বন্দেভারতের জন্য একসেট ইঞ্জিন তৈরি করে আই সি এফ কারখানায় পাঠিয়েছে।


আইএনটিইউসির চিত্তরঞ্জন এর সাধারণ সম্পাদক এবং এন এফ আই আর এর ভারতীয় রেলের নেতা ইন্দ্রজিৎ সিং বলেন ১২হাজার অশ্বশক্তি সম্পন্ন এই রেল ইঞ্জিন তৈরি করার জন্য আমরা নিশ্চয়ই গর্বিত ।গত বছর এপ্রিল মাসে আমি নিজে এক প্রতিনিধি দলকে নিয়ে ভারতীয় রেল বোর্ডের চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করে যুক্তি দিয়ে বুঝিয়েছিলাম এই কারখানায় আপনারা ১২ হাজার অশ্বশক্তির ইঞ্জিনের অর্ডার পেলে আমরা তৈরি করতে পারব। বর্তমানে ফ্রান্সের কোম্পানি এলস্টর্ম ভারতীয় রেলের সঙ্গে যৌথভাবে বিহারের মাধেপুরায় ১২ হাজার অশ্বশক্তির ইঞ্জিন তৈরি করছে ।


সেখানে ১১ বছরের মধ্যে ৮০০ ইঞ্জিন হবে। এখানে স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা অনেক কম। আমরা রেল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন রেখেছি দুটি ইঞ্জিন এর মাঝখানে বাফার বাদ দিয়ে জুড়ে প্রথম যে ইঞ্জিন আমরা তৈরি করলাম তাতে যদি আমরা কমন কেবিন করতে পারি এবং চাকার সংখ্যাটা কমিয়ে দিতে পারি তাহলে খরচ অনেকটা কমবে। আর যারা কারিগরি ভাবে এই বিষয় অভিজ্ঞ আমাদের দেশের আরডিএসওর দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার তাদের সাথে কথা বলি আরেকটু কারিগরি কুশলতা যদি বাড়াতে পারি তাহলে ফরাসি সংস্থার দেওয়া ইঞ্জিনের থেকে আমাদের ইঞ্জিন কমনাম হবে । সারাদেশের জন্য এটা আমরা বানাতে পারবো। প্রয়োজনে বিদেশেও সরবরাহ করতে পারব। সেই ক্ষমতায় এখানকার কর্মী এবং আধিকারিকদের আছে।


সিটুর চিত্তরঞ্জনের সাধারণ সম্পাদক রাজীব গুপ্ত বলেন আমরা বহুদিন ধরেই যে বলে আসছিলাম আমাদের অর্ডার দিন আমরা এটা করতে পারব। এখানকার কর্মী এবং আধিকারিকরা তা করে প্রমাণ করলেন মাত্র এক মাস সময়। আরও যে নটি ইঞ্জিন আছে সেগুলিও আমরা দ্রুত তৈরি করতে পারব। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের প্রশ্ন তাহলে প্রধানমন্ত্রী যখন বলছেন মেক ইন ইন্ডিয়ার কথা সে ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে ইঞ্জিন যন্ত্রাংশ পুর এনে অ্যাসেম্বল না করে কেন চিত্তরঞ্জনে পরিকাঠামোর সামান্য উন্নতি করে,আরো কর্মী নিয়োগ করে সেই সমস্ত ইঞ্জিন গুলো এখানে তৈরি করা যাবে না? অবশ্যই ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষের এটা ভাবা উচিত ।এই নিয়ে আমরা ইতিমধ্যেই রেলের স্থানীয় আধিকারিকদের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছি।

Leave a Reply