ASANSOL

আসানসোলে সনাতনী সেনার পদযাত্রা আটকালো পুলিশ, গ্রেফতার বিজেপি কাউন্সিলাররা, ব্যারিকেড ভাঙা নিয়ে ধুন্ধুমার কান্ড

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়ঃ অনুমতি দেওয়া হয়নি। এমনই দাবি করে রবিবার বিকেলে আসানসোল শহরে সনাতনী সেনার আসানসোল শাখার পদযাত্রা আটকালো পুলিশ। পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেড ভেঙে সনাতনী সেনার সদস্য ও আসানসোলের বিজেপির নেতা ও কর্মীরা পদযাত্রা করে এগোনোর চেষ্টা করলে জিটি রোডের পুরনো রামকৃষ্ণ মিশন মোড় সংলগ্ন এলাকা অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠে। ধুন্ধুমার কান্ড ঘটে। পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তি বেধে যায় মিছিলে আসা মানুষদের। এরপর পুলিশ বলপূর্বক টেনেহিঁচড়ে আসানসোল পুরনিগমের বিরোধী বিজেপি কাউন্সিলারদের দলনেত্রী চৈতালি তেওয়ারি, কাউন্সিল গৌরব গুপ্ত ও ইন্দ্রানী আচার্যদেরকে গ্রেফতার করে প্রিজন ভ্যানে তোলে। তাদেরকে নিয়ে আসা হয় আসানসোল দক্ষিণ থানায়। সন্ধ্যায় পিআর বন্ড বা ব্যক্তিগত জামিনে ধৃতদেরকে আসানসোল দক্ষিণ থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। থানার সামনেই তাদেরকে ফুলের মালা পড়িয়ে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়।


কেন পদযাত্রা করতে দেওয়া হবে না, তা জানার চেষ্টা করলে আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তেওয়ারির সঙ্গে পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। সংবিধান দিবসের দিন এইভাবে সনাতনী সেনার মিছিল আটকানো নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি রাজ্যের শাসক দল তৃনমুল কংগ্রেসকে চাঁছাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেন জিতেন্দ্র তেওয়ারি।


সনাতনীদের চারশো বছরের স্বপ্নপূরণ বর্ণোজ্বল রাম মন্দির উদ্বোধনের খুশিতে রবিবার বিকেল তিনটে থেকে আসানসোল শহরের জিটি রোডের পুরনো রামকৃষ্ণ মিশন মোড় থেকে একটি পদযাত্রার আয়োজন করা হয়েছিলো সনাতনী সেনা, আসানসোলের পক্ষ থেকে। এই পদযাত্রা আসানসোল পুরনিগমের সামনে দিয়ে জিটি রোড হয়ে হটন রোড মোড়ে এসে শেষ হওয়ার কথা ছিলো। সেই পদযাত্রায় যোগ দেওয়ার জন্য দুপুর দুটোর পর থেকেই পুরনো রামকৃষ্ণ মিশন মোড়ে জমায়েত করত শুরু করেন সনাতন সেনার সদস্য, বিজেপির নেতা ও কর্মীরা।


অন্যদিকে, এই পদযাত্রা যাতে কোনভাবে পুরনো রামকৃষ্ণ মিশন মোড় থেকে এগোতে না পারে তারজন্য জিটি রোডে বাঁশ ও লোহার গার্ডওয়াল দিয়ে পুলিশের তরফে ব্যারিকেড করা হয়। উষাগ্রাম থেকে দিক যে সব বাস ও গাড়ি রাহালেন মোড়ের দিকে আসার কথা, সেগুলোকে পুরনো রামকৃষ্ণ মিশন মোড় থেকে নজরুল সরণী দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। পদযাত্রার জন্য আসানসোলের বিভিন্ন থানার পাশাপাশি দূর্গাপুর থেকেও পুলিশ আনা হয়েছিলো।

আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকদের নেতৃত্বে বিরাট বাহিনীর সঙ্গে রেফ ও কমব্যাট ফোর্স মোতায়েন করা হয়। বিকেল সাড়ে তিনটের পরে জিতেন্দ্র তেওয়ারি, চৈতালি তেওয়ারি, ইন্দ্রানী আচার্যদের নেতৃত্বে পদযাত্রা শুরু হতেই কয়েকশো পুলিশ তৎপর হয়। তারা ব্যারিকেড ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন। পদযাত্রায় করা মানুষেরা সেই ব্যারিকেড ভেঙে সামনের দিকে এগোনোর চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশের বাধায় তা সম্ভব না হওয়ায়, সবাই রাস্তায় বসে পড়েন। স্লোগান দেওয়া শুরু হয়। পুলিশ জানায়, এই পদযাত্রার কোন অনুমতি নেই। তাই এটা করা যাবে না। পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি বেধে যায়। ভেঙে দেওয়া হয় পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেড। কেন পদযাত্রা তা, জানতে চাওয়ায় পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি ও বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন জিতেন্দ্র তেওয়ারি। আধঘন্টার বেশি সময় ধরে চলে অশান্তি। গোটা এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত পুলিশ পদযাত্রা আটকানোর পাশাপাশি চৈতালি তেওয়ারিদেরকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে।


পুলিশ প্রশাসনের এই ভূমিকায় ক্ষুব্ধ জিতেন্দ্র তেওয়ারি আক্রমণ করে বলেন, সনাতনী সেনা রাম মন্দির হওয়ার খুশিতে এই পদযাত্রার আয়োজন করেছিলো। আমাদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাই আমরা সবাই আসি। কিন্তু জানতে পারি, পুলিশ তা করতে দেবে না। কিন্তু কেন? যে কোন ধর্মে বিশ্বাসী মানুষ তো সংবিধান ও আইন মেনে পদযাত্রা করতেই পারে। আর সবচেয়ে বড় কথা, এই পদযাত্রার যোগ দিতে সব ধর্মের কয়েক হাজার মানুষ এসেছিলেন। যতদূর জানি, সনাতনী সেনার পক্ষ থেকে ২৫ দিন আগে এই পদযাত্রার জন্য অনুমতি চেয়ে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের কাছে মেল করা হয়েছিলো। পুলিশ তো তার অনুমতি দেয়নি, তা তো জানানো হয়নি। পদযাত্রা শুরুর আগে পুলিশের এমন ভূমিকা, খুবই লজ্জাজনক। তিনি আরো বলেন, সংবিধান দিবস পালনের দিনে আসানসোলে পুলিশ প্রশাসন সংবিধান ভাঙলো। যদিও, পুলিশ এটা করেছে, তৃনমুল কংগ্রেসের নেতাদেরকে খুশি করতে। এর জবাব আসানসোলের মানুষেরা দেবেন।
এদিকে, আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক আধিকারিক বলেন, এই পদযাত্রার আয়োজনে কোন অনুমতি ছিলোনা। তাই নিয়ম মেনে তা আটকানো হয়েছে। এর মধ্যে অন্য কিছু নেই।
অন্যদিকে, তৃনমুল কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন তরফে দাসু বলেন, সবকিছুতেই শাসক দলকে দোষ দেওয়া বিরোধীদের একটা ট্রাডিশন হয়ে গেছে। কোন কিছু করতে হলে, পুলিশের অনুমতি লাগে। আমরাও তাই করি।

Leave a Reply