RANIGANJ-JAMURIA

বিদ্রোহী কবির স্মৃতি বিজড়িত শিব মন্দিরের জীর্ণদ্ধার

বেঙ্গল মিরর, চরণ মুখার্জী, রানীগঞ্জ : দিকে দিকে যখন রাম মন্দির প্রতিষ্ঠা নিয়ে মগ্ন ভারতের ধর্মপ্রাণ মানুষজন, ঠিক সেই সময়েই রানীগঞ্জের ঐতিহাসিক ঐতিহ্য বহন করে আসা সুপ্রাচীন গ্রাম হিসেবে খ্যাত, সিয়ারসোল রাজবাড়ীর পূর্ণভূমিতে অবস্থিত, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত শিক্ষা গ্রহণের অঙ্গন, বাবা সিদ্ধেশ্বর মন্দির, যা বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের গুরু হিসেবে খ্যাত, ভূপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারা নির্মিত, সেই দীর্ঘ প্রাচীন শিব মন্দিরের জীর্ণদ্ধার করে, সেই মন্দিরকে নব রূপে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ গ্রহণ করলো সিয়ারসোল গ্রামের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার। কথিত আছে একসময় বিদ্রোহী কবি কে পাঠদানের জন্য সহায়তা করেন বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা।

এই মন্দিরের মাঝে তার পাঠদানের ব্যবস্থা করা হত। সেই পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের সদস্যরা জানান, এই মন্দিরের চাতালে বসেই একসময় শিক্ষা গ্রহণ করতেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল। তার পরিবার সূত্রে জানা যায় মেধাবী ছাত্র, কাজী নজরুল শিক্ষা গ্রহণের জন্য তৎকালীন সিয়ারসোল রাজ হাই স্কুলে ভর্তি হন। সেই সময়ে, বিদ্যালয়ের ব্যাকরণের সু-পন্ডিত ভূপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, নজরুলের মেধা ও ভক্তি দেখে, তাকে সন্তান স্নেহে, সেই শিব মন্দিরের বারান্দায়, বিদ্যালয়ের শিক্ষা গ্রহণের পর, অতিরিক্ত সময়ে শিক্ষাদান করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

জানা যায় নজরুল এই মন্দিরের বারান্দায় বসে সে সময় বিভিন্ন দেবী ,দেবতার সংগীত রচনা করে, শ্যামা সংগীত, নজরুল গীতি, ভক্তিগীতি রচনা করেন। এবার সেই বিদ্রোহী কবির স্মৃতি বিজড়িত, তারই পিতৃতুল্য শিক্ষক ভূপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারা গড়ে তোলা মন্দির, যা দীর্ঘ দিন ধরে জীর্ণ প্রায় হয়ে উঠেছিল, সেই মন্দিরকে নবরূপে পুনঃ প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ গ্রহণ করল বাংলা ব্যাকরণ ও সাহিত্যের সু-পন্ডিত স্বর্গীয় ভূপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের, প্রপৌত্র বিপদতারন বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার সকালেই সেই মন্দিরে মঙ্গল কলস স্থাপন করে, শিবের রুদ্রাভিষেক ও রুদ্রযজ্ঞের মাধ্যমে মন্দিরের পূজা অর্চনার কর্মসূচি সম্পন্ন হল। পরে মন্দির প্রাঙ্গণের মধ্যেই পংক্তি ভোজের আয়োজন করলেন উদ্যোক্তারা। এদিনের এই ধার্মিক কর্মকাণ্ডে এলাকার অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মানুষ ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ কোরে, এই অনুষ্ঠানটিকে প্রাণোচ্ছল কোরে তোলে। এদিনের এই সামগ্রিক পুজো অর্চনায় বিশেষভাবে অংশগ্রহণ করেন, আচার্য রূপে উপস্থিত সুপ্রিয় ভট্টাচার্য। পরে তিনি সিয়ারসোলের নিত্য পুরহিত যারা রয়েছেন, তাদের সম্বর্ধিত করেন এই পূজো মন্ডপে।



উল্লেখ্য এখানেই কাঞ্জিলাল পাড়ার, বন্দোপাধ্যায় পরিবার (দৌহিত‍্য) পরিবার হিসেবেই বসবাস করে আসছেন। আর সেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেই এখানে কাঞ্জিলার পরিবারের সদস্যদের দ্বারা গড়ে উঠেছে দীর্ঘ প্রাচীন দুর্গা মন্দির,আর তার সংলগ্ল ছয়টি শিবমন্দিরে রয়েছে মোট বারটি শিবলিঙ্গ যার নিত্য পূজোর আয়োজনও রয়েছে। এছাড়া এই মন্দিরে কালী, অন্নপুর্না, স্বরসতী, জগদ্ধাত্রী দেবি পূজিত হন, হয় নারায়ন মন্দিরে নিত‍্য নারায়ন পূজা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *