২৫০ বছরেও ঐতিহ্যশালী রাজকুসুমের গরাই পরিবারের সরস্বতী পূজো, প্রতিমায় রয়েছে অভিনবত্ব
বেঙ্গল মিরর, রাজকুসুম ( দূর্গাপুর), রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ চারদিকে প্রতিযোগিতার দৌড় ও আধুনিকতার ছোঁয়া বলতে গেলে সব জায়গায়। এতো কিছুর মধ্যেও ২৫০ বছরেও অমলিন ও ঐতিহ্য বহন করে চলেছে পশ্চিম বর্ধমান জেলার দূর্গাপুরের অদূরে রাজবাঁধ সংলগ্ন রাজকুসুমের গড়াই পরিবারের সরস্বতী পুজো। পুজোর সঙ্গে গরাই পরিবারের সরস্বতী প্রতিমাতেও রয়েছে অভিনবত্ব। বলতে গেলে একবারে আলাদা। পাশাপাশি দুই বর্ধমান জেলায় ( পশ্চিম ও পূর্ব) এমন প্রতিমার যেমন দেখা মেলেনা, তেমনই এত ধুমধাম করে বাগদেবীর আরাধনা হয় না বললেই চলে। বাংলার কোথাও এমন সরস্বতী প্রতিমা সহ পুজোর আয়োজন সম্ভবত আর কোথাও হয়না বলেও মনে করেন অনেকেই।
রাজকুসুমের গরাই পরিবারের সরস্বতীর প্রতিমা বেশ অবাক করে দেওয়ার মতোই বলা যায়। একচালায় গড়া গয় এই প্রতিমা । তবে গরাই পরিবারের দেবী একা আসেন না । এখানে দেবীর সঙ্গে থাকেন সিদ্ধিদাতা গণেশ আর ধনদেবী লক্ষী। সঙ্গে দেখা মেলে দুই সখী ও দুই পরীকেও। একচালায় দেবী সরস্বতী এবং দেবী লক্ষী পাশাপাশি পদ্মের উপরে বসে থাকেন। তাদের পাশে থাকেন দুই সখী। তাদের মাথার উপরে থাকেন সিদ্ধিদাতা গনেশ। তার দুই পাশে থাকে দুই পরী।
গরাই পরিবারের বিদ্যার দেবীর আরাধনা ২৫০ বছরের পুরনো। তবে গরাই পরিবারের সুত্রে জানা গেছে, কে এই প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করেছেন ও ঠিক কত সালে শুরু হয়েছে বিদ্যার দেবীর আরাধনা তা কারো জানা নেই।
আসানসোলের বাসিন্দা গরাই পরিবারের অন্যতম সদস্য সোমনাথ গরাই বলেন, আমাদের পরিবার পারিবারিক সূত্রে আদ্যোপান্ত ব্যবসায়ী। কথিত আছে, বিদ্যার দেবীর স্বপ্নাদেশ পান পরিবারের কর্তা। স্বপ্নাদেশ বলা হয়, দেবী সরস্বতীর সঙ্গে সিদ্ধিদাতা গনেশ ও ধন দেবী লক্ষীকেও আরাধনা করতে । সেই থেকেই শুরু। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে দেবী সরস্বতীর প্রতিমা গড়ার কাজ। তার সঙ্গে দেবীর আরাধনা হয় ধুমধাম করে।
তিনি আরো বলেন, পুজোয় দেবীকে দেওয়া হয় হরেক রকম ফল। মিষ্টির সঙ্গে দেওয়া হয় তিনটি বিশালাকার কদমা। যার এক একটির ওজন ১০ কেজি। দেওয়া হয় ৫০ কেজি মন্ডাও।
সোমনাথবাবু বলেন, আমরা সবাই পুজোর সময় সেখানে যাই। অন্যরাও এই পুজো দেখতে আসেন। পুজোর দুদিন নরনারায়ণ সেবা হয়। পুজোর সময় এলাকার ১০ হাজার মানুষ আজও দেবীর ভোগ গ্রহণ করেন। পারিবারিক ও চিরাচরিত প্রথা মতো পরিবারের পক্ষ থেকে ১৫০ ব্রাহ্মণকে দক্ষিণা ও একটি করে কম্বল দান করা হয়। পাশাপাশি তাদেরকে খাওয়ানোও হয়। পুজোর পরের দিন রাতে দেবীকে কাঁধে করে নিয়ে যাওয়া হয় বড় বাঁঢে বিসর্জন দেওয়ার জন্য। গড়াই পরিবারের এই সরস্বতী পুজোর পরিচালনা করেন শিবনারায়ণ গড়াই ।
গরাই পরিবারের পক্ষ থেকে জানা গেছে, প্রায় ৬০ বছর আগে প্রয়াত ষষ্ঠীনারায়ণ গরাই রাজকুসুমের সরস্বতী মন্দির পুনর্নিমাণ করেন। তৈরী করা হয় স্কুলের ভবনও ।
সোমনাথ গরাই বলেন, রাজকুসুমে পরিবারের বিদ্যাদেবীর আরাধনা বিগত বছরগুলোর মতো এবারেরও একই রকমভাবে আয়োজন করা হয়েছে।
সবমিলিয়ে বলা যেতে পারে যে, রাজকুসুমের গরাই পরিবারের সরস্বতী পুজো একবারেই ভিন্ন।